দোলের দিন বাঙালি কী খায়? ভাবতে বসলে পাল্টা প্রশ্ন আসবে, কী খায় না! খাদ্যরসিক এই জাতি দোলের দিন মাংস-ভাত থেকে শুরু করে দানাদার, মালপোয়া, মঠ-ফুটকড়াই, ঠান্ডাই, গুজিয়া কোনও জিনিসই চেখে দেখতে ভোলে না। নানা প্রদেশের খাবার আপন করে নিতে বাঙালির মতো আর কেউ পারে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাই এ বছর দোলে আনন্দবাজার ডট কম খুঁজে দেখল কিছু অল্প চেনা আর কিছু অচেনা প্রাদেশিক দোলের খাবার।

ছবি: সংগৃহীত
রাঙা ডিম
দোল মানে রঙিন ব্যাপার। খাবারেই বা রঙের ছোঁয়া থাকবে না কেন! অসমে তাই দোলের দিন খাওয়া হয়। রাঙা ডিম। নামেই বোঝা যাচ্ছে, খাবারটি ডিম এবং সেই ডিম লাল রঙের। কিন্তু ডিম লাল হয় কী করে! সেখানেই আসল মজা। সেদ্ধ ডিমকে প্রথমে ভেজে তার পরে ঝাল ঝাল লাল মশলায় মাখিয়ে নেওয়া হয়। তাতেই সাদা ডিম রং বদলে রাঙা হয়।
অসমের ঐতিহ্যবাহী ওই খাবার খাওয়া হয় দোলের সময়েই। সাধারণত রাঙা ডিমের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় পাঁচফোড়ন, পেঁয়াজ-আদা-রসুন বাটা এবং লঙ্কা দিয়ে কষানো আলুভাজা।

ছবি: সংগৃহীত
গুলগুলে
দোলের আবিরকে হিন্দিতে বলে 'গুলাল'। সেই নামের সঙ্গে মিল রয়েছে উত্তর ভারতের ঘিয়ে ভাজা সোনালি রঙের এই মিষ্টির। আটা, কলা, গুড়, মৌরি, এলাচ দিয়ে তৈরি। দেখতে ছোট ছোট সোনালি বলের মতো। বাইরে যতটা মুচমুচে ভিতরে ততটাই নরম। বাঙালিদের তালের বড়ার মাপের। তাই আনায়াসে ৩-৪টি মুখে চালান করে দেওয়া যায়।
গুলগুলের জন্ম উত্তরপ্রেদেশে। তবে একে খানিকটা বাঙালির প্রিয় মিষ্টি মালপোয়ার ছোট সংস্করণও বলা যায়।

ছবি: সংগৃহীত
নমক পারে
নামটা অন্য রকম হতে পারে। খাবার কিন্তু বাঙালিদের খুব বেশি চেনা। দুর্গাপুজো, ভাইফোঁটা, দীপাবলি যে কোনও অনুষ্ঠানে বা বিনা অনুষ্ঠানেও বাংলার মানুষ ওই নোনতা খাবার দিয়ে মুখ চালাতে ভালবাসেন। মূলত উত্তর ভারতের এই থাবার দেখতে হুবহু বাংলার নিমকির মতো। তবে স্বাদে সামান্য আলাদা। বাংলার নিমকি তৈরি হয় আটা, কালোজিরে দিয়ে। কেউ কেউ জোয়ানও দেন। নমক পারেতে তার পাশাপাশি গোলমরিচ, হিং এবং সুজিও পড়ে। অর্থাৎ বাংলার নিমকির থেকে আরও একটু বেশি মশলাদার উত্তর ভারতীয় ওই নোনতা খাবার।
দোলের দিনে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে মুচমুচে স্ন্যাকস হিসাবেই নমক পারে খাবার চল আছে। সাধারণত ঠান্ডাই এবং চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। কেউ কেউ ধনেপাতা এবং পুদিনা পাতার চাটনি দিয়েও খান।

ছবি: সংগৃহীত
পুরন পোলি
মহারাষ্ট্রের এই খাবার ছাড়া মরাঠি হোলি অসম্পূর্ণ। দেখতে পরোটার মতো তবে স্বাদ কিছুটা মিষ্টির দিকে। আটার লেচির মধ্যে ছোলার ডাল, গুড়, এলাচ এবং জায়ফল দিয়ে তৈরি মিশ্রণ ভরে বেলে নিয়ে ঘি দিয়ে ভাজা হয় পুরন পোলি। দোলে তো বটেই, মরাঠিরা তাঁদের যে কোনও বড় উৎসবেও পুরন পোলি বানান।
পুরন পোলি শুধু ঘি দিয়েও খাওয়া যায়। তবে দোলের সময় মহারাষ্ট্রে গরম দুধ, বাসুন্দি নামের দুধ থেকে তৈরি এক মিষ্টির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। কেউ কেউ আবার মরাঠি খাবার আমটি ডালের সঙ্গেও পুরন পোলি খেতে পছন্দ করেন।

ছবি: সংগৃহীত
ধুসকা
ধুসকা ঝাড়খণ্ড এবং বিহারে খাওয়া হয় দোলের সময়। চাল এবং ডাল বেটে তাতে ধনে, জিরে, লঙ্কা দিয়ে ডুবো তেলে ভেজে তৈরি করা হয় ধুসকা। দেখতে খানিকটা ছোট ছোট ফুলকো লুচির মতো, তবে খেতে দারুণ সুস্বাদু। লুচির সঙ্গে তরকারি বা মিষ্টির দরকার হয়। ধুসকা একাই একশো। সোনালি রঙের তেলে ভাজা এই নোনতা খাবার বিহার-ঝাড়খণ্ডে শুধু দোলে নয়, অন্য উৎসবের খাবার হিসাবেও জনপ্রিয়।
ধুসকা অবশ্য তরকারি দিয়েও খাওয়া যেতে পারে। ঝাড়খণ্ডে ধুসকা পরিবেশন করা হয় কাবলি ছোলার ঘুগনি কিংবা আলুর তরকারি দিয়ে। পুদিনা কিংবা তেঁতুলের চাটনি দিয়েও খেতে ভাল লাগে ধুসকা।