Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Nail Care

Nail care: নখকে চিনুন নখদর্পণে

নখের সমস্যা হয়ে উঠতে পারে পীড়াদায়ক। জেনে নিন এর নেপথ্য কারণ।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:২৬
Share: Save:

চোখের মতো নখও এক অর্থে দর্পণের সঙ্গে তুলনীয়। শরীর-স্বাস্থ্যের আয়না। বলা হয়, একজন দক্ষ চিকিৎসক শুধু নখ দেখে রোগী সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দিতে পারেন। এই নখ মাঝেমাঝেই তার রং-রূপ বদলে ফেলে। কখনও তার নেপথ্যে থাকে কোনও রোগ, আবার কখনও তা ঠিক হয়ে যায় নিজে থেকে। তবে নখের আকার-প্রকার পাল্টে গেলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। নখের কয়েকটি চেনা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হল—

লিউকোনিয়া: নখে সাদা স্পট তৈরি হয় বা নখ পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। সাদা স্পট বা পাঙ্কটেট লিউকোনিয়ার উপসর্গ বেশ পরিচিত, ছোট-বড় সকলেরই দেখা যেতে পারে। লিউকোনিয়া সংক্রান্ত একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল, এটি ক্যালশিয়ামের অভাবে হয়। সেটি সত্যি নয়। নখ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই সাদা স্পটও গায়েব হয়ে যায়। তবে নখ যদি পুরো সাদা হয়ে যায়, তাকে বলে টোটাল লিউকোনিয়া। সে ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ আছে বইকি। হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া রক্তাল্পতা, লিভারের অসুখ বা ব্লাড ভেসেলের সমস্যার কারণে রক্ত সঞ্চালনে অসুবিধে হলে তা প্রতিফলিত হতে পারে নখে।

ইয়েলো নেল সিনড্রোম: নখ হলুদ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল সোরিয়াসিস। নেলপ্লেট আর নেলবেডের থেকে আলাদা হয়ে যায় এ ক্ষেত্রে। মাঝে যে ফাঁকা অংশ তৈরি হয়, তার ভিতরটা হলুদ হয়ে যায়। গ্লাইকোপ্রোটিন জমা হয় সেখানে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে বা ক্রনিক লিভার ডিজ়িজ় থাকলে এটা হতে পারে।

বিউ’স লাইন: নখে আড়াআড়ি ভাবে লিনিয়ার গর্ত তৈরি হলে তাকে বিউ’স লাইন বলে। কোভিড, টাইফয়েড বা অন্য কোনও কঠিন রোগ অনেক সময়ে নখের বৃদ্ধি রোধ করে। ফলে নখে গ্রুভস তৈরি হয়। এটি নেল বেড থেকে কতটা দূরত্বে রয়েছে, তা দেখে চিকিৎসকেরা বলে দিতে পারেন, ক’মাস আগে কঠিন অসুখ থেকে উঠেছেন রোগী। সে সময়ে তাঁর শরীরে বিপাক হার কমে যাওয়ায়, পুষ্টি কম হওয়ায় তৈরি হয়েছে এই বিউ’স লাইন। যাঁরা একটানা কোনও অসুখে ভোগেন, তাঁদের নখেও এই উপসর্গ দেখা দেয়।

কইলোনিকিয়া: শরীরে আয়রনের অভাব, সিভিয়ার অ্যানিমিয়া, লিভারের কোনও সমস্যায় নখের উপরিভাগ চামচের মতো গর্তাকৃতি হয়ে যায়। নখ পাতলা হয় ও কন্টুর নষ্ট হয়ে যায়। এই লক্ষণকে স্পুন নেলস বা কইলোনিকিয়া বলা হয়।

নেল পিটিং: নখের মধ্যে ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়। সোরিয়াসিস, এগজ়িমা, লাইকেন প্ল্যানাস, অ্যালোপেসিয়া (চলতি বাংলায় যাকে বলে টাকপোকা) ইত্যাদি অসুখ থাকলে নখের মধ্যে গর্ত হয়ে নেল পিটিংয়ের সমস্যা দেখা দেয়।

ইনগ্রোয়িং টো নেল: বয়স হলে অনেকের বুড়ো আঙুলের নখ শক্ত, কালো ও বড় হয়ে যায়। নেলকাটারে তা কাটা মুশকিল হয়ে পড়ে তখন। এই উপসর্গকে ডাক্তারি পরিভাষায় অনিকোগ্রাইফোসিস বলে। কেরাটোলাইটিক মলম দিয়ে নখ একটু পাতলা ও নরম করার চেষ্টা করা হয় এ ক্ষেত্রে। ডায়াবিটিস থাকলে কম বয়সেও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

পেরিজিয়াম: নখের মধ্যভাগ ছোট হয়ে গিয়ে তার ধারগুলি উঁচু হয়ে ওঠার সমস্যা দেখা যায় এ ক্ষেত্রে। নেল স্কিন উঠে যায় নেল প্লেটের উপরে, আর প্লেট নষ্ট হয়ে যায়। লাইকেন প্ল্যানাস নামের রোগ হলে পেরিজিয়ামের উপসর্গ দেখা যায়। আবার ট্রমাতেও হতে পারে এই রোগ। অর্থাৎ নখে ইনজুরি হলে, নখ উড়ে গেলে অনেক সময়ে নতুন নখ না তৈরি হয়ে সেখানকার চামড়াটিই শক্ত হয়ে যায়।

সমস্যা ও সমাধান

এ ছাড়াও নখের মধ্যে তিল বা আঁচিল হওয়া, অনিকোম্যাডেসিস বা নখ থেকে ছালের মতো উঠে আসা, ফাঙ্গাল ইনফেকশনে নখের রং পাল্টে কালো বা সবুজ হয়ে যাওয়া, ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণের কারণে নখকুনি— প্রায়ই দেখা যায়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর জানালেন, অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ ওষুধে কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক কোর্সেই ঠিক হয়ে যায় নখের অসুখ। ‘‘বেশির ভাগ সমস্যা মলমেই সেরে যায়। নেল পিটিংয়ের মতো কিছু সমস্যায় খাওয়ার ওষুধ দিয়ে থাকি আমরা। ব্যালান্সড ডায়েট, পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ইনটেক হলে নখ বা চুলের সমস্যা আপনা থেকে কমে যায়। ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন এড়াতে জলের কাজ করার পরে হাত শুকনো রাখুন,’’ বললেন ডা. ধর।

তিনি আরও জানালেন, যাঁরা নিয়মিত ম্যানিকিয়োর বা নেল এক্সটেনশন করান, তাঁদের নখের কিউটিকল নষ্ট হয়ে নখ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, সংক্রমণেও আক্রান্ত হয় সহজে। মাঝেমাঝে করালে অবশ্য এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নখের ভোলবদল অবহেলা করার নয়। নিজে থেকে না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nail Care
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE