পাতা কেটে কখনও ‘কান্তারা’-র অবয়ব তৈরি করে চলেছেন, কখনও বা বন্যপ্রেমের ছবি ফুটিয়ে তুলছেন কোচির শিল্পী মনু কে এম। বিখ্যাত সব ছবির পোস্টারও ফুটে উঠছে তাঁর লিফ আর্টে।
পেপারকাটিংয়ের মতো পাতা কেটে ছবি আঁকাই এখন তাঁর নেশা ও পেশা বলা যেতে পারে। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল মনুর। তখন পাতার পর পাতা স্ক্রিবল করে যেতেন তিনি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁকার নেশা আরও বাড়তে থাকে। তবে আঁকাটা কখনও পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবেননি তিনি। চাকরির পাশে শখ হিসাবেই বাঁচিয়ে রাখেন তাঁর সৃজনশীলতা। কাজের পাশাপাশি চলতে থাকে পেনসিল স্কেচ, মন্ডালা আঁকা, স্টেনসিল আর্ট, স্যান্ড আর্ট, কফি পেন্টিং। মনুর কথায়, “অনেক কিছুই করছিলাম, কিন্তু সেটায় যে আমার নিজস্বতা নেই বুঝতে পারছিলাম। তাই এমন কিছু করার কথা ভাবতে থাকি, যেটা শুধু আমার স্টাইল হবে। তখনই এক চিনা শিল্পীর লিফ পোর্ট্রেট আসে চোখের সামনে। আমিও আমার শিল্পের ক্যানভাস পেয়ে যাই।”
দক্ষিণ ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে নারকেল গাছের অভাব নেই। সেই গাছের পাতা কেটেই প্রথমে শুরু হয় দেশের নামী তারকাদের পোর্ট্রেট তৈরি করা। শিল্পীর কথায়, “প্রথম বার কাঁঠাল পাতা কেটে একটা বুদ্ধের মুখ এঁকেছিলাম। সেটা নিজেরই ভাল লাগেনি। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। তার পর একের পর এক পাতায় কাজ করে গিয়েছি।” পরিচিতি অবশ্য পেয়েছেন অনেক পরে। বট, অশ্বত্থ, শাল, পাম, নারকেল... এমন অনেক গাছের পাতা কেটেই ছবি তৈরি করেছেন মনু।
প্রথমে পাতার উপরে মার্কার দিয়ে ছবি এঁকে নেন। তার পরে ছুরি দিয়ে সেই আঁকার আউটলাইন ধরে পাতা কেটে ছবিটা বার করে নেন। তবে অন্য পদ্ধতিতেও ছবি তৈরি করেন। ছুরির ফলা ফুটিয়ে ফুটিয়ে দীপিকা পাড়ুকোনের মুখের ছবিও এঁকেছেন পাতার উপরে। তবে যে কোনও পাতার উপরেই এই কাজ করা হোক না কেন, শেষে ভার্নিশ করাটা খুব জরুরি বলে জানালেন মনু। কারণ সেই পালিশই এই শিল্পের আয়ু বাড়িয়ে দেয়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০০ লিফ আর্ট করেছেন তিনি। এক সময়ে আঁকার নেশা থেকেই এই পথে আসা মনুর। কিন্তু শিল্পচর্চা যে নিজের পেশাও হতে পারে, সেই পথ দেখিয়েছে এই লিফ আর্ট।
নবনীতা দত্ত
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)