Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ঘরোয়া পদ বিঞ্জ ইটিংয়ের ধারণা বদলে দিতে পারে
Binge Eating

বিঞ্জ ইটিংও হতে পারে স্বাস্থ্যকর

ঘরোয়া পদ বিঞ্জ ইটিংয়ের ধারণা বদলে দিতে পারে

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ ০৬:৫০
Share: Save:

ওয়ার্ক ফ্রম হোম, বন্ধুদের সঙ্গে ভার্চুয়াল আড্ডা... বাইরে বেরোনোর সুযোগ নেই। তবে নাগাড়ে কাজের ফাঁকে মুখরোচক কিছু হলে মন্দ হয় না! মাত্রাজ্ঞান ছাড়িয়ে নাগাড়ে মুখ চলতেই থাকে, যাকে বলা হয় বিঞ্জ ইটিং। এই শব্দ দু’টির সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে। কারণ, খই-মুড়ি-মুড়কির বদলে চিপস, নাচোস, সফ‌ট ড্রিঙ্কস, চকলেটের মতো হাই-ক্যালরি জাঙ্ক ফুড এই ইটিংয়ের আওতায় পড়ে। অল্পেতে এই স্বাদ মেটে না। তাই খাওয়া হয়ে যায় অতিরিক্ত। পরে প্রয়োজনমাফিক শারীরচর্চা না করলে ওজন বাড়তে বাধ্য। কিন্তু বিঞ্জ ইটিংয়ে কি স্বাস্থ্যকর পদ যোগ করা যায়? কী মনে করেন ডায়াটিশিয়ানরা?

বিঞ্জ ইটিং কি অসুখ?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবীর মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘বিঞ্জ ইটিং এক ধরনের ইটিং ডিজ়অর্ডার। ওবেসিটিতে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের তিন শতাংশের এই সমস্যা দেখা যায়।’’ তবে স্থূলকায় না হলেও, বিঞ্জ ইটিংয়ের সমস্যা থাকতে পারে। ইমপালস সংযম করতে না পারা, স্ট্রেস সামলাতে না পারা, একাকিত্ব এবং অবসাদের কারণে মানুষের এই ঝোঁক বাড়ে বলে মনে করা হয়। একা থাকলে বা লুকিয়ে এই ধরনের খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বুলিমিয়া রোগীরাও অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। কিন্তু খাওয়ার পরে তাঁদের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। তাই তাঁরা বমি করে বা অন্য ভাবে বেশি খাওয়াকে প্রশমিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিঞ্জ ইটিংয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের ‘কমপেনসেটরি বিহেভিয়ার’ সাধারণত দেখা যায় না। যার ফলে শরীরে জমতে থাকে অতিরিক্ত মেদ।

বিঞ্জ ইটিংয়ের প্রবণতা কমাতে কী করণীয়?

ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়ালের মতে, ‘‘পেট খালি থাকলে সামনে যা পাওয়া যায়, সেটাই মনে হয় বেশি করে খেয়ে নিই। শিঙাড়া, পকোড়া হলেও সংযম থাকে না। তাই একটু ভারী খাবার খেয়ে বেরোনো ভাল।’’ ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর মতেও, পরিমাণে অল্প কিন্তু বারবার করে খেতে হবে। বিঞ্জ ইটিং কমানোর জন্য ডায়েটে প্রোটিনসমৃদ্ধ স্ন্যাকস, ওমেগা থ্রি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফাইবার এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাবার থাকা খুব জরুরি।

বিকল্প স্বাস্থ্যকর পদের সন্ধান

ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া ঘরোয়া স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস ও পানীয়ের হদিস দিলেন, যা বিঞ্জ ইটিং করা যেতে পারে।

• পপকর্ন: সল্টেড পপকর্নে কোনও ক্ষতি নেই। তবে মাখন, চিজ় দেওয়া পপকর্ন খাওয়া শরীরের জন্য ভাল নয়। মেশিনে তৈরির চেয়েও রোদে শুকনো বা খোলায় ভাজা পপকর্ন বেশি স্বাস্থ্যকর।

• নাচোস: বেকড মেজ় নাচোস সালসা সস দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে চিজ় বা মেয়োনিজ় ডিপ চলবে না।

• রোস্টেড মাখনা: পেট ও মন দুইয়ের খোরাকের জন্যই রোস্টেড মাখনা ভাল বিকল্প।

• রোস্টেড চানা: চানা রোস্ট করে খেলে শরীরের উপকার হয়, আবার পেটও ভর্তি থাকে।

• বেকড নিমকি: নিমকি সাধারণত বাইরে থেকে কিনে স্টোর করে রাখা হয়। কিন্তু ঘরে বেক করে নিমকি তৈরি করলে তা শরীরের জন্য উপযোগী।

• ব্র্যান বিস্কিট: বিঞ্জ ইটিংয়ের জন্য চকলেট বা ফ্লেভার দেওয়া বিস্কিটের চেয়ে ব্র্যান বিস্কিট খাওয়ার পরামর্শ দেন ডায়াটিশিয়ানরা।

• কলার চিপস: বাইরে থাকলে একটি কলা খিদে মেটায়। তবে কলার চিপস খেলে স্বাদ ও সুস্থতা দুই-ই বজায় থাকে।

• রোল বা র‌্যাপ: বাড়িতে নানা ধরনের আনাজ দিয়ে রোল বা র‌্যাপ তৈরি করে বাইরে ক্যারি করা যায়।

গরমের দিনে পানীয়

তৃষ্ণা নিবারণে বিঞ্জ ড্রিঙ্ক হিসেবে সফ্‌ট ড্রিঙ্কস খাওয়া হয় বেশি। তার বদলে আমপানা, ঘোল, বেলের শরবত, ডাবের জল, ছাতুর শরবত করে খাওয়া যেতে পারে। ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতে এবং‌ শরীর ঠান্ডা রাখতে এই পানীয়গুলি খুবই উপকারী।

মিষ্টিমুখ

বিঞ্জ ইটিংয়ে মিষ্টি বা ওই ধরনের খাবারের দিকেও ঝোঁক বেশি থাকে। তার বিকল্প হিসেবে ঘরে কিছু তৈরি করে রাখা যায়। যেমন, শেষপাতে ফ্রোজ়েন কলার সঙ্গে পিনাট বাটার বা ভেজানো খেজুর ব্যবহার করা যায়। গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেন ডায়াটিশিয়ানরা। জলে ভেজানো ড্রাই ফ্রুটস, পিনাট বার, তিলের বার খাওয়া যেতে পারে। পছন্দের উপকরণ দিয়ে লাড্ডু তৈরি করে রাখতে পারেন।

মুড-লিফ্টিং খাবার

ডায়াটিশিয়ান কোয়েল বললেন, ‘‘কতকগুলি খাবার আছে, যা রোজের ডায়েটে রাখলে মুড বুস্ট করে। বিঞ্জ ইটিংয়ের চাহিদা তৈরি করে না।’’ এই খাবারগুলি সেরেটোনিন হরমোনের ক্ষরণে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে, অ্যাভোকাডো, নারকেল, ব্রকোলি, ডার্ক চকলেট, গ্রিন টি, মধু, ওটস, কমলালেবুর রস, পালং, ওয়ালনাট, ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদি।

আত্মনিয়ন্ত্রণ

বিঞ্জ ইটিং কমানোর জন্য ফুড অ্যাপ বেশি ঘাঁটলে চলবে না। জাঙ্ক ফুড স্টোর না করলেই ভাল। একদিন বিরিয়ানি খাওয়া হলে, পরের দিন খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

কখনও ইচ্ছে হলে বিঞ্জ ইটিং যে করা যায় না, এমন নয়। কিন্তু তা যেন অসুখের পর্যায়ে না যায়, সে দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Binge Eating COVID-19 Work from home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE