Advertisement
E-Paper

মাংসের বহু রূপে বড়দিনের আমেজ 

কিন্তু তাঁর নিজের বাড়িতেই শহরের সাবেক মাংস-তীর্থ কালম্যানের প্রবেশ ঠেকায় কে! সুরজিৎবাবুর গিন্নি ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের চিলতে দোকানে ঢুকে ছেলের পছন্দের টকটকে হাঙ্গেরিয়ান সসেজ-সালামি কিনে এনেছেন।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৭
নানা রকম ‘কোল্ড কাট’-এর সম্ভার। ছবি: রাজর্ষি চক্রবর্তী

নানা রকম ‘কোল্ড কাট’-এর সম্ভার। ছবি: রাজর্ষি চক্রবর্তী

বড়দিনে দিল্লি থেকে ছেলে বাড়ি আসবে এক বছর বাদে। তাই ফ্রিজে জার্মান শৈলীর মেড ইন ইন্ডিয়া সসেজ-কোল্ডকাট ঢালাও মজুত রেখেছেন সুরজিৎ সেন। বেঙ্গালুরুর খামারজাত মাংসের বাভারিয়ান মিটলোফ বা ব্ল্যাকফরেস্ট হ্যাম, কলকাতাতেও ছাপ ফেলছে বলে বেজায় খুশি পর্ক-চিকেন আইটেমের সর্বভারতীয় সংস্থার কর্তা সুরজিৎবাবু।

কিন্তু তাঁর নিজের বাড়িতেই শহরের সাবেক মাংস-তীর্থ কালম্যানের প্রবেশ ঠেকায় কে! সুরজিৎবাবুর গিন্নি ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের চিলতে দোকানে ঢুকে ছেলের পছন্দের টকটকে হাঙ্গেরিয়ান সসেজ-সালামি কিনে এনেছেন। বচ্ছরকার পার্বণের সময়টা কালম্যান, নিউ মার্কেটের বল্ডউইন-ইউপি কিংবা পার্ক সার্কাসের চমনকে ছাড়া বাঙালির মাংস-তৃষ্ণা কী করে মেটে!

সাবেক দোকানের হ্যাম-সসেজ বা রোস্ট-শিল্পীদের ‘মাংসের ময়রা’ বলা যায়! সন্দেশের আটা পাক, দানা পাক, কাঁচা পাকের সূক্ষ্মতার মতো এক-এক জনের মাংসের ‘কাটে’র পুরুত্ব বা মশলার তারতম্য নির্ভর করে। পোড়খাওয়া রসিক খদ্দেরের সঙ্গে খাতিরদারিতেও ঠিক হয়, সসেজ বা হ্যাম-সালামির গড়ন। কলকাতার স্বল্পায়ু শীতের সময়টুকুই কেউ কেউ হামলে পড়ে দোকানে দাঁড়িয়েই খেয়ে ফেলেন কাঁচা লঙ্কাখচিত বিফ-পর্কের কলার কিংবা স্যান্ডউইচের পুরের উপযোগী অক্সটাং। ইউরোপের রকমারি হার্বের গুঁড়ো সুরভিত বা ধোঁয়াগন্ধী সসেজ-সালামি-পেপারনির জবাব বলতে তখন সম্বল নিউ মার্কেটের সেই মাংস শিল্পীরাই। গত কয়েক বছরের কলকাতায় মাংস রসিকদের এই দুনিয়াটাই রাতারাতি বিরাট হয়ে উঠেছে।

বিভিন্ন শপিং মলের বিপণিতে হিমায়িত প্রক্রিয়াজাত সসেজ-হ্যাম আগেও মিলত বটে! তবে ইদানীং আর্থার বা প্রাসুমার মতো সংস্থা খাঁটি ইউরোপীয় শৈলীতে দেশ জুড়ে নানা ধরনের ‘মাংসের মোরব্বা’ পেশ করে। আর্থারের সুরজিৎবাবু বা প্রাসুমার কর্ত্রী লিসা সুয়ালের দাবি, স্বাস্থ্য রক্ষার নিরিখে সাবেক দোকানের থেকে এগিয়ে তাঁরা। ঘোর মাংসানুরাগী প্লাস্টিক সার্জন মণীশমুকুল ঘোষ কিন্তু বল্ডউইনের বাজারের প্রতি আনুগত্য ছাড়তে নারাজ। তিনি বলছিলেন, ‘‘প্রথমে নিউ মার্কেটে গিয়ে পছন্দের মশলা কিনি। তার পরে বল্ডউইনে মাংসের কাট বেছে, দাঁড়িয়ে থেকে সসেজ তৈরি করাই।’’ বাজারের কালি-ঝুলিমাখা পরিবেশেও মণীশের দাবি, ‘‘কারখানাজাত মাংসের ইন্ডাস্ট্রিতেই পরিবেশের ঢের ক্ষতি। সাবেক বাজারের কুটীর শিল্পের সসেজ-হ্যামই সে দিক দিয়ে স্বাস্থ্যকর।’’ শুধু আফশোস, ব্যস্ত রুটিনে দু’ঘণ্টা ধরে সসেজ বাজার করার সময়টা পাওয়া ভার ডাক্তারবাবুর।

বেশ কয়েকটি ছোট-বড় রেস্তরাঁর অভিজ্ঞতাতেও হ্যাম-সসেজে নিউ মার্কেট পাড়ার আলাদা মহিমা। কালম্যানের সসেজ-বেক্‌ন-টার্কি রোস্ট তো শহরের নামী ক্লাবে পাড়ি দিচ্ছে। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ম্যাকাজ়ো কাফের বিতান মুখোপাধ্যায় বা সল্টলেকের বার্গার-বিশারদ লোকাল গুরমের রাজর্ষি চক্রবর্তী নিউ মার্কেটের ওল্ড ক্যালকাটা পিগারিকেই ঢালাও নম্বর দিচ্ছেন। রাজর্ষির জন্য সমীহযোগ্য পর্ক কলার অথবা মিট লোফ ছাড়াও কলকাতার এক ঝাঁক ‘পর্ক অ্যাডিক্ট’-এর জন্য গোয়ান ভোজে বিতানকে দুরন্ত চোরিজ়ো সসেজ গড়ে দেয় নিউ মার্কেটের বিপণি।

কালম্যানের জয় ঘোষের অবশ্য দাবি, ইদানীং কারিগরের আকালে অনেক অর্ডার নিতেই তাঁরা হিমসিম খাচ্ছেন। শহরের পোড়খাওয়া রেস্তরাঁ-কর্তা অভিজিৎ বসু মনে করেন, সমস্যা থাকলেও সাবেক মাংস-শিল্পীদের দোকানগুলো অত সহজে মুছে যাবে না। নয়া ব্র্যান্ডের হ্যাম-সসেজে মন ভরলেও গড়পড়তা রেস্তরাঁর পক্ষে তা এখনই পরতায় পোষাবে না।

নামী ব্র্যান্ডের স্বাদু উপকরণে এক-ঢালা ছাঁচের বিপদ নিয়েও কিছু আশঙ্কা থাকছে। তবে সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক রাজভোজের সুখটুকু হাতের মুঠোয় চলে আসাই বোধহয় মাংস-রসিকদের জন্য শেষ কথা। পর্ক-অন্ত-প্রাণ, ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট অয়ন ঘোষের কথায়, ‘‘কলকাতায় বসেই এত ধরনের সসেজ-হ্যাম খেতে পারাটা আগে ভাবা যেত না!’’ সাবেক মহিমা না ভুলেই তাই বহু রূপে সম্মুখে হাজির মাংস-খণ্ডে মজেছে আমুদে বাঙালি। ‘মোর ইজ় মেরিয়ার’ বলে তাল ঠুকছে বড়দিনের কলকাতা।

Food Chicken Sausage Christmas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy