Advertisement
E-Paper

‘ছুটিতে’ ডাক্তার, প্রাণ দিয়ে মাসুল গুনলেন রোগী

টানা তিন দিন সরকারি ছুটিতে ‘ছুটি’ ছিল হাসপাতালেরও! অভিযোগ, সেখানকার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তাই মুমূর্ষু এক রোগীকে দেখার সময় করে উঠতে পারেননি কোনও ডাক্তার। টানা তিন দিন কার্যত বিনা চিকিৎসায় থেকে শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ওই রোগী। ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। আর সে দিনই রাজ্যের একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে জমা পড়েছে এই অভিযোগের চিঠি।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৬

টানা তিন দিন সরকারি ছুটিতে ‘ছুটি’ ছিল হাসপাতালেরও! অভিযোগ, সেখানকার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তাই মুমূর্ষু এক রোগীকে দেখার সময় করে উঠতে পারেননি কোনও ডাক্তার। টানা তিন দিন কার্যত বিনা চিকিৎসায় থেকে শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ওই রোগী। ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। আর সে দিনই রাজ্যের একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে জমা পড়েছে এই অভিযোগের চিঠি।

সেরিব্রাল অ্যাটাকের রোগী, বীরভূমের বাসিন্দা বীরেন্দ্রকুমার দত্ত মাসখানেক আগে পিজি-র সিসিইউ-তে ভর্তি হন। তারও আগে দীর্ঘদিন তিনি ভর্তি ছিলেন আলিপুরের এক নার্সিংহোমে। বীরেন্দ্রবাবুর ছেলে টুটুল দত্তের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর বাবার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকে বাবার রক্তচাপ খুব কমে যায়। শ্বাসকষ্ট হয়। বারবার ওয়ার্ডে বলছিলাম, যাতে কোনও ডাক্তার দেখেন। বলা হয়, ডাক্তার যখন দেখার দেখে যাচ্ছেন। কিন্তু সারা দিন হাসপাতালে বসেও ডাক্তারকে দেখিনি।’’ তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মীরা জানান, গুড ফ্রাইডে-র ছুটিতে কাউকে পাওয়া যাবে না। শনি এবং রবিবারও একই অবস্থা। সোমবার ভোরে বীরেন্দ্রবাবু মারা যান।

বেসরকারি হাসপাতালের বিপুল বিল মেটাতে গিয়ে প্রায় নাভিশ্বাস উঠেছিল বীরেন্দ্রবাবুর পরিবারের। বহু চেষ্টাচরিত্রের পরে ঠাঁই মেলে এসএসকেএমে। তাঁর ছেলের বক্তব্য, ‘‘সরকারি হাসপাতালেও যদি এমন হয়রানি হয়, তবে যাবেন কোথায়?’’

পিজি-র সিসিইউ-তে ডাক্তার নিয়ে যে সমস্যা আছে, তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, এই ইউনিট খোলার পর থেকেই ডাক্তার নিয়ে সমস্যা। মুখ্যমন্ত্রী অতিরিক্ত শয্যার উদ্বোধন করেছেন ঠিকই। কিন্তু ডাক্তার বাড়েনি। এক জন ইনচার্জ, কিছু মেডিক্যাল অফিসার ও হাউসস্টাফ আছেন। কিন্তু কোনও রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার, প্রোফেসর, সহকারি প্রোফেসর নিয়োগ হয়নি।

ওই ইউনিটেই ভর্তি ছিলেন প্রভাতকুমার ভাদুড়ী। রবিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে সন্দীপ ভাদুড়ীরও অভিযোগ, শুক্র-শনিবার পরপর ছুটির দিনে কোনও সিনিয়র ডাক্তারের দেখা পাননি তাঁরা। একই বক্তব্য অন্য রোগীদের পরিজনদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর আত্মীয়ের কথায়, ‘‘রবিবার তো কোনও ডাক্তার পাওয়াই যায় না। পরপর ছুটি থাকলে তো কথাই নেই। এ নিয়ে কোনও অভিযোগ করতে গেলে উল্টে বলা হয়েছে, ‘যেখানে ভাল ডাক্তার পাবেন, সেখানেই নিয়ে যান।’’

ওয়ার্ডের নার্সদের একাংশেরও অভিযোগ, ডাক্তার না থাকার জের পোহাতে হয় তাঁদেরই। এক নার্সের কথায়, ‘‘ডাক্তার না পেয়ে রোগীর পরিজনেরা আমাদের উপরেই চোটপাট করেন। বুঝি, ওঁদের ক্ষোভ অসঙ্গত নয়। কী করব? আমরাও তো নিরুপায়।’’

হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট নিয়ে কিছু অভিযোগ আসছে। আমরা ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারে স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েওছি বারবার। যে ভাবেই হোক সমস্যাটা মেটাতে হবে। এ ভাবে চালানো সম্ভব নয়। সম্প্রতি বৈঠক ডেকে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়াদের ওই ইউনিটে রোটেশনের ভিত্তিতে থাকার ব্যবস্থা করেছি। দেখা যাক, পরিস্থিতির উন্নতি হয় কি না।’’

critical patient sskm pg hospital critical care unit doctors in leave birendra kumar dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy