সামনেই বড় উৎসব দুর্গাপুজো। বছরভর যেমন তেমন, তবে এমন সময় ত্বকের জেল্লা না থাকলে কি চলে? তাই শুরু হয় প্রচেষ্টা— কী ভাবে দ্রুত ফেরানো যায় সৌন্দর্য।
ত্বকের জেল্লা ফেরাতে কোনটি করবেন, কোনটি নয়, তা নিয়ে হাজার হাজার পরামর্শ রয়েছে সমাজমাধ্যমে। কেউ বলছেন, ঘুম থেকে উঠেই লেবু মধুর জল খেতে হবে। পেট ভাল থাকলেই খুলবে রূপ। কারও পরামর্শ, চুমুক দিতে হবে গ্রিন টি-এ। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর পানীয়ের গুণে মিটবে বলিরেখা, ত্বক হবে টানটান সুন্দর। সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বেছে নেবেন কোনটি?
পাতিলেবুর জলের উপকারিতা
· ঈষদুষ্ণ জল পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে দিন শুরু করেন অনেকেই। পাতিলেবুতে ভরপুর মাত্রায় মেলে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ত্বকের অন্যতম উপাদান কোলাজেন নামক প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে ভিটামিন সি।
আরও পড়ুন:
· ত্বক ভাল রাখার জন্য পর্যাপ্ত জল খাওয়া দরকার। খালিপেটে ঈষদুষ্ণ জলে পাতিলেবুর রস খেলে তা ডিটক্স হিসাবে কাজ করে। শরীর থেকে টক্সিন বার করতে সাহায্য করে। শরীরে জলের জোগান দেয়।
· পেটফাঁপার সমস্যা কমাতেও এই জল সহায়ক।
গ্রিন টি-র উপকারিতা
· গ্রিন টি-এ রয়েছে ইজিসিজি এবং পলিফেনলস নামে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট।
· প্রদাহনাশক উপাদান শরীর ভাল রাখে।
· বিপাকহারের গতি বৃদ্ধি করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
· হার্ট এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও গ্রিন টি ভাল।
প্রচলিত ধারণা এবং বাস্তব
পাতিলেবুর জল বা গ্রিন টি সত্যিই কি ত্বকের সমস্যা দূর করে? দিল্লি এমস থেকে পড়াশোনা করেছেন আঁচল পন্থ। ত্বকের চিকিৎসক মাঝমধ্যেই সমাজমাধ্যমে নানা রকম পরামর্শ দেন। তিনি বলছেন, ‘‘পাতিলেবুর রসে ভিটামিন সি মেলে ঠিকই। এই ভিটামিনের গুণাগুণ থাকলেও জেল্লা হারানো ত্বকে তা সৌন্দর্য ফেরাতে পারে না। অথবা ব্রণের চিকিৎসাও এতে সম্ভব হয় না। কিন্তু সকালে উঠে জলে পাতিলেবুর রস খাওয়ার স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা রয়েছে। গ্রিন টি-তে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে অল্প হলেও বার্ধক্য প্রতিরোধী গুণাগুণ আছে। তা সত্ত্বেও, গ্রিন টি বা পাতিলেবুর জল— কোনওটাই ত্বকের সমস্যার সমাধান নয়।’’
একই বক্তব্য ত্বকের রোগের চিকিৎসক অভীক শীলেরও। তিনিও বলছেন, ‘‘পাতিলেবুর জল বা গ্রিন টি— দুই পানীয় স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। গুণাগুণও যথেষ্ট। কিন্তু ত্বকের জেল্লা পেতে হলে সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা জরুরি। পুজোর মুখে দ্রুত জেল্লা ফেরাতে হলে লেজ়ার থেরাপি, বিশেষ ধরনের ফেসিয়ালের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।’’
সৌন্দর্যের জরুরি শর্ত
· চিকিৎসক আঁচল বলছেন, শুধু গ্রিন টি বা পাতিলেবুর জলের উপর ভরসা না করে ত্বক ভাল রাখতে হলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ‘ব্যালান্সড ডায়েট’ বা খাবারে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের ভারসাম্য থাকা জরুরি।
· নিয়মিত শরীরচর্চাও ত্বক ভাল রাখে। এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। উদ্বেগ, অবসাদ কমে। তার প্রভাব পড়ে ত্বকেও।
· সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরি। কোষের ক্ষতিপূরণ এবং ত্বক পুনরুজ্জীবিত হয় ঘুমের সময়েই। এতে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
· একই সঙ্গে ক্লিনজ়িং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজ়িং, সানস্ক্রিনের ব্যবহার এবং ত্বককে দূষণ থেকে রক্ষা করাও জরুরি।