Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Health

এপিলেপ্সিকে হারিয়ে ফেরা যায় সুস্থ জীবনে

নিয়মিত চিকিৎসা এবং কিছু সতর্কতা মেনে চললে এপিলেপ্সিকে পরাজিত করা সম্ভব। রইল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চলতি ভাষায় একে মৃগী রোগও বলা হয়। মস্তিষ্কের স্নায়ুজনিত সমস্যার কারণেই এই রোগ দেখা যায়। 

আরুণি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

এপিলেপ্সি আদতে একটি ‘নিউরোলজিক্যাল ডিজ়িজ়’। চলতি ভাষায় একে মৃগী রোগও বলা হয়। মস্তিষ্কের স্নায়ুজনিত সমস্যার কারণেই এই রোগ দেখা যায়।

কেন হয়

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জিনগত কারণে এই সমস্যা দেখা যায়। সদ্যোজাত থেকে শুরু করে বয়স্কদেরও এই রোগ হতে পারে। তবে কারণটা ভিন্ন। কনসালট্যান্ট নিউরোলজিস্ট ডা. জয়ন্ত রায়ের কথায়, ‘‘সদ্যোজাত বা প্রি-ম্যাচিয়োরড শিশুদের ক্ষেত্রে শরীরে ক্যালসিয়াম কম থাকলে বা হঠাৎ শরীরে সুগারের মাত্রা কমে গেলে এপিলেপ্সি দেখা দিতে পারে।’’ বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে থাকলে, টিউমর বা স্ট্রোকের কারণে এপিলেপ্সি হতে পারে। মানুষের মস্তিষ্কে অসংখ্য সূক্ষ্ম স্নায়ুর ‘সার্কিট’ থাকে, যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। সেই স্নায়ুর সার্কিটে অতিরিক্ত ‘স্পার্কিং’-এর কারণেই মৃগী রোগ দেখা দেয়। অনেকে একে মানসিক রোগ হিসেবে মনে করেন, যা সত্য নয়। শিশু চিকিৎসক ডা. অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘এপিলেপ্সির বিভিন্ন ভাগ রয়েছে এবং এক একটি ধরনের এপিলেপ্সি এক একটা বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে জিনগত কারণেই এই সমস্যা হয়েছে।’’

প্রকারভেদ

এই রোগ মোটামুটি দু’ধরনের হতে পারে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। ডা. জয়ন্ত রায়ের কথায়, ‘‘প্রাইমারি এপিলেপ্সিতে মস্তিষ্কের কোনও স্ট্রাকচারাল ড্যামেজ হয় না। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক্যাল ইমপাল্স জেনারেশনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যার কারণে এপিলেপ্সি হয়ে থাকে। অন্য দিকে মাথায় চোট পাওয়ার কারণে, মাথায় টিউমর থাকলে বা হঠাৎ শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে হতে পারে সেকেন্ডারি এপিলেপ্সি।’’

প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে বলা যায়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। খিঁচুনি হতে পারে। রোগীর শরীরে যতক্ষণ খিঁচুনি হবে, তাঁকে স্পর্শ না করাই ভাল। খেয়াল রাখুন যাতে খিঁচুনির সময়ে রোগী কোনও ভাবে চোট না পান। সম্ভব হলে তাঁকে মাটিতে শুইয়ে দিন, মাথার নীচে বালিশ জাতীয় নরম কিছু দিন। রোগীর পোশাকের পকেটে এমন কিছু রয়েছে কি না দেখে নিন, যা থেকে তিনি চোট পেতে পারেন। খিঁচুনির সময়ে পকেটে থাকা পেন দিয়েও তিনি নিজের শরীরে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি করতে পারেন। খিঁচুনির সময়ে রোগীর হাত-পা সঞ্চালনে বাধা দেবেন না। এতেও তিনি চোট পেতে পারেন। এমনকি হাড়ে চিড় আসতে পারে, ঘাড়ের হাড় সরে যেতে পারে।

সতর্কতা

যাঁদের মৃগীর সমস্যা রয়েছে, তাঁদের কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ডা. জয়ন্ত রায়ের কথায়, ‘‘অতিরিক্ত মদ্যপান, বেশি রাত জাগা, যে-কোনও ধরনের নেশার বস্তু থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলি এপিলেপ্সির মাত্রাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।’’ রোগী যে কোনও সময়ে এপিলেপ্সির শিকার হতে পারেন। তবে সব ক্ষেত্রেই যে তিনি মাটিতে পড়ে গিয়ে ছটফট করবেন— এমনটা না-ও হতে পারে। এপিলেপ্সির কারণে সাময়িক অন্যমনস্কতাও আসতে পারে। ডা. অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্কতা প্রয়োজন। তারা যেন দরজা লক করে বাথরুমে না যায়। পাশাপাশি আগুন এবং খুব উজ্জ্বল আলো থেকেও দূরে রাখতে হবে। শিশুরা যাতে খুব উত্তেজক ভিডিয়ো গেম না খেলে সেটাও নিশ্চিত করুন। এগুলি অনেক সময়ে এপিলেপ্সির ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।’’

চিকিৎসা

ডা. জয়ন্ত রায়ের কথায়, ‘‘রোগীর সমস্যাটি কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটা বোঝার জন্য এমআরআই এবং ইইজি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডায়াগনসিস প্রক্রিয়া শেষ হলে রোগের মাত্রা বুঝে রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয় এবং প্রায় ৮০ শতাংশ এপিলেপ্সি ওষুধের মাধ্যমেই নিরাময় সম্ভব।’’ বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধের ‘ডোজ়’ বিভিন্ন হয়ে থাকে এবং চিকিৎসা কত দিন চলবে, সেটাও নির্ভর করে রোগীর উপরে। কোনও রোগীর ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের চিকিৎসাতেই রোগের উপশম সম্ভব। আবার পরিস্থিতি ভেদে চিকিৎসা চার থেকে পাঁচ বছরও চলতে পারে। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে সারা জীবন ওষুধ খেতে হচ্ছে, এমন উদাহরণও রয়েছে। ‘‘দীর্ঘ চিকিৎসার পরেও রোগ নিয়ন্ত্রণে না এলে, বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা দেখে নেন, মস্তিষ্কের কোন অংশের স্নায়ুর অস্থিরতার কারণে সমস্যা হচ্ছে। এর পর সম্ভব হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সেই নির্দিষ্ট অংশের স্নায়ুগুলিকে বাদ দেওয়া হয়, যাতে রোগী সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেন।’’ বললেন ডা. জয়ন্ত রায়।

মনোবলই আসল

মৃগী রোগকে জয় করার সেরা উপায় হল মনোবল বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে রোগীর পরিবারের সদস্যদের সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে। এই রোগকে হারিয়েও যে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব— এই ধরনের ‘ইতিবাচক’ বার্তা রোগীকে দেওয়া দরকার। রোগীকে বোঝাতে হবে, মনের জোর রাখলে এই রোগকে হারানো যেতে পারে। তাই রোগীকে মনোবল জুগিয়ে যেতে হবে। তার সঙ্গেই চলবে চিকিৎসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health epilepsy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE