E-Paper

সীমানা ছাড়িয়ে

প্রাডা-র কোলাপুরী চপ্পলের পরে এ বার লুই ভিত্তোঁ নিয়ে এল অটোরিকশা ব্যাগ। আন্তর্জাতিক বাজারে নজর কাড়ছে এ দেশের যাপনচিত্র

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ০৭:৪৯

এ দেশের নব্য প্রজন্ম যেখানে মেতেছে কে-পপ, কে-বিউটি তথা কোরিয়ান জগতে, সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে লক্ষাধিক দামে বিকোচ্ছে ভারতীয় অনুপ্রেরণায় তৈরি ফ্যাশন-সামগ্রী।

অটোরিকশা ব্যাগ

দিনকয়েক আগেই মিলান ফ্যাশন উইকে প্রাডা কোলাপুরী চপ্পল নিয়ে আসে, ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম প্রায় ১.২ লক্ষ টাকা। এ বার লুই ভিত্তোঁ নিয়ে এল অটোরিকশার মতো দেখতে ব্যাগ। সম্প্রতি লুই ভিত্তোঁর মেনসওয়্যার স্প্রিং সামার কালেকশনের এই ব্যাগ ইন্টারনেটে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় অটোরিকশার আদলে এই ব্যাগ তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডটি, যার দাম ৩৫ লক্ষ টাকা। একটি অটোর দাম ভারতীয় মুদ্রায় যার অর্ধেকও নয়। তবে শুধু এই ব্যাগই নয়, এই ফ্যাশন শোয়ের পুরো সম্ভারেই এ দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ধরা পড়েছে। কখনও ট্রাঙ্কে উঠে এসেছে রত্নখচিত হাতি ও চিতার মোটিফ, কখনও আবার মোগল নকশা। ভারতীয় চপ্পলের মতো দুটো স্ট্র্যাপ দেওয়া চটিও দেখা গিয়েছে মডেলদের পায়ে। এত দিন যা কিশ বা স্ট্রিট স্টাইল হিসেবে গণ্য হত, সেই দেশজ ফ্যাশনই এখন বিশ্বের মানচিত্রে কুতুর স্টাইল।

তবে এই প্রথম নয়, ফ্যাশন মানচিত্রে বরাবরই ভারতীয় সাজ-সংস্কৃতির পাল্লা ভারী। রিহানা, জিজি হাদিদ, কিম কার্দাশিয়ান, জ়েন্ডেয়াদের পরনে শাড়ির সাজও ধরা পড়েছে একাধিক বার। সেলেনা গোমেজ়কেও দেখা গিয়েছে কপালে টিপ পরে কনসার্টে পারফর্ম করতে। ভারতীয় যাপনচিত্র উঠে আসছে আন্তর্জাতিক বাজারে। ট্রেন্ড অনুসরণ করে বিদেশের স্থানীয় দোকানগুলোর সঙ্গে নামী-দামি ব্র্যান্ডও সেই স্রোতের অভিমুখেই হাঁটছে।

বাসমতী চালের ব্যাগ থেকে জ্যাকেট

যে ব্যাগে করে এত দিন চাল বা গম আসত আমাদের বাড়িতে, সেই ব্যাগই উঠে আসছে আন্তর্জাতিক বাজারে। দিনকয়েক আগে ভারতীয় ঝোলা বা সুভেনির ব্যাগ নিয়ে এক বিদেশিনি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়েছিলেন। মুহূর্তে সেই ঝোলা ভাইরাল হয়ে যায় সমাজমাধ্যমে। দিনকয়েকের মধ্যে চালের ব্র্যান্ডের নাম লেখা সেই বস্তার মতো ঝোলার বেশ কয়েকটি কপি বেরিয়ে যায় বাজারে। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ইন্ডিয়ান সুভেনির ব্যাগ হিসেবে।

আবার বাসমতী চালের ব্যাগের প্রিন্টের জ্যাকেটও সম্প্রতি দেখা গিয়েছে আমেরিকার এক দোকানে। বিদেশি এক ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেই বাসমতি রাইস ব্যাগ জ্যাকেট বিক্রি করছে ১.৬ লক্ষ টাকায়। ভারতীয় আমজনতার কাছে যা দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী, সেই ব্যাগেরই ব্র্যান্ডভ্যালু এখন কয়েক লক্ষ টাকা। কিন্তু এই ট্রেন্ড তৈরি হওয়ার পিছনে কারণ কী?

সচেতন ভাবে তৈরি ট্রেন্ড

বরাবরই ভারতীয় নকশা, ফ্যাব্রিক আন্তর্জাতিক ফ্যাশন মঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। কিন্তু কোলাপুরী চপ্পল, রাইস ব্যাগ, অটোরিকশার মতো ভারতীয় রোজযাপনের ছবি যে ভাবে উঠে আসছে তা নজর ঘোরাচ্ছে অন্য দিকে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশনজগৎ তথা বাণিজ্যের লক্ষ্যবিন্দুতে এখন ভারত।

এক দিকে ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, অন্য দিকে রয়েছে সস্তা শ্রম। ফলে অনেক বিদেশি ব্র্যান্ডই ইতিমধ্যে এ দেশে এসে ছোট ছোট কমিউনিটি তৈরি করে ওয়ার্কশপ শুরু করছে স্থানীয় কারিগরদের নিয়ে। নিখুঁত কাজে লক্ষাধিক টাকার ডিজ়াইনারওয়্যার তৈরি হয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় কারিগরি হয়তো বেঁচে উঠছে, কিন্তু সেই পণ্য ক্রমশ দুর্মূল্য হয়ে উঠছে এ দেশের আমজনতার কাছে।

প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ভারতকে লক্ষ্য করে বাজার তৈরি করলেও এখানকার শিল্পীরা বা শিল্প কি আদৌ যথাযোগ্য সম্মান পাচ্ছে? প্রাডার মতো নামী ব্র্যান্ডও কোলাপুরী চপ্পলের জন্য বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব দেয়নি এ দেশের কারিগরিকে। সম্প্রতি প্রাডার বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে।

এ দিকে সম্প্রতি কোলাপুরী চপ্পলের বাজারদরও বেড়ে গিয়েছে। এ দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে গিয়ে দেশবাসীর কাছেই তাঁদের নিজস্ব পণ্য সাধ্যের বাইরে চলে যাবে না তো? আন্তর্জাতিক বাজারেও শুধু ভারতের শিল্প ও চিন্তা-চেতনা ব্যবহার করলেই চলবে না, যথাযোগ্য স্বীকৃতিও দিতে হবে বইকি! না হলে প্রজন্মের পর প্রজন্মলালিত শিল্প শুধুই পণ্যে পরিণত হতে সময় লাগবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Trend Fashion

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy