হাত-পায়ের উপরে কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না তাঁদের। সব সময়েই এমন ভাবে কাঁপতে থাকত যে স্বাভাবিক জীবনযাপন তো দূরের কথা, লোকজনের সামনে বেরোনোর আত্মবিশ্বাসটুকুও চলে গিয়েছিল তাঁদের অনেকেরই। ডাক্তাররা চিকিৎসা করছিলেন, ওষুধপত্রও দিচ্ছিলেন, কিন্তু তাতে পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি। বরং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেখা গিয়েছিল অন্য একাধিক সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে ব্রেন পেসমেকার বসিয়ে নতুন জীবনের হদিস পেয়েছেন ওঁরা অনেকেই। ওঁদের নিয়েই শনিবার, বিশ্ব পারকিনসন্স দিবসে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস। সকলেই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। আর ডাক্তারদের কাছে জেনে নিলেন কী ভাবে আরও বেশি দিন সুস্থ থাকা সম্ভব।
একটা সময় পর্যন্ত মনে করা হত, পারকিনসন্স ডিজিজ-এর কোনও চিকিৎসা নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই ধারণাও বদলাতে শুরু করেছে। নিউরোসার্জন সুজয় সান্যালের দাবি, ব্রেন পেসমেকারের সাহায্যে পারকিনসন্স-এর সমস্যা অনেক কমানো যায়। পারকিনসন্স-এর শিকার, ৮০ বছরের গীতা সেনকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটা সময়ে সম্পূর্ণ ভাবে অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন উনি। সারা দিনে অজস্র ওষুধও ওঁর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারছিল না। ব্রেন পেসমেকার সার্জারির পরে এখন উনি অনেকটাই স্বনির্ভর। হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন তিনি। ওষুধের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে।’’
দেহের বিভিন্ন পেশির নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ডোপামিন। মস্তিষ্কের যে কোষগুলি ডোপামিন তৈরি করে, সেই কোষগুলি নষ্ট হলে পারকিনসন্স ডিজিজ হয়। এই রোগ সাধারণ ভাবে কমে না, বরং বাড়তে থাকে। বছর কয়েক আগে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির চিকিৎসক শ্যামল দাস একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছিলেন, কলকাতা শহরে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৫২ জন এই রোগের শিকার। গত পাঁচ বছরে এই হার আরও কিছুটা বেড়েছে বলে চিকিৎসকদের অভিমত।
সুজয়বাবু জানান, পারকিনসন্স সারে না। বরং বাড়তে থাকে। আর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধও সে ভাবে কাজ করে না। বরং আরও নানা জটিলতা তৈরি হয়। ব্রেন পেসমেকার মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে উদ্দীপনা তৈরি করে পেশীর অস্বাভাবিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy