E-Paper

হাড়ের সমস্যায় জরুরি সচেতনতা

অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগের পিছনে রয়েছে শৈশবের কিছু অজ্ঞানতা ও অনভ্যাস।

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১০:০৮

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোনও দিন তেমন গুরুতর অসুখে ভোগেননি বছর ৫৫-র শমিতা। তবে ক’দিন আগে মাটিতে পড়ে থাকা কলমটি তুলতে গিয়ে আচমকা কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু! চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গেলে প্রথম প্রশ্নটিই ছিল — ‘ছোট বেলায় খেলাধুলো করেছেন? বা ব্যায়াম?’ পেশায় শিক্ষিকা শমিতা জানলেন তিনি অস্টিয়োপোরোসিসের শিকার। আর এর জন্য কিছুটা দায়ী তাঁর শৈশবও!

শুধু শমিতা নন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সকলেরই বাড়তে থাকে নানা শারীরিক সমস্যা। কখনও দেখা দেয় দীর্ঘস্থায়ী, জটিল রোগ। কখনও আবার, বিশেষত মহিলাদের মধ্যে দেখা দেয় হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা। এমনই এক সমস্যা হল অস্টিয়োপোরোসিস। আর এই ধরনের রোগের নেপথ্যে থাকে শৈশবের কিছু ভুল অভ্যাস বা অনভ্যাস।

কেন হয় হাড়ের সমস্যা

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হাড়ের গঠনে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে ‘বোন মিনারেল ইউনিট ডেনসিটি’-র, যা হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের গঠনে ভূমিকা রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসেরও। তাই, যখন এই বোন মিনারেল ইউনিট ডেনসিটি কমে যায় বা ক্যালশিয়ামের মতো মিনারেলের মাত্রাও কমে যায়, তখন শুরু হয় হাড়ের ক্ষয় বা দুর্বল হয়ে যাওয়া।

সাধারণত, পুরুষদের ৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে অস্টিয়োপোরোসিস দেখা দিতে পারে। মহিলাদের মধ্যে অবশ্য এই সমস্যা দেখা দেয় আরও কম কম বয়স থেকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মোটামুটি ৪৫ বছর বয়সের পরে কিংবা মেনোপজ়ের পর থেকেই মহিলাদের মধ্যে হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। মেনোপজ়ের পরে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে হাড় দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না হলেও ছোট থেকেই জীবনধারা নিয়ে সচেতন থাকলে পরবর্তীতে তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছয় না।

অস্থি বিশেষজ্ঞ সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে এই সমস্যা দেখা দিলেও এর মূলে থাকে কম বয়সে শরীরের যত্ন না নেওয়ার প্রবণতা। কম বয়স থেকেই নিয়মিত শারীরচর্চা না করা, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম-যুক্ত খাবার রোজকার খাদ্যতালিকায় না রাখা বা পরবর্তীতে ধূমপান-মদ্যপানের অভ্যাস, এ সবের প্রভাবে বাড়তে থাকে হাড়ের ক্ষয়ে যাওয়া ও পরে অস্টিয়োপোরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা। অনেকে অ্যানোরেক্সিয়া, বুলিমিয়ার মতো ইটিং ডিজ়অর্ডারে ভোগেন। এরও প্রভাব পড়ে হাড়ের উপরে। কিছু ক্ষেত্রে আবার কিডনি, থাইরয়েড, হরমোনের সমস্যা বা ক্যানসার থাকলেও বাড়তে থাকে এই রোগের ঝুঁকি। তবে ডা. মুখোপাধ্যায় এ-ও জানাচ্ছেন, শিশুরাও কিছু সময়ে শিকার হতে পারে অস্টিয়োপোরোসিসের। মূলত জিনগত কারণে এই রোগ দেখা দিতে পারে তাদের মধ্যে। এর ফলে জন্ম থেকেই তাদের হাড়গুলি দুর্বল হয়ে থাকে। ছোট থেকেই প্রয়োজন হয় চিকিৎসকের পরামর্শের ও পর্যবেক্ষণের।

অস্টিয়োপোরোসিসের লক্ষণ

‘সাইলেন্ট ডিজ়িজ়’ বা নীরব রোগ নামে পরিচিত অস্টিয়োপোরোসিস। কারণ, কখন যে এই হাড়ের সমস্যা শুরু, তা দৃশ্যত বোঝা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু যখন অস্টিয়োপোরোসিস বাড়তে থাকে, তখন কিছু লক্ষণ অবশ্যই দেখা যায়। যেমন, যদি কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় অস্টিয়োপোরোসিস হয়, তা হলে হালকা চাপ পড়লেই সে জায়গায় ব্যথা বাড়তে থাকে। মূলত কোমর, হাঁটুতে অসম্ভব ব্যথা হয় তখন।

এ ছাড়াও, কখনও মেরুদণ্ড বেঁকে কিছুটা কুঁজো হয়ে যাওয়া, কখনও আবার পা বেঁকে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। এগুলো মূলত হয় ‘মাইক্রো ফ্র্যাকচার’ অর্থাৎ ছোট ছোট জায়গায় হাড়ের ক্ষয়ের কারণে। ডা. মুখোপাধ্যায় এও জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে এই সমস্যা ধরা না পড়লেও যখন সামান্য চোট লাগলেও অসহ্য হয়ে ওঠে যন্ত্রণা, তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কিছু রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই ধরা পড়ে এই রোগ।

নিরাময়ের উপায়

উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র প্রয়োজন রোজকার জীবনে কিছু বদল আনা।

  • ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম ট্যাবলেট নিয়মিত খেতে হবে। এ ছাড়াও রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু ধরনের ওষুধ রয়েছে। তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খেতে হবে।
  • রোগটি কী কারণে হয়েছে, তা তলিয়ে দেখতে হবে। যদি রিউমাটয়েড, দুর্ঘটনা বা টিউমরের মতো কারণে অস্টিয়োপোরোসিস দেখা দেয়, তা হলে সেই রোগের চিকিৎসা আগে প্রয়োজন।
  • শরীর যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রোদ পায়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

ছোট থেকেই যত্ন

অল্প বয়স থেকে নানা ভাবে হাড় মজবুত করে তোলা যেতে পারে।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার যত কম খাওয়া।
  • ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে এমন খাবার খাওয়া। যেমন, ডিম, বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার-সহ আরও অনেক কিছু। সঙ্গে জরুরি পর্যাপ্ত রোদ পোহানো।
  • নিয়মিত শারীরচর্চা, যোগাসন করা।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান, মাদক সেবন বা ধূমপান না করা।

ছোট থেকে এই নিয়মগুলো মেনে চললে বয়সকালে অনেক জটিল রোগ থাবা বসাতে পারবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Osteoporosis Bone Health Health Tips

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy