Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হাঁটু নিয়ে হঠকারিতা নয়

হাঁটুব্যথায় নাজেহাল জীবন। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পােবন কী ভাবে? জেনে নিন

হাঁটুর যত্নে অবহেলা নয়।

হাঁটুর যত্নে অবহেলা নয়।

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

পঁয়তাল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই হাঁটুর ব্যথায় নাজেহাল সাঁঝেলি। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। ধরেই নিয়েছিলেন, যেহেতু তাঁর মা-ঠাকুমা একটা বয়সের পরে হাঁটুব্যথায় কষ্ট পেয়েছেন, তাই তিনিও পার পাবেন না। সুতরাং বয়স হলে ডাক্তার দেখানো যাবেখন। এটাই অধিকাংশ নারীর চিন্তার প্রতিফলন। আর এখানেই ভুল করে ফেলেন তাঁরা।

অথচ ‘হাঁটু’ এই ছোট্ট শব্দটির উপরে নির্ভর করে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকা, হাঁটা-চলা, শোয়া-বসা। সহজ করে বললে, হাঁটুর জয়েন্ট অনেকটা দরজার কবজার মতো। দরজার কবজার তো একটি লক থাকে, কিন্তু হাঁটুর কবজার তিনটে লক— ফিমার (কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত পায়ের হাড়), টিবিয়া (হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পায়ের হাড়) এবং এই দুইয়ের মাঝে থাকে কার্টিলেজ ও মালাইচাকি। পাতলা ফাইবার দিয়ে তৈরি কার্টিলেজ স্নায়ুহীন। হাঁটুর জয়েন্টে এটা অনেকটা কুশনের মতো কাজ করে। কার্টিলেজ নষ্ট হয়ে গেলে ফিমার ও টিবিয়ার মধ্যে সরাসরি ঘষা লাগে। শুরু হয় যন্ত্রণা।

ব্যথার কারণ: বাত বা আর্থ্রাইটিস, চোট, ইনফেকশন, রক্তে শর্করা ও ইউরিক অ্যাসিডের বাড়বাড়ন্ত... বিভিন্ন কারণে কার্টিলেজ নষ্ট হয়।

বাত বা আর্থ্রাইটিস প্রায় একশো রকমের। তার মধ্যে কার্টিলেজ ক্ষতি হয় অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের জন্য। এটি বংশগত কারণেও হয়। কিন্তু ওবেসিটি, গাউট, ডায়াবিটিস, যক্ষা, অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড, হরমোনের হেরফের এবং পুরনো আঘাতের জন্যও অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শুধু মহিলারা নন, পুরুষরাও হাঁটুর ব্যথায় কাবু হয়ে পড়েন। পরিসংখ্যান বলছে, মোটামুটি ষাট বছরের পরে পুরুষদের এই সমস্যা শুরু হয়। কিন্তু মহিলারা হাঁটুর সমস্যায় আক্রান্ত হন পঁয়তাল্লিশের পর থেকেই। মেনোপজ়ের কারণে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমতে থাকে। ফলে হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-র পরিমাণ কমে যায়। পরিণাম— হাড়ের ক্ষয়বৃদ্ধি এবং জয়েন্টের স্থিতিস্থাপকতার হ্রাস।

কারণ যা-ই হোক না কেন, এই হাঁটুর ব্যথা অধিকাংশ সময়েই এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছন্দপতন ঘটে। অনেকেই মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গাদা গাদা পেন কিলার খেয়ে ফেলেন। যা যকৃতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এই ধরনের ওষুধে ব্যথা সাময়িক ভাবে কমলেও আদপে সমস্যা বাড়তেই থাকে। অথচ ক’টি কথা মাথায় রাখলে এই ব্যথার উপশম মেলে।

ওজন কমাতে হবে: যন্ত্রণা আটকানোর জন্য অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুষম আহার ও ব্যায়াম। যাঁদের ইতিমধ্যেই হাঁটুর সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছে, তাঁরা জিমে যাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পায়ের ব্যায়াম : হাঁটুর ব্যথায় ফাঁকি না দিয়ে করতে হবে পায়ের ব্যায়াম। তার মধ্যে অবশ্যই স্ট্রেচিং। পা টান করে হাঁটু এক বার ফ্লেক্সিবল করে ছাড়তে হবে, আবার শক্ত করে ধরতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বা অফিসে কাজ করার ফাঁকে এই ভাবে স্ট্রেচিং করতেই পারেন। এ ছাড়া নিয়মিত চল্লিশ মিনিট হাঁটুন। অফিসে একটানা বসে না থেকে কাজের ফাঁকে নিজের আসন থেকে উঠে একটু হেঁটে আসুন। ইন্টারনেট দেখে বা বই পড়ে নয়, ব্যায়াম করার আগে পরামর্শ নিন চিকিৎসকের। নিয়মিত সাঁতার কাটলেও উপকার পাওয়া যায় হাঁটুর ব্যথায়।

পা মুড়ে বসা নয়: মাটিতে পা মুড়ে বসে কাজ করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে বেশি ওঠানামা না করা, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রান্না না করা, বাথরুমে কমোড ব্যবহার— এগুলো মাথায় গেঁথে নিন।

ভাল জুতো: হাঁটুর ব্যথার হ্রাস-বৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করে জুতোর উপরে। ব্যথার জন্য এখন বিভিন্ন ধরনের কমফর্ট শু পাওয়া যায়। এ ছাড়া পরতে পারেন ভাল কোম্পানির স্পোর্টস শু। এড়িয়ে যান শক্ত চামড়ার জুতো এবং হিলস। ছোট থেকেই জুতো সম্পর্কে সচেতন হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। প্রয়োজন না হলে হিলস না পরাই ভাল।

ডায়েট: শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ করতে রোজকার খাবারে থাকা উচিত ঘরে পাতা টক দই, সবুজ আনাজপাতি, মরসুমি ফল, ছোট মাছ, মুরগির মাংস, আমন্ড। যাদের গাউট বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে তাঁরা ডায়েট থেকে বাদ দিন পাল‌ং শাক, মসুর ডাল, কাঁচা টম্যাটো। মেথি, হলুদ, আদা যে কোনও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এর জন্য সারা রাত উষ্ণ জলে ভেজানো মেথির জল খালি পেটে খাওয়ার অভ্যেস করা যেতে পারে। এক কাপ জলে হলুদ ও আদা ফুটিয়ে অর্ধেক হয়ে এলে ঠান্ডা করে মধু দিয়ে খেতে পারেন। হাঁটুর ব্যথায় অ্যালকোহল এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

হাঁটু প্রতিস্থাপন: এটি অবশ্য একদম শেষ উপায়। কার্টিলেজ পুরোপুরি নষ্ট না হওয়া অবধি হাঁটু প্রতিস্থাপনের প্রশ্নই ওঠে না। যখন দুটো পা একেবারে বেঁকে যায় এবং অপারেশন করেও কার্টিলেজ উদ্ধার করা যায় না, তখনই হাঁটু প্রতিস্থাপন করতে হয়।

তাই সময় থাকতে থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চললে হাঁটুর যন্ত্রণা নিয়ে নাজেহাল হতে হয় না।

পরামর্শ: ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়

মডেল: ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায়

ছবি: অমিত দাস; মেকআপ: সৈকত নন্দী; পোশাক: ওয়েস্টসাইড, ক্যামাক স্ট্রিট; লোকেশন: লাহা বাড়ি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Tips Fitness Tips Knee Care Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE