দুই থেকে তিন কামরার ফ্ল্যাটেই এখন দিন কাটে বহু পরিবারের। সেখানেও যে ঘরগুলি আয়তনে বেশ বড় হয়, তা নয়। তার উপরে পরিবারে দুই সন্তান থাকলে তাদেরও ঘরের ব্যবস্থা করতে হয়।
একই ঘরে দু’জনের থাকার ব্যবস্থা করতে হলে, কী ভাবে সেই জায়গাটি সাজাবেন। নান্দনিক সৌন্দর্যের চেয়েও এ ক্ষেত্রে একই ঘরে দু’জনের প্রয়োজনের জিনিস রাখা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। দু’জনের পৃথক বিছানা, বইখাতা রাখার তাক, টেবিল, ওয়ার্ড্রোব সব কিছুই কি এক ঘরে আঁটানো যায়? স্থানাভাব যাতে সমস্যার কারণ না হয়, সে জন্য অন্দরসজ্জার নতুন নতুন ভাবনা তৈরি হচ্ছে। উপযুক্ত পরিকল্পনাই এমন সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে মনে করছেন অন্দরসজ্জা শিল্পীরা। জেনে নিন কী কী ভাবে ঘর সাজানো যেতে পারে?
দুই সন্তানের জন্য এ ভাবেও সাজানো যায় ঘর। ছবি: সংগৃহীত।
১। ঘরের এক পাশে একটু উঁচুতে এক জনের শোয়ার মতো খাট তৈরি করান। এখন খাট এমন ভাবে তৈরি করা যায়, যার নীচেও একটি অংশ থাকে। যেটি টান দিলে খুলে আসে এবং পৃথক বিছানা তৈরি হয়। ফলে একটি বিছানার জায়গাতেই দু’টি শয্যা হতে পারে। বিছানা যে দেওয়ালে থাকছে তার উল্টো দিকের দেওয়ালটিতে জানলা না রেখে বড় একটি ওয়ার্ড্রোব তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। শাটার দেওয়া দরজা থাকলে, কিন্তু বেশ কিছুটা জায়গা বাঁচানো যায়। বিশেষত ঘর যদি ছোট হয়। ওয়ার্ড্রোব যদি দুই ভাগে ভাগ করা থাকে, তা হলে দুই সন্তানের পোশাক আলাদা ভাবে রাখার সুবিধা হবে। ওয়ার্ড্রোবের এক অংশে আয়না লাগিয়ে দিলেও সাজগোজের সুবিধা হবে।
সঠিক পরিকল্পনা থাকলে ছোট ঘরেও রাখা যায় অনেককিছুই। ছবি: সংগৃহীত।
পাশাপাশি দরকার হয় তাদের টেবিল, বই রাখার তাক, ল্যাপটপ রাখার জায়গা। ঘরের মধ্যে কোনও একটি দেওয়াল এই প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে। বড় জায়গা থাকলে লম্বা করে দেওয়ালের সঙ্গে দেরাজ যুক্ত টেবিল তৈরি করিয়ে নিন। দু'জন পাশাপাশি চেয়ারে বসে পড়াশোনা করতে পারবে। দেওয়ালের উপরের অংশে সঠিক ভাবে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে টেবিলের অংশ আলোকিত হয়। দেওয়ালের উপরের অংশে তাক তৈরি করাতে পারেন, যাতে বইখাতা এবং আনুষঙ্গিক জিনিস রাখা যায়।
২। সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দু’জনের ব্যক্তিগত পরিসরের দরকার হতে পারে। ভাবা যায় অন্য ভাবে। অনেকেই ভাবেন একটির উপরে আর একটি খাট তৈরি করলে স্বল্প জায়গায় দু’জনের বিছানা তৈরি হবে। কিন্তু সন্তান যখন বড় হয়ে যাবে, তখন উপরের খাটে বসতে মাথা ঠুকে যাবে। তার চেয়ে বরং অন্য ভাবে ভাবা দরকার। ঘরের একাংশে পুরোটা জুড়ে দু’টি খাট বানান। সেটি খুব বেশি উঁচু হবে না। খাটের নীচে দেরাজ থাকবে। ব্যক্তিগত পরিসর রক্ষার জন্য ওয়ারড্রোব তৈরি করতে হবে দুই খাটের মাঝে। দুই দিকেই সমান নকশা এমন ভাবে থাকবে যাতে মোবাইল, ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার, বইখাতা, বালিশ রাখার জায়গা থাকে। নকশা করতে হবে মাথা খাটিয়ে। মাঝে কিছুটা সাধারণ জায়গা থাকে জানলার মতো। যে কাচটি চাইলে তুলে দেওয়া যাবে, প্রয়োজনে নামানোও যাবে। আবার চাইলে সেই অংশটি টেবিলের মতো দু’জন ব্যবহার করতেও পারবে।
এ ভাবে সাজালে দু’জনেরই ব্যক্তি পরিসর বজায় থাকবে। ছবি: সংগৃহীত।
ঘরের বাকি অংশে জানলা এবং দেওয়াল কাজে লাগিয়ে তৈরি করতে পারেন পড়ার টেবিল, বই রাখার তাক। জানলার নীচের অংশে ইংরেজি এল অক্ষরের মতো দেওয়াল সংলগ্ন টেবিল তৈরি করান। তার নীচে থাকবে ছোট ছোট দেরাজ। যেখানে প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা যাবে। দেওয়ালের উপরের অংশে বইপত্র রাখার তাক তৈরি করে দিতে পারেন। এমন ঘরে জামাকাপড় রাখার জন্য ছোট জায়গাই মিলবে।
৩। ঘরের দু’পাশে এক শয্যার খাট রেখে মাঝের চওড়া অংশে একটু বড় করে পড়ার টেবিল বানিয়ে নিতে পারেন। টেবিল সংলগ্ন স্বল্প এবং মাঝারি উচ্চতার দেরাজ জিনিসপত্র রাখার জন্য জরুরি। টেবিলের উপরের অংশের দেওয়ালে তাক বানিয়ে নিতে পারেন। যে দিকে খাট থাকছে, তার উল্টো দিকের দেওয়ালটি ওয়ার্ড্রোব রাখার জন্য ব্যবহার করা যায়।
এই ভাবেও ঘর সাজানো যায়। ছবি: সংগৃহীত।
পুরোটাই নির্ভর করবে কোথায় জানলা রয়েছে এবং ঘরটি কত বড়, তার উপর। আবার দু’টি খাট শুধু একটি ছোট্ট টেবিল দিয়ে বিভাজন করে রাখতে পারেন। এতে ঘরের অন্য প্রান্তে যে জায়গা পাওয়া যাবে, সেখানেও ওয়ার্ড্রোব এবং পড়ার টেবিল রাখতে পারেন। ওয়ার্ড্রোবের মাঝের অংশটি ড্রেসিং টেবিলের মতো করৈ তৈরি করানো যায়। এতেও জায়গা বাঁচে।