Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তিন হাসপাতাল ঘুরে জুটল শুধু হয়রানি

সংবিধানে স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ মানুষের নাগালে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪৫
Share: Save:

সংবিধানে স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ মানুষের নাগালে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও। কিন্তু কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে পরিষেবা পেতে এক সাধারণ রোগীকে এখনও কতটা হেনস্থা হতে হয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ট্রাম কোম্পানির এক শ্রমিকের অভিজ্ঞতা।

কিছু দিন ধরে হাত-পা অবশ হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বছর পঞ্চাশের ওই সরকারি চাকুরে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিন সরকারি হাসপাতালের (দু’টি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল) আউটডোরে টানা কয়েক দিনের হয়রানির বিবরণ দিয়ে ২ অগস্ট স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। একটি মেডিক্যাল কলেজে তাঁর শারীরিক পরীক্ষার ডেট মিলেছে এক বছর তিন মাস পরে! অর্থাৎ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। ওই ব্যক্তির প্রশ্ন, ‘‘পরীক্ষা হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকব তো?’’

বেহালার বাসিন্দা ওই শ্রমিক জানান, স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ২০ জুলাই ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি’-তে যান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অফিসে ছুটি নিয়ে সকাল ৮টায় লাইন দিয়ে টিকিট পাই সাড়ে ১০টায়। নিউরোমেডিসিন আউটডোরে প্রায় ২৫০ জনের লাইন। অপেক্ষা করতে করতে কেউ অজ্ঞান হচ্ছিলেন, কারও মাথা ঘুরে যাচ্ছিল, কেউ ঘামছিলেন, কারও বা হাত-পা কাঁপছিল। এরই মধ্যে ষণ্ডামার্কা কিছু ছেলে ১০০ টাকা করে নিয়ে কিছু রোগীকে লাইন ভেঙে ঢুকিয়ে দিচ্ছিল।’’ শেষমেশ বিকেল ৪টেয় চিকিৎসকের কাছে পৌঁছলে টিকিটে ‘রেফার টু রিউম্যাটোলজি’ লিখে তাঁকে পিজিতে যেতে বলা হয় বলে অভিযোগ।

২২ জুলাই ফের ছুটি নিয়ে পিজিতে যান তিনি। অভিযোগ, এখানেও ডাক্তার দেখাতে পারেন পৌনে চারটে নাগাদ। কিন্তু রিউম্যাটোলজির চিকিৎসকেরা জানান, এটা নিউরোমেডিসিনের ব্যাপার! তা হলে বাঙুরের নিউরোমেডিসিন আউটডোর থেকে কেন সেখানে রেফার করা হল, তার উত্তর মেলেনি।

শেষে ২৮ জুলাই ওই শ্রমিক যান আরজিকরে। সেখানেও বিকেল ৪টে পর্যন্ত লাইন। নিউরোমেডিসিন আউটডোরের চিকিৎসকেরা তাঁকে ‘নার্ভ কন্ডাকশন ভেলোসিটি’ পরীক্ষার জন্য ফিজিওলজি বিভাগে পাঠালে যন্ত্র কম থাকার যুক্তিতে তারা পরীক্ষার তারিখ দেয় ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬।

হাসপাতালে ওই পরীক্ষায় লাগে ১৫০ টাকার মতো। বাইরে খরচ ১৫০০-১৮০০ টাকা, যা এখনও জোগাড় করতে পারেননি ওই শ্রমিক। স্বাস্থ্য দফতরকে লেখা চিঠিতে তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘‘পরিষেবা পেতে সাধারণ রোগীদের কি এই পাহাড় প্রমাণ দুর্দশাই ভবিতব্য?’ তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যের অধিকার কি সত্যিই এ ভাবে পাওয়া সম্ভব?’’

রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘বারবার ডাক্তারদের মানবিক হতে বলা হচ্ছে। এর পরেও এমন হলে কিছু বলার নেই। এটা দায়বদ্ধতা ও বিবেকের ব্যাপার। ভাল ভাবে বলে বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও অনেকের সেই বোধ আসছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE