সাধারণত সেডেন্টারি জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষদের দিনে কমবেশি ১৮০০ থেকে ২২০০ কিলোক্যালরি দরকার হয়। তার চেয়ে বেশি ক্যালরি ইনটেক হলেই বেড়ে যায় বডি মাস, যে সমস্যা খুব পরিচিত। তাই বয়স, ওজন, খাদ্যাভ্যাস ও কাজের ধরন অনুযায়ী এনার্জির প্রয়োজন কত, সেই সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়ার সময়ে পুষ্টিবিদরা সেই ব্যক্তির বিএমআর নির্ণয় করে থাকেন।
বডি মাস ইনডেক্স
শরীরে মেদের সঞ্চয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি না কম, সেটা বোঝার জন্য দরকার বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই ক্যালকুলেশন। খুব সহজেই এটি নির্ধারণ করা যায়। দেহের ওজনকে উচ্চতা (স্কোয়্যার মিটারে) দিয়ে ভাগ করলেই বেরিয়ে যায় বিএমআই। সাধারণত ১৮-২০ বছর বয়সের পর থেকেই বিএমআই ক্যালকুলেট করা হয়ে থাকে, কারণ তার আগে পর্যন্ত উচ্চতা বাড়ে। একটা সময়ের পরে উচ্চতা স্থির হয়ে গেলে ওজনের কমবেশি অনুযায়ী বিএমআই-এর হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের বিএমআই ১৮ থেকে ২৪-এর মধ্যে থাকলে স্বাভাবিক। ২৫ থেকে ২৯-এর মধ্যে থাকলে ওভারওয়েট। ৩০-এর উপরে গেলে ওবিস। আবার ১৮-র নীচে নেমে গেলে তাকে আন্ডারওয়েট
বলা হবে।
বডি বিল্ডার বা খেলোয়াড়দের যেমন চর্বি কম, মাংসপেশির ওজন বেশি থাকে। কোনও খেলোয়াড়ের মতো একই বিএমআই সম্পন্ন অন্য এক ব্যক্তি কিন্তু ওভারওয়েট হতে পারেন, কারণ তাঁর ওজন মূলত অতিরিক্ত চর্বির। দৈহিক পরিশ্রম বেশি করেন বলে খেলোয়াড় বা কুস্তিগীরদের ক্যালরির প্রয়োজনীয়তা বেশি, তাই বিপাক হার বা বিএমআরও বেশি।
ব্যায়াম ও বিপাক
চেহারা রোগা বা স্থূলকায় যেমনই হোক, ঠিক বিপাক হার ও উচ্চতা অনুযায়ী বডি মাস ইনডেক্স যথাযথ রাখা জরুরি। তার জন্য ডায়েটে নিয়ন্ত্রণ এবং এক্সারসাইজ়— দুইয়েরই প্রয়োজনা আছে, জানালেন
ডা. অরুণাংশু তালুকদার। ‘‘এখন বিএমআই মাপার চেয়ে চিকিৎসকরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ওয়েস্ট-হিপ রেশিয়ো পরিমাপে। যার কোমর যত সরু, তার পেটে তত কম চর্বি জমে। অর্থাৎ লিভার বা খাদ্যনালিতেও চর্বি কম জমে এবং মেদজনিত অসুখের সম্ভাবনাও কমে। কোমরের মাপ যা হবে, তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি হবে হিপ— এটাই আদর্শ অনুপাত। হাতে-পায়ে চর্বি থাকলে শরীরের পক্ষে ততটা ক্ষতিকর নয়, যতটা পেটে জমলে। পেট, কোমরের চর্বি ঝরানো আবশ্যক,’’ বললেন ডা. তালুকদার।
ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম
অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টি— দুই ক্ষেত্রেই পেটের অংশ স্ফীত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। যে কোনও ব্যায়ামই করুন, তাতে যেন ঘাম ঝরে। তবেই তা ফ্যাট বার্নের সহায়ক হবে। বিএমআই ঠিক রাখার জন্য যে কোনও ধরনের কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ় কার্যকর। সাধারণ দৌড়নো, সাঁতার, সাইক্লিং ছাড়াও অ্যারোবিক্স, পিলাটেস, জ়ুম্বা করতে পারেন। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস পরামর্শ দিলেন, ‘‘সারা দিনে ঈষদুষ্ণ গরম জল খান মাঝে মাঝেই। বিশেষ করে এক্সারসাইজ় শুরুর খানিকক্ষণ আগে। তার পরে জগিং দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে জাম্পিং জ্যাক, কেটল বেল ইত্যাদি করে শেষে রোড রানিং, সাইক্লিং, সুইমিংয়ের মতো হোল কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ় করুন।’’ যাঁদের মেদ হ্রাসবৃদ্ধিজনিত সমস্যা নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে বিএমআই মেনটেন করার জন্য স্ট্রেংদেনিং কোর এক্সারসাইজ় ও টোনিং এক্সারসাইজ়ের পরামর্শ দিলেন তিনি।
বিপাক হার কমে গেলে আলস্য ঘিরে ধরে। অন্য দিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড, সিস্টের সমস্যা বেশি করে দেখা দেয়। তাই উচ্চতা অনুযায়ী বডি মাস রাখুন নিজের নিয়ন্ত্রণে। তবেই সুস্থ থাকবে শরীর।