ডিজিটাল মাধ্যমে যে কোনও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কিউআর কোড এখন অপরিহার্য। পাঁচ টাকা হোক বা পাঁচ হাজার টাকা, দোকানে গিয়ে নগদ বার করতে চান না অনেকেই। নির্দিষ্ট অ্যাপ খুলে কিউআর কোড স্ক্যান করে টাকা মিটিয়ে দিলেই হল। হোটেল-রেস্তরাঁয় হোক, কেনাকাটার সময়ে বা অ্যাপ ক্যাবের টাকা মেটাতে কিউআর কোডই এখন ভরসা হয়ে উঠেছে। আর এর ফাঁক গলেই বেড়ে চলেছে সাইবার প্রতারণা। সাধারণ মানুষ থেকে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব— অনেকেই নিজের অজান্তে কখনও না কখনও এই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পুজোর সময়ে রেস্তরাঁয় খেতে যাবেন নিশ্চয়ই, বাইরে ঘুরতে যাওয়ারও পরিকল্পনা আছে অনেকের। উৎসবের এই সময়টাতে এই ধরনের সাইবার জালিয়াতির ঘটনা অনেক বেড়ে যায়। তাই যে কোনও জায়গায় কিউআর কোড স্ক্যান করার আগে কয়েকটি জিনিস অবশ্যই খেয়াল করবেন। সতর্ক না হলেই ঘটতে পারে বিপদ।
কিউআর কোড একটি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি বর্গাকার গ্রিডে সাজানো অনেকগুলো কালো বর্গক্ষেত্র নিয়ে গঠিত। যা ক্যামেরার মতো একটি ইমেজিং ডিভাইস দিয়ে পড়া যায়। ই কোড পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ স্মার্টফোনেই থাকে। যখন কোনও ব্যক্তি একটি কোড স্ক্যান করেন, তখন তাঁর ফোনের ক্যামেরার কিউআর রিডার কোডটি পাঠোদ্ধার করে। ফলস্বরূপ ওই কোডে রাখা তথ্য ফোনে সঞ্চিত হয়ে যায়। কিউআর কোড সাধারণ ভাবে বিপজ্জনক নয়। কিন্তু কোডের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখা তথ্যই কখনও কখনও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এতে ম্যালঅয়্যার বা ভাইরাস ঢুকিয়ে রাখতে পারে হ্যাকারেরা। ফোনের মাধ্যমে স্ক্যান করার সঙ্গে সঙ্গে সেই ম্যালঅয়্যার ইনস্টল হয়ে যাবে আপনার ফোনে এবং সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের তথ্য চলে যাবে হ্যাকারদের কব্জায়। তাই সতর্ক থাকতেই হবে।
আরও পড়ুন:
কিউআর কোড স্ক্যানের আগে কী কী খেয়াল করবেন?
১) কোনও অজানা ওয়েবসাইট, ইমেল বা মেসেজ থেকে পাওয়া কিউআর কোড স্ক্যান করবেন না। যদি আপনি প্রেরককে না চেনেন, তবে স্ক্যান করা থেকে বিরত থাকুন।
২) যদি কোনও কিউআর কোড স্ক্যান করে খুব লোভনীয় অফার বা আকর্ষণীয় ছাড় পান, তা হলে সতর্ক হোন। অনেক সময় এটি প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে।
৩) যে সংস্থা থেকে জিনিস কিনছেন, সেটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে যদি কিউআর কোড পাঠানো হয়, তবেই তা স্ক্যান করবেন। নিজে না বুঝতে পারলে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন।
৪) কিউআর কোড স্ক্যান করার পরে যে ওয়েবসাইটটি খুলবে, সেটির ইউআরএল ভাল ভাবে পরীক্ষা করুন। সন্দেহজনক মনে হলে বা বানান ভুল দেখলে সাইটটি ছেড়ে বেরিয়ে আসুন।
৫) কিউআর কোড স্ক্যান করার পর যদি কোনও ওয়েবসাইট আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের বিবরণ বা ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন পিন, পাসওয়ার্ড) চায়, তা হলে সতর্ক হতে হবে। এগুলি প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে।
৬) কাউকে নিজের ইউপিআই আইডি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য বা ওটিপি জানাবেন না।
৭) টাকা পাঠানোর আগে অবশ্যই গ্রাহকের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য মিলিয়ে দেখে নিন।
৮) কিউআর কোড স্ক্যান করার সময় খেয়াল করে দেখুন, সরাসরি অ্যাপ থেকে স্ক্যান কোড দেওয়া হচ্ছে কি না। যদি তা না নয়, তা হলে সেই কোড ভুলেও স্ক্যান করবেন না।