Advertisement
E-Paper

খুদেকে মনের মতো সাজাতে গিয়ে ক্ষতি করে ফেলছেন কি? প্রসাধনীতে লুকিয়ে কোন বিপদ?

ছোট ছোট আঙুলে নেলপালিশ, মুখে ব্লাশের আভা ভাল লাগে বলে শিশুকে এ ভাবেই সাজাচ্ছেন? শুধু অ্যালার্জি নয়, আর কোন বিপদের সম্ভবনা রয়েছে এতে?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৫ ১৫:২১
সন্তানকে মনের মতো করে সাজাচ্ছেন? এর ফলাফল সম্পর্কে  ওয়াকিবহাল তো?

সন্তানকে মনের মতো করে সাজাচ্ছেন? এর ফলাফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তো? ছবি: এআই।

ছোট্ট অহনা নাচে বেশ পটু হয়ে উঠেছে। মঞ্চে উঠে হাত ঘুরিয়ে, কোমর বেঁকিয়ে নাচলে, তা দেখে সকলের মুখে হাসি ফোটে। এমন অনুষ্ঠানে সাজসজ্জা করতেই হয়। সবই ঠিক চলছিল, গোল বাধল একদিন তার মা জামার সঙ্গে মেলাতে গিয়ে নিজের লিপস্টিকটি লাগিয়ে দেওয়ায়। অনুষ্ঠান সেরে আসার পরেই মুখে র‌্যাশ, চুলকানি। এক বছরের সন্তানের ফোটোশ্যুট। নেলপালিশ লাগিয়ে, চোখে কাজল দিয়ে, গালে ব্লাশ দিয়ে সাজাচ্ছেন তাকে?

জন্মের পর থেকেই কাজলের টিপ দেওয়া, চোখের তলায় কাজল পরানোর রেওয়াজ চলে আসছে এখনও।

বয়স যতই হোক না কেন, সন্তানকে মনের মতো সাজাতে গিয়ে অনেক মা-ই নানা রকম প্রসাধনী মাখাচ্ছেন। বিষয়গুলি খুবই সাধারণ। সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলে শিশুদের এমন সাজসজ্জার ভিডিয়ো-রিল চোখে পড়েই। তবে বিপদ লুকিয়ে এর মধ্যেই। কলকাতার একটি হাসপাতালের ত্বকের রোগের চিকিৎসক আশারানি ভোল বলছেন, ‘‘মায়েরা আসেন শিশুর র‌্যাশ, চুলকানি, অ্যালার্জির সমস্যা নিয়ে। মুশকিল হল, তাঁরা বুঝতেই পারেন না সন্তানকে কোনটা মাখানো দরকার। ভাল ভেবে শিশুর জন্য যে প্রসাধনী, ক্রিম বেছে নিচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে তা ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়।’’

শিশুর ত্বক যে শুধু কোমল তা নয়, বড়দের চেয়ে তা ভিন্ন। তাদের পাতলা ত্বক যে কোনও উপাদান দ্রুত শুষে নেয়। তা ছাড়া, বয়স অনুযায়ী তা ক্রমশ বদলাতেও থাকে। এমন ত্বকের জন্য কোনটি ঠিক, কোনটি নয়, তা না বোঝার কারণেই বিপদ বাড়ছে।

প্রসাধনী থেকে শিশুদের অ্যালার্জি হয় অনেক সময়েই। এমনই বলছেন, কলকাতার আর এক চর্মরোগ চিকিৎসক অভীক শীল। সকলেই যে শিশুদের সাজাতে লিপস্টিক, নেলপালিশ লাগিয়ে দিচ্ছেন, তা নয়। কেউ কেউ শুধুই কাজলের টিপ পরান। চোখের তলায় কাজল টেনে দেন। নয়াদিল্লির ত্বকের রোগের চিকিৎসক দীপালি ভরদ্বাজ এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করছেন, ‘‘বাজরচলতি কাজলে অনেক রকম রাসায়নিক ব্যবহার হয়। শিশুর ত্বক এবং চোখের পক্ষে তা ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।’’

সমাজমাধ্যমে চোখে রাখলেই এখন দেখা যায়, শিশুদের ফোটোশুট চলছে। সে সব ছবি ছড়িয়ে পড়ছে চার দিকে। তা ছাড়া, জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক, জুতোর সঙ্গে কিছুই না সাজালে কি দেখতে মানানসই লাগবে সন্তানকে, ভাবেন অনেক মা। নাচের অনুষ্ঠানের জন্য কাজল থেকে আইলাইনার, বা ব্রোনজ়ার মাখিয়ে দেওয়া হয় তাদের।

‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষার ফল বলছে, শিশুদের জন্য তৈরি একাধিক প্রসাধনী পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, তাতে কোকামিডোপ্রোপাইল বিটেইন, ল্যানোলিন, কৃত্রিম গন্ধ-সহ এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যা শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। এমনকি, ত্বকের সমস্যাও হতে পারে। আশারানি বলছেন, ‘‘র‌্যাশ হলে আমরা কিছু ওষুধ বলি অভিভাবকদের। একসঙ্গেই সতর্ক করি, কোন কোন উপাদান থাকলে তা শিশুর জন্য কোনওমতেই কেনা যাবে না। বলি, প্রসাধনী কেনার আগে উপাদানগুলি দেখে নিতে। ক্রিম হোক বা প্রসাধনী, তাতে কোনও সুগন্ধী, রঙের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক থাকলে শুরুতেই সতর্ক হওয়া দরকার। অনেক প্রসাধনীতেই লেখা থাকে হাইপোঅ্যালার্জিক। মায়েরা মনে করে এটা শিশুর জন্য ভাল। তবে হাইপোঅ্যালার্জিক মানে সেটি মাখলে অ্যালার্জির ভয় নেই, তা নয়। বরং অ্যালার্জির আশঙ্কা কম। বদলে পট্রোলিয়াম জেলি, নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।’’

বড়দের ত্বকের চেয়ে শিশুর ত্বক সবসমই স্পর্শকাতর হয়। তার কারণ, শিশুর ত্বকে সিবামের (ত্বকের সিবাম গ্রন্থি নিঃসৃত তেল) চেয়ে জলীয় উপাদান বেশি থাকে। তা ছাড়া, ত্বকের বর্ম হিসাবে কাজ করে কিছু কিছু অনুজীব। ছোট থাকা অবস্থায়, সেই বর্মটাই তৈরি হয় না। ফলে কৃত্রিম রং, গন্ধ, রাসায়নিক শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে সহজেই।

শুধু অ্যালার্জি নয়, একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রসাধনীতে থাকা কোনও কোনও রাসায়নিক উপাদান শিশুর হরমোনের ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে। নেলপালিশ থেকে ব্রোনজ়ারে একাধিক ‘কার্সেনোজেনিক’ উপাদান যেমন ফরম্যালডিহাইড, টলুইন, ডাইবুটাইল থ্যালেট থাকে। এগুলি হল এন্ড্রোক্রাইন ডিসরাপ্টিং কেমিক্যাল। আশারানি জানাচ্ছেন, ইডিসি বা এন্ড্রোক্রাইন ডিসরাপ্টিং কেমিক্যাল হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। সাধারণত প্রসাধনীর উপকরণের তালিকা দেখে বোঝার উপায় থাকে না, কোনটি, কী ভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

একসঙ্গেই ত্বকের চিকিৎসকেরা সতর্ক করছেন সুগন্ধী নিয়েও। অনেক সময় ছোটদের বায়নায় বড়রাও নিজে মাখতে মাখতে শিশুর গায়ে সুগন্ধী স্প্রে করে দেন। আবার শিশুদের সরাসরি সুগন্ধী মাখানো না হলেও, মায়ের ব্যবহার করা সুগন্ধী থেকেও শিশুর সমস্যা হতে পারে। কারণ, সুগন্ধী বায়ুবাহিত। শিশুর নাক দিয়ে শরীরে গেলে ক্ষতি হতে পারে। সুগন্ধীতে অ্যালকোহল জাতীয় উপাদান ব্যবহার হয় অনেক সময়।তা থেকেও শিশুর ত্বকে সমস্যা হতে পারে।আশারানির পরামর্শ, শিশুর জন্য প্রসাধনী কেনার সময় সেটি যে ফ্যালেট এবং প্যারাবেন ফ্রি দেখে নেওয়া দরকার।

তা হলে কি প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না?

ছোটদের জন্য প্রসাধনী যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভাল। তবে প্রয়োজনে সাজসজ্জা করলেও মেকআপ, লিপস্টিক যেন ত্বকে দীর্ঘক্ষণ না থাকে সতর্ক হতে হবে বলছেন ত্বকের রোগের চিকিৎসক অভীক শীল। তাঁর পরামর্শ কোনও কিছু মাখানোর আগে মুখে ভাল করে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজ়ার মাখিয়ে নিতে হবে। এতে রাসায়নিক সরাসরি ত্বকে যাবে না বা একটু হলেও ঝুঁকি এড়ানো যাবে। তবে কোনও প্রসাধনী ব্যবহারের পর জ্বালা, চুলকানি হলে দ্রুত তা মুছে ফেলতে হবে। চিকিৎসক সতর্ক করছেন, নাচের অনুষ্ঠান, বা কোনও সময়ে শিশুদের সাজানো হলেও কাজ মিটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রসাধনী তুলে ফেলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সেই কাজটি করতে হবে।

Baby Oil Baby Skin Skin Care Tips Cosmetics for Baby Skin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy