রাত দশটায় ভিআইপি রো়ডে গাড়ির গতি কমিয়ে দিলেন চালক। নভেম্বরের গোড়াতেই যেন চাপ ধরে রয়েছে ধোঁয়াশা!
রাত ১২টার সিঁথির মোড়। ফাঁকা রাস্তায় দম নিতে হাঁফ ধরছে। কেউ কেউ খুকখুক করে কাশছেন। এলাকার বাতাস যেন ভারী হয়ে গিয়েছে!
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যও বলছে, কালীপুজোর সন্ধ্যা পেরোতেই বাতাসে হু-হু করে বাড়ছিল দূষণের মাত্রা। রাত বারোটা পেরনোর আগেই শহরের একাংশে তা উঠে গিয়েছিল সহনমাত্রার ছ’গুণ উপরে! রাত পেরিয়ে ভোর হলেও সেই দূষণের মাত্রা কিন্তু কমেনি। এবং এই দূষণের পিছনে আতসবাজিকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদেরা। শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা বলছেন, এই দূষণ থেকে হাঁপানি, শ্বাসনালীর রোগ হতে পারে। ফুসফুসে হতে পারে ক্যানসারও। ‘‘শব্দবাজির হানা মালুম হয়। কিন্তু আতসবাজির কুফল নীরব ঘাতকের মতো,’’ বলছেন এক চিকিৎসক।
পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, আতসবাজির মধ্যে গন্ধক, লোহাচুর, অ্যালুমিনিয়াম চুর, ক্যাডমিয়ামের মতো রাসায়নিক পুড়ে তৈরি হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়া এবং ভাসমান ধূলিকণা বাতাসে মেশে। পর্ষদ সূত্রের খবর, বাতাসে ধূলিকণার স্বাভাবিক গড় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০০। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে বিটি রোডে স্বয়ংক্রিয় দূষণমাপক যন্ত্রে ধরা পড়েছে, সন্ধ্যা ৭টায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ১২৫। রাত ৯টায় ৩৩৪ এবং রাত ১২টায় ৬৮১।
আতসবাজির দূষণ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন অনেকেই। লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা সুশান্ত ঘোষ মেয়ের সঙ্গে বাজি পোড়াচ্ছিলেন। রংমশালের ধোঁয়ায় তাঁর কাশি শুরু হয়। কয়েক মিনিটেই গলা ধরে গিয়েছিল। নিউ ব্যারাকপুরে বহুতলের ছাদে বাজি পোড়াচ্ছিলেন বাসিন্দারা। তুবড়ি, রংমশালের ধোঁয়ার অস্বস্তি এড়াতে নাকে রুমাল বেঁধেছিলেন ওই আবাসনের অনেকে।
চিকিৎসকেরা জানান, আতসবাজির ধোঁয়ায় প্রচুর সালফার ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড থাকে। এই সব বিষাক্ত ধোঁয়া ফুসফুসে চলে গেলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। হাঁপানি রোগীদের অবস্থা প্রাণান্তকর হয়ে উঠতে পারে। বক্ষরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এই ধরনের ধোঁয়া থেকে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষতির আশঙ্কা সব থেকে বেশি। সুস্থ লোকেরাও এই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কালীপুজো পেরোতেই এই ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।’’ কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সত্যজিৎ বসুর মতে, ‘হার্টের সমস্যা রয়েছে এমন রোগীর দেহে আতসবাজির বিষাক্ত ধোঁয়া ঢুকলে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।’’ কলকাতার চিকিৎসকদের একাংশের অভিজ্ঞতা বলছে, বুধবার সকাল থেকেই শ্বাসকষ্ট, কাশি নিয়ে রোগীরা ফোন করছেন।
বাতাসে এই দূষণ বৃদ্ধির পিছনে আবহাওয়ার মতিগতিও কিছুটা দায়ী। আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, শীত এগিয়ে আসায় বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তর ঠান্ডা হচ্ছে। তার ফলে ধূলিকণা বাতাসের নীচের স্তরে জমাট বাঁধে। এ সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাস থেকে ধূলিকণা সহজে দূর হয় না। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘এই দূষণ বহু দিন ধরে থাকে। তা একটা বড় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এর ক্ষতি শব্দবাজির থেকেও বেশি।’’
পর্ষদকর্তারা বলছেন, সচেতনতা বাড়ায় শব্দবাজির দাপট অনেক কমেছে। এ বার আতসবাজি নিয়েও সচেতনতা দরকার। তা না হলে আলোর উৎসবের এই দূষণ কমবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy