প্রতীকী ছবি
মুখ, জিভ থেকে গলা, এমনকি স্বরযন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। পুরুষদের মধ্যে মাথা ও গলার ক্যানসারের নিরিখে ভারত প্রথমে স্থানে উঠে এসেছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থান। এই প্রবণতা আগামী দিনে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন শহরের ক্যানসার শল্য চিকিৎসকেরা। আজ, ২৭ জুলাই বিশ্ব ‘হেড অ্যান্ড নেক’ ক্যানসার দিবসে তাঁরা জানাচ্ছেন, মাথা ও গলার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে গেলে সর্বপ্রথম দরকার সচেতনতা। একই সঙ্গে তামাকের ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের কথাও বলছেন তাঁরা।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মুখ, গলা, স্বরযন্ত্র, থাইরয়েড গ্রন্থি, লালাগ্রন্থি, নাক ও নাসিকা গহ্বর, মুখ গহ্বরের শেষ প্রান্ত, খাদ্যনালির উপরি ভাগ, খুলির নীচের অংশের কর্কট রোগ ‘হেড অ্যান্ড নেক’ ক্যানসারের মধ্যে পড়ে। যার মধ্যে বেশির ভাগ মানুষকে মুখ, স্বরযন্ত্র ও থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মুখের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ঠোঁট, জিভ, মাড়ি, চোয়াল, জিভের নীচের অংশে অনেক সময়ই ঘা হলেও তা শুকোতে চায় না। অথবা গজিয়ে ওঠেটিউমারের মতো মাংসপিণ্ড। দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায়। জিভে সাদা বা লাল ছোপ দেখা যায়। কিন্তু মানুষ সেগুলিকে উপেক্ষা করেন। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “৯১ শতাংশ মুখের ক্যানসারের সঙ্গে তামাক ব্যবহারের সম্পর্ক রয়েছে। তামাক সেবন যেমন ক্ষতিকর, তেমনই তামাক ও সুপারিজাত দ্রব্য চিবোনোর ফলে মুখের ভিতরে ‘সাব মিউকাস ফাইব্রোসিস’ হয়। তাতে মুখের হাঁ ছোট হয়ে যায়। খুলতে ব্যথা করে।” গৌতমবাবু আরও জানাচ্ছেন, রাজ্যে প্রতি বছর এক লক্ষ আট হাজার জন নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০২৫-এর মধ্যে সেই সংখ্যা এক লক্ষ কুড়ি হাজারের বেশি হবে। নতুন সংখ্যার থেকে তিন-চার গুণ বেশি থাকে পুরনো আক্রান্ত। আবার বছরে মোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশ হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের বলে জানাচ্ছেন তিনি।
২০২১-এ রাজ্যে আইসিএমআর-এর করা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, তামাক ব্যবহারের ফলে এ রাজ্যের ৪৬.৭ শতাংশ পুরুষ এবং ১৫.৪ শতাংশ মহিলা ক্যানসারে আক্রান্ত। তার মধ্যে পুরুষদের ক্ষেত্রে জিভ, মুখ ও স্বরযন্ত্রের ক্যানসার দেখা যায় যথাক্রমে ১১, ১৪ এবং ৭ শতাংশ। আবার মহিলাদের ক্ষেত্রে জিভের ১৪ শতাংশ, মুখের ১৯ শতাংশ ও স্বরযন্ত্রের ৫ শতাংশ ক্যানসার দেখা যায়। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, “ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার, প্রতিনিয়ত মদ্যপান, অত্যধিক সুপারির ব্যবহার মুখ ও স্বরযন্ত্রের ক্যানসারের বড় কারণ। ভারতে মোট আক্রান্তের ৪০ শতাংশের নেপথ্যে রয়েছে তামাক। তাই তামাক নিষিদ্ধ করার জন্য কড়া আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। তবে থাইরয়েড ও লালাগ্রন্থির ক্যানসারের কারণ সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।” তিনি জানাচ্ছেন, এখন শহরে মুখ, গলার ক্যানসারে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়েছে। হচ্ছে রোবোটিক সার্জারিও।
কিন্তু তামাকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ক্যানসারের ৭০ শতাংশ তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ে বলেই জানাচ্ছেন এসএসকেএম হাসপাতালের হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের ক্যানসার শল্য চিকিৎসক হর্ষ ধর। তাঁর কথায়, “ওই সমস্ত রোগীরা প্রথম দিকে চিকিৎসার বিষয়ে ভুল পথ অবলম্বন করেন। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। না হলে ওই স্তরে ক্যানসার পৌঁছে যাওয়ায় বহু রোগীর প্রাণের ঝুঁকি তৈরি হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy