বছরের প্রথম দিনটাকে একটু সাজিয়ে-গুছিয়েই বরণ করতে চান বঙ্গজেরা। গুছিয়ে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার তো থাকেই। কিন্তু তার পাশাপাশি ঘর সাজানো এবং সর্বোপরি নিজেকে সাজানো পয়লা বৈশাখে জরুরি। পয়লা বৈশাখে নতুন জামা পরার চল নতুন নয়। তবে পয়লা বৈশাখে বাঙালির সাজগোজের মাতামাতি ইদানীং অনেকটাই বেড়েছে। টলিউডের নায়ক-নায়িকারাও পুজোর মতো পয়লা বৈশাখের সাজ নিয়ে আলাদা করে ভাবেন। তা নিয়ে পরিকল্পনা করেন। ইনস্টগ্রাম, ফেসবুকে সেই সাজের ছবি দেখে মুগ্ধ হন অনুরাগীরা। হয়তো কেউ কেউ অনুসরণও করেন। হাজার হোক, গ্রীষ্মের সাজের ট্রেন্ডসেটার তো পয়লা বৈশাখই। সে কথা ভেবেই টলিউডের নতুন প্রজন্মের নায়ক-নায়িকাদের দ্বারস্থ হয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম, পয়লা বৈশাখে তাঁরা কী রকম সাজতে পছন্দ করেন জানতে। তারকারা শোনালেন তাঁদের সাজের গল্প।
ঋতাভরী চক্রবর্তী
পয়লা বৈশাখে আমার বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন থাকে। আয়োজন যে হেতু আমার, তাই দায়িত্বও সামলাতে হয় আমাকেই। পয়লা বৈশাখের সাজে তাই আমার কায়দার পাশাপাশি কমফর্টও দরকার। যেটা পরব, সেটা পরে যেন হাঁটাচলা করতে অসুবিধা না হয়। সেটা শাড়িও হতে পারে, অন্য যে কোনও পোশাক হতে পারে। এ বার পয়লা বৈশাখেও অবশ্য শাড়িই পরছি। গোলাপি রঙের একটা সুতির আয়না চেক শাড়ি উপহার পেয়েছি। সেটাই পরব। তার সঙ্গে মিনাকারি ঝুমকো থাকবে কানে। আর খোঁপায় থাকবে জুঁই ফুলের মালা। সাজটা এক বার পরে দেখেও নিয়েছি।
আসলে গ্রীষ্মের জন্য বরাবরই উজ্জ্বল রং পছন্দ আমার। হলুদ, আগুনের রং, গোলাপি বা লাল ভাল লাগে। ছোটবেলায় মা পয়লা বৈশাখের আগে ওই রকম উজ্জ্বল রঙের জমা বানিয়ে দিতেন। ফ্রিল দেওয়া ফ্রক। আমার আর দিদির একই রং, একই ডিজ়াইনের জামা। সঙ্গে ম্যাচিং হেয়ার ব্যান্ড। একসঙ্গে পরে বেরোলে আমাদের দেখে সবাই বলত, ‘‘ব্যান্ড পার্টিতে যাচ্ছিস নাকি!’’ তবু পয়লা বৈশাখে ওই ফ্রক ওই দিদির সঙ্গে রং মেলানো জামা পরা নিয়ে আলাদা ভাললাগা ছিল।
ইশা সাহা
ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখের আগে নতুন জামা হত। তবে এখনকার মতো দোকান থেকে কেনা রেডিমেড পোশাক নয়। বাবা-মা পছন্দ করে কাপড় কিনে জামা বানাতে দিতেন দর্জির দোকানে। পয়লা বৈশাখে তখন সুতির ফ্রক বানানো হত। ফুলছাপ বা ববি প্রিন্টের। মনে আছে, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ মুক্তি পাওয়ার পরে কাজলের মতো জামার বায়না করেছিলাম। সেই ফ্রক বানানোও হয়েছিল আমার জন্য। এখনও নতুন শাড়ি উপহার পাই। নিজে কিনি। তবে এ বছর আর পয়লা বৈশাখে নতুন শাড়ি পরা হবে না। সারা দিন শুটিংয়েই ব্যস্ত থাকব। সুযোগ পেলে হয়তো একটা লাল শাড়ি পরতাম!
এমনিতে গরমের রং হিসাবে হালকা রংই পছন্দ। ওয়ার্ড্রোবে যত শাড়ি বা পোশাক রয়েছে, তার বেশির ভাগই প্যাস্টেল শেডের। হালকা গোলাপি, পেস্তা, ধূসর নীল, তসর রং এই সব। তবে পয়লা বৈশাখের জন্য বেছে নেব লাল রঙের মলমল বা সুতির শাড়ি। তাতে একটা সরু পাড় থাকতে পারে। কিংবা থাকবে খুব ছোট্ট ছোট্ট বুটি। সঙ্গে পরে নেব জামদানির কাজ করা ব্লাউজ। একেবারে খাঁটি বাঙালি ক্লাসিক সাজ হবে।
ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়
পয়লা বৈশাখ এ বার শুটিংয়েই কেটে যাবে। সেই শুটিংয়ের জন্য আবার অনেক দূরে যাওয়া। লম্বা সফর। গাড়িতে থাকতে হবে দীর্ঘ ক্ষণ। তাই এ বারের পয়লা বৈশাখের সাজ একেবারেই ক্যাজ়ুয়াল। সফর করতে সুবিধা হবে, এমন কিছু পরব। সেটা নতুন না-ও হতে পারে। ইদানীং পয়লা বৈশাখ শুটিং করেই কেটে যায়। তাই পয়লা বৈশাখের সাজ মানে শুটিংয়ের জামাকাপড়!
যদিও পয়লা বৈশাখে নতুন জামা পরেছি ছোট থেকেই। আমরা যেখানে থাকি, সেখানে পাড়া-সংস্কৃতি প্রবল। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সেই পাড়ায় হত শীতলা পুজো। নতুন জামা অনেক সময় সেই দিনও পরা হয়ে যেত। পাড়ার বন্ধুরা একসঙ্গে হতাম। পাড়ায় ঢালাও ভোগের খিচুড়ি খাওয়ানো হত। নববর্ষের উদ্যাপন নতুন জামা পরে আগের দিন থেকেই শুরু হয়ে যেত। তখন নতুন জামাটাই আনন্দের ছিল। কেমন জামা, তা নিয়ে ভাবতাম না। তবে এখন যদি বলেন, তবে পয়লা বৈশাখের সাজ হিসাবে আমার ভারতীয় পোশাকই পছন্দ। সেটা পাজামা-পাঞ্জাবি হতে পারে ধুতি-পাঞ্জাবিও। আমি নিজে ধুতি পরতে পারি। ধুতি পরতে ভালওবাসি।
বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়
আমি দিদার কাছে মানুষ হয়েছি। তাই পয়লা বৈশাখ আর পাঁচটা বাঙালি মেয়ের থেকে একটু আলাদা কেটেছে। এখন আবার বন্ধু, বোন— এদের সঙ্গে কাটে। পয়লা বৈশাখে এই যে চারপাশে একটা উৎসবের মেজাজ, এটা আমি খুব উপভোগ করি।
এ বার পয়লা বৈশাখ বোনের বাড়িতেই কাটছে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে জমিয়ে পোলাও-মটন খাওয়ার প্ল্যান। মটনটা আমিই রেঁধেছি। বিকেলে সাজগোজ করব। পয়লা বৈশাখে আমি এ বছর পরছি একটা লাল রঙের হ্যান্ডলুম শাড়ি তাতে সোনালি পাড়। শাড়িটা আমায় দিয়েছে আমার তিন বন্ধু বিপ্রদা, শিলাদা আর মেঘনা। ওরাই বানিয়েছে শাড়িটা। ওই শাড়িটা দিয়েই সুন্দর করে সাজব। তবে বাঙালি ঘরানায় নয়। শাড়িটা আমি পরব একটু বোহেমিয়ান স্টাইলে। গয়না, ব্লাউজ়ও হবে সেই ভাবনাকে মাথায় রেখেই।
অঙ্গনা রায়
আমার কাছে পয়লা বৈশাখের রং হল হলুদ। ছোট থেকে দেখে এসেছি, বাড়ির লোকজন এই দিনের পোশাকে হলুদের ছোঁয়া রাখতেন। সেটা ঠিক কী জন্য রাখতেন, আমি জানতাম না। হয়তো বাঙালির কাছে হলুদ শুভ রং বলে। বা হয়তো হলুদ রংটার মধ্যে একটা তরতাজা ভাব আছে বলে। সেই থেকেই ছোটবেলায় হলুদ ফ্রক, তার পরে হলুদ সালোয়ার হয়ে এখন হলুদ শাড়ি। তবে এ বার শাড়ি নয়, একটা সুন্দর হলুদ ব্লাউজ় পরব। সঙ্গে আপাতত তিনটে শাড়ি ভেবে রেখেছি সবুজ, লাল আর মেটে হলুদ।
বেশ কয়েকটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার আছে। যে কোনও একটা পরে নেব। সঙ্গে একেবারে সাধারণ বাঙালি মেয়ের সাজ। চোখে কাজল আর কপালে টিপ!
সৌরভ দাস
বছরের বাকি দিনগুলোয় সাজ নিয়ে আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসি। কিন্তু পয়লা বৈশাখে আমার পছন্দ খাঁটি বাঙালি ক্লাসিক সাজ। অর্থাৎ, ধুতি-পাঞ্জাবি। সুযোগ থাকলে ধুতি আর পাঞ্জাবিই পরার ইচ্ছে আছে। সাদা ধুতির সঙ্গে সাদা পাঞ্জাবির মতো ধ্রুপদি বাঙালি আর কোনও পোশাকে হতে পারে কি!