বাঙালি এখনও অতীতে ফিরে তাকানোয় বিশ্বাসী। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে তাই বাঙালির মনে বাসা বাঁধে স্মৃতিমেদুরতা। বর্তমান প্রজন্মের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
সময়ের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ধারা এবং রীতিতে বদল এসেছে। কিন্তু এখনও পয়লা বৈশাখের প্রসঙ্গে পিছনে ফিরে তাকায় বাঙালি। কারও কোনও প্রিয় মানুষের কথা মনে পড়ে। আবার কারও মনে ভিড় করে শৈশবের পাড়ার স্মৃতিমালা। যেমন অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা সদ্য প্রয়াত হয়েছেন। আনন্দবাজার ডট কমকে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন নববর্ষে মায়ের হাতের তৈরি মাছের ঝোল তিনি মিস্ করবেন। আবার পয়লা বৈশাখের দিন শৈশবের হালখাতার স্মৃতি এবং বিশেষ করে মিষ্টির প্যাকেটগুলোর স্মৃতি বেশি করে ভিড় করে অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্যের মনে। আবার বসিরহাটের দেশের বাড়ির ভগবতী পুজো পয়লা বৈশাখে আলাদা করে স্মৃতিমেদুর করে তোলে অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুকে।
আরও পড়ুন:
বর্তমান প্রজন্মও যে স্মৃতিমেদুরতায় ভাসতে পছন্দ করে, তারও উদাহরণ রয়েছে। সাধারণত বছরের বিশেষ দিনের জন্য টলিপাড়ার তারকারা আলাদা ফোটোশুটের পরিকল্পনা করেন। পয়লা বৈশাখের দিনেও একাধিক তারকার সমাজমাধ্যমের পাতায় তাঁদের বিশেষ ছবি পোস্ট করেছেন। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে ব্যতিক্রমী চিত্র তুলে ধরলেন ‘কবীর সিংহ’ খ্যাত অভিনেতা সোহম মজুমদার। বছরের প্রথম দিনে স্মৃতিমেদুর অভিনেতা। নতুন প্রজন্ম ডিজিটাল দুনিয়ায় আবদ্ধ। কিন্তু নববর্ষে ছবির মাধ্যমে ছোটবেলার হালখাতার স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনলেন সোহম। শপিং মল এবং অ্যাপনির্ভর দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী কেনার সংস্কৃতিতে কোণঠাসা পাড়ার মুদির দোকানকে চিহ্নিত করলেন সোহম।
ইনস্টাগ্রামে সোহম যে ছবিগুলো পোস্ট করেছেন, সেখানে তিনি সাদা পাঞ্জাবিতে একটি মুদির দোকানের দোকানির ভূমিকায়, যিনি বছরের প্রথম দিনে দোকানে হিসাবের খাতা লিখছেন। আবার হাসিমুখে অভ্যাগতের হাতে কোল্ড ড্রিংক তুলে দিচ্ছেন। কখনও নিজেও তাতে চুমুক দিচ্ছেন। আবার চোখ রাখছেন বাংলা ক্যালেন্ডারে। আনন্দবাজার ডট কমকে সোহম জানালেন, স্মৃতিমেদুরতা বিষয়টা তাঁর পছন্দের। সেই ভাবনা থেকেই তাঁর এই বিশেষ ফোটোশুট। তবে নতুন কিছু করে চমকে দিতে হবে, এ রকম কোনও নেপথ্য ভাবনা থেকে যে তাঁর এই উদ্যোগ নয়, সে কথাও আলাদা করে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন সোহম।

নববর্ষে ফোটোশুটের মাধ্যমে হালখাতার স্মৃতি ফেরালেন অভিনেতা সোহম মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।
সোহমের মামার বাড়ি ব্যারাকপুরে। জানালেন, ছোটবেলায় মামার বাড়িতে হালখাতার রেওয়াজ ছিল। সোহমের কথায়, ‘‘বাড়ির দোকানে এই বিশেষ দিনে মামা ডায়েরিতে অতিথিদের নাম লিখতেন। পাশাপাশি ক্যালেন্ডার, মিষ্টির প্যাকেট এবং কোল্ড ড্রিংক— পয়লা বৈশাখের দিন এই স্মৃতিগুলো খুব মনে পড়ে।’’ একই সঙ্গে কোল্ড ড্রিংক প্রসঙ্গে মজার স্মৃতি ভাগ করে নিলেন সোহম। হেসে বললেন, ‘‘হালখাতার সময় প্রচুর কোল্ড ড্রিংক রাখা থাকত। সেখান থেকে আমি আলাদা করে চুরি করে বেশ কয়েকটা খেয়ে নিতাম।’’
সোহমের ইচ্ছে ছিল, মামার বাড়িতে সেই দোকানেই ফোটোশুট করবেন। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় আলাদা করে সময় বার করতে পারেননি। বললেন, ‘‘লেক গার্ডেন্সে আমার বন্ধুর দাদার মুদির দোকানে ছবিগুলো তোলা। তাঁদের বলতেই রাজি হয়ে যান। তাই কাজটা করতে পেরেছি।’’ সাধারণত ফোটোশুটের জন্য তারকারা কোনও পোশাক পরিকল্পকের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কিন্তু এখানেও সোহম অন্য পথে হেঁটেছেন। নিজেরই একটি নতুন পাঞ্জাবি পরেছেন। অন্যথায় অভিনেতার দাবি, ছবিগুলো ‘ন্যাচারাল’ মনে হত না।
পয়লা বৈশাখ এবং নতুন জামা— বাঙালি হিসেবে সোহমের পছন্দের বিষয়। হেসে বললেন, ‘‘পাঞ্জাবি পরতে আমি খুব ভালবাসি। আর এই ছবিগুলোর জন্য হালখাতার সাদা খাতার মতো সাদা পাঞ্জাবি হলে মনে হয়েছিল, হয়তো নামগুলো লিখতেও সুবিধা হবে। নতুন বছরে নতুন ক্যানভাস।’’ সোহম বিশ্বাস করেন, জীবনে এগিয়ে চলার পথে নিজের শিকড়কে ভুললে চলবে না। তাই মুম্বইয়ে একাধিক হিন্দি প্রজেক্টে কাজের পাশাপাশি, সময় বার করে তিনি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেন। স্মৃতি হাতড়ে বাঙালির শিকড়েই আরও এক বার ফেরার চেষ্টা করলেন সোহম।