Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
stress

কোভিড ও আমপানের জোড়া আঘাত, ট্রমা থেকে তৈরি উদ্বেগ কমান এই উপায়ে

শুধু কোভিড বা ঘূর্ণিঝড় বলে নয়, যে কোনও মহামারির সঙ্গী হয়ে আসে পিটিএসডি।

সাধারণ অবস্থায় যেখানে এক শতাংশ মানুষের পিটিএসডি ছিল, কোভিডের পর তা বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। ছবি: শাটারস্টক।

সাধারণ অবস্থায় যেখানে এক শতাংশ মানুষের পিটিএসডি ছিল, কোভিডের পর তা বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ১৭:২৮
Share: Save:

কোভিডের গ্রাফ যখন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, মানুষ দিশেহারা, তখন এল দ্বিতীয় আঘাত। ঘূর্ণিঝড় আমপানের (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন) দাপটে লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বহারা হলেন। যে ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে কোভিডের সঙ্গে অসম লড়াইয়ে নেমেছিলেন, তা তলিয়ে গেল। ত্রাণ কেন্দ্রে গা ঘেষাঘেষি করে থাকতে গিয়ে শিকেয় উঠল সুরক্ষা বিধি। তাতে কোভিডের প্রকোপ বাড়তে লাগল হু হু করে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল সর্বস্তরে, যাকে বলে কালেকটিভ ট্রমা। যার সব গিয়েছে তার পাশাপাশি আপাত নিরাপদ শহুরে মানুষ, কোভিড রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, সবার মনে বাসা বাঁধল ভয়। প্রস্তুত হয়ে গেল পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা পিটিএসডি-র ক্ষেত্র।

মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানালেন, “শুধু কোভিড বা ঘূর্ণিঝড় বলে নয়, যে কোনও মহামারির সঙ্গী হয়ে আসে পিটিএসডি। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ বা ধর্ষণ বিদ্ধস্ত জীবনে অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। আতঙ্কবাদের সঙ্গে যাঁদের সহবাস করতে হয়, প্রবল অত্যাচার বা দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় যাঁদের, তাঁদেরও এই ডিজঅর্ডার হয়।”

কী হয় ডিজঅর্ডারে

প্রবল আতঙ্কে ঘুম চলে যায়, ফ্ল্যাশব্যাকের মতো ঘটনাগুলি ভেসে উঠতে থাকে চোখের সামনে। দুঃস্বপ্ন দেখেন, অপরাধবোধ বা লজ্জায় নিজেকে শেষ করে দিতে চান, গ্রাস করে প্রবল উদ্বেগ-অবসাদ, অহেতুক রাগ, সন্দেহ। সংসারধর্ম ও জীবন-জীবিকার প্রতি কোনও টান থাকে না।

আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে নতুন আশা, সেরে ওঠা রোগীর রক্তের টি-সেলেই আস্থা গবেষকদের

দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রায় সবারই হয় এমন। কেউ কাটিয়ে উঠতে পারেন, কেউ পারেন না। এক মাসের বেশি সময় ধরে উপসর্গ চললে সূত্রপাত হয় ডিজঅর্ডারের।

কাদের হয়

কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে, তার মধ্যে এক বা একাধিক থাকলে বিপদের আশঙ্কা বেশি। যেমন—

• মহিলাদের বেশি হয়। পুরুষের দ্বিগুণ।

• স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা মেজর ডিপ্রেশন থাকলে।

• যাঁদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার কেউ নেই।

• অনিদ্রার রোগী, উদ্বেগপ্রবণ ও নেশাগ্রস্ত মানুষ।

• যাঁদের আইকিউ কম।

• যাঁদের একটুতেই রাগ-দুঃখ-হতাশা-উদ্বেগ-অপরাধবোধ, ভয়, মাত্রা ছাড়ায়।

• যাঁরা সমস্যা এড়িয়ে যান বা কারও সাহায্য ছাড়াই সামলে ফেলতে পারবেন ভাবেন।

• দুর্ঘটনার আগে লাগাতার উদ্বেগে ভুগলে। ডিভোর্স, প্রিয় কারও মৃত্যু, প্রবল অসুস্থতা বা চাকরি চলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে।

• ছোটবেলার আঘাত যাঁদের এখনও তাড়িয়ে নিয়ে বেরয়।

• দুর্ঘটনা যত প্রবল, তত আশঙ্কা বেশি। একসঙ্গে একাধিক জুড়ে গেলে বিপদ বাড়ে।

কাদের কম হয়

ভাল পরিবার ও বন্ধু আছে।

মনের কথা খুলে বলতে পারেন।

বিপদের মোকাবিলা করতে পারেন।

সব কিছুর ভাল দিক দেখেন৷ মানিয়ে নিতে পারেন।

আধ্যাত্মিক চেতনা আছে।

কোভিড ও পিটিএসডি

উহানের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেখানে সাধারণ অবস্থায় যেখানে এক শতাংশ মানুষের পিটিএসডি ছিল, কোভিডের পর তা বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। যেখানে রোগ বেশি, সেখানে ১৮.৪ শতাংশ আর যেখানে কম, সেখানে ৫.২ শতাংশ মানুষ এতে ভুগছেন। তার মধ্যে রোগীরা যেমন আছেন, আছেন সাধারণ মানুষ। বাদ যাননি স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তাঁদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৪.৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান? ভরসা রাখুন এই বিশেষ ভেষজ খাবারে

রোগীদের বিপদ বেশি, কারণ এই ভাইরাস অনেক সময় ব্রেনেও ছড়ায়। ফলে মুড সুইং, দোটানা, অবুঝপনা ও চিন্তাভাবনার অসঙ্গতি থেকে যায়। কারও হয় অবসাদ। রোগ জটিল হলে বিপদ আরও বাড়ে। আমেরিকার এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি কোভিড রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের আইসিইউ কেয়ার লাগে। তার মধ্যে যত জন বাঁচেন তাঁদের ৯৬ শতাংশের পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেসের উপসর্গ হয়। এর প্রথম কারণ রোগ ও চিকিৎসার প্রবল কষ্ট। কষ্ট কমাতে কখনও ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ উদিত চাড্ডা জানিয়েছেন, প্রচুর বেঞ্জোডায়াজিপিন দিয়ে ঘুম পাড়ালে পিটিএসডি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বাড়ে একাকীত্বের কারণে। মন ও শরীরে বিধ্বস্ত রোগীর যে ভালবাসা ও সুশ্রুষার দরকার হয়, কোভিডে তা জোটে না। সঙ্গে যোগ হয় জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা, সামাজিক ভাবে একঘরে হওয়ার ভয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এ সবের কারণেই সার্স, মার্স, ইবোলা ইত্যাদির সময় যত জন এতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, কোভিডে হচ্ছেন বা হবেন আরও অনেক বেশি।

সমাধান

রোগের রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে আগে থেকে সতর্ক থাকুন। সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনি কখনও বিভিন্ন ধরনের থেরাপি করবেন, কিছু রিল্যাক্সেশন পদ্ধতি শেখাবেন, কখনও ওষুধ দেবেন। কিছু ক্ষেত্রে সব ক’টিরই প্রয়োজন হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE