একঢাল ঘন কেশের স্বপ্ন দেখা আর তা পূরণ করার মধ্যে ফারাক অনেকটাই। সমস্যা হয়, ব্যস্ত জীবনে চুলের পরিচর্যায় ঠিকমতো সময় দিয়ে উঠতেই পারেন না অনেকে। আবার যাঁদের নিয়মিত কাজের সূত্রে বাইরে যেতে হয়, তাঁদের চুল অনেক বেশি ধুলো-ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসে। নিয়মিত যত্নের অভাব এবং কেশচর্চার সঠিক কৌশল না জানা থাকার ফলেই চুল ঝরা, চুলের বাড়বৃদ্ধি থমকে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়।
কেশচর্চাশিল্পীরা এবং ত্বকের রোগের চিকিৎসকেরা মনে করান, চুল ভাল রাখার উপায় শুধুমাত্র প্রসাধনীর ব্যবহারে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সঠিক পুষ্টি, যত্ন নেওয়ার উপযুক্ত পন্থাও গুরুত্বপূর্ণ। কী কী বিষয় জানা জরুরি?
চুলের ধরন: চুলের ধরন প্রত্যেকেরই আলাদা। কারও চুল তৈলাক্ত, কারও আবার রুক্ষ। কারও চুল কোঁকড়ানো, কারও আবার সোজা এবং মসৃণ।চুলের জন্য শ্যাম্পুই হোক বা মাস্ক— বাছাই করার আগে বুঝতে হবে কোনটা প্রয়োজন। কোঁকড়ানো রুক্ষ চুলের জন্য যে শ্যাম্পু উপযুক্ত তা কিন্তু তৈলাক্ত চুলের জন্য নয়। আবার চুলের ডগা ফাটার সমস্যা হলে যেমন নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফাটা অংশগুলি ছেঁটে ফেলা জরুরি, তেমনই দরকার ময়েশ্চারাইজ়েশন। তেল মাসাজ, মৃদু শ্যাম্পু এবং মাস্কের ব্যবহার— এমন সমস্যা কমাতে পারে।
ডায়েট: চুল বা ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে প্রসাধনী বা মাস্ক ব্যবহারেই সকলে গুরুত্ব দেন। কিন্তু স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বা ত্বকের নেপথ্যে পুষ্টিরও ভূমিকা রয়েছে। চুলের অন্যতম উপাদানই হল কেরাটিন নামক প্রোটিন। সেই কারণে ডায়েটে প্রোটিন এবং ভিটামিন, খনিজ থাকা জরুরি। ভিটামিন এ, সি, বায়োটিন চুলের জন্য জরুরি। জ়িঙ্ক, আয়রনও চুলের বাড়বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। দরকার হয় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবারেরও। খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস, ডিম, টাটকা সব্জি, ফল, বিভিন্ন রকম বাদাম এবং বীজ পরিমাণমতে রাখলে চুল ভাল থাকবে।
মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য: চুল ঝরা, নতুন চুল গজানো— সব কিছুর সঙ্গেই মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য জড়িত।মুখ বা ত্বক যেমন নিয়মিত পরিষ্কারের দরকার হয়, মাথার ত্বকের পরিচ্ছন্নতাও ঠিক ততটাই জরুরি।
এক্সফোলিয়েশন: শুধু শ্যাম্পুই যথেষ্ট নয়, মাসে এক বা দু’দিন এক্সফোলিয়েশন জরুরি। চুলের সমস্যা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাই বলছেন, ২-৩ মিনিট ধরে শ্যাম্পু করলে চুলের ধুলো, ময়লা পরিষ্কার হয় ঠিকই, তবে স্ক্রাবিংয়ে তফাত হয় অনেকটাই। মাথার ত্বকে স্ক্রাব করতে অন্তত ১০-১২ মিনিট সময় দিতে হয়। ফলে মাথার ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ, তেল, ময়লা অনেক ভালভাবে পরিষ্কার হয়। অ্যাপ্রিকট, বেদানা শুকনো করে তার গুঁড়ো স্ক্রাবার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। বাজারচলতি স্ক্রাবারে থাকে গ্লাইকোলিক, ল্যাকটিক, স্যালিসিলিক অ্যাসিড জাতীয় উপাদান। চুল ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিয়ে হাতের সাহায্যে স্ক্রাবার মাথার ত্বকে লাগিয়ে দিতে হবে। তার পর আলতো চাপ দিয়ে আঙুলের সাহায্যে মালিশ বা মাসাজ করতে হবে। ৭-৮ মিনিটই স্ক্রাবিং-এর জন্য যথেষ্ট। তবে বাজারচলতি স্ক্রাবারের ক্ষেত্রে মালিশের দরকার পড়ে না। মাথার ত্বক পরিষ্কার করে দেয় এতে থাকা রাসায়নিক।
তেল মাসাজ: তেল মাসাজও মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। এর ফলে চুলের ফলিকল মজবুত হয়। চুল ঝরা কমে এবং বৃদ্ধি হয়। নারকেল তেল, আর্গন অয়েল, অলিভ অয়েল চুলের জন্য ভাল।
খুশকি: খুশকি বা মাথার ত্বকে সংক্রমণ থাকলেও চুল বাড়-বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া ক্রমাগত মাথা চুলকায় এতে, যা বেশ অস্বস্তিকর। খুশকির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা করানো দরকার।
কী ভাবে চুলের যত্ন নেবেন?
শ্যাম্পু: চুলের উপযোগী মৃদু শ্যাম্পু বেছে নিন। নিয়মিত বাইরে বেরোতে হলে দুই বা তিন দিন অন্তপ শ্যাম্পু করে নিন।
কন্ডিশনার: শ্যাম্পু করার পর ভিজে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল নরম এবং মসৃণ থাকবে।
মাস্ক: চুলের যত্নে মাস্ক ব্যবহারও জরুরি। সপ্তাহে এক দিন বা মাসে অন্তত দু’ থেকে তিন বার ঘরোয়া মাস্ক মাখতে পারেন। টক দই, ভেজানো মেথি বাটা এবং নারকেল তেল মিশিয়ে মাস্ক বানাতে পারেন। অ্যালো ভেরা জেলের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়েও মাস্ক বানানো যায়।
চুল ভাল রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া দরকার। রোদে বেরোলে ছাতা কিংবা টুপি ব্যবহার করলে ভাল।