বাড়ির দেওয়ালের যদি সৌন্দর্য কমে যায়, তা হলে যত দামি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান না কেন, শ্রী ফেরে না। গৃহসজ্জার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল দেওয়াল। আর তাকেই অবহেলা করলে সজ্জার দফারফা হবে। বাড়ির দেওয়াল যদি ছত্রাকের বাসস্থান হয়, তা হলে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিন। কারণ তা কেবল অন্দরসজ্জার জন্য নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক। ছত্রাক যদি বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায়, তা হলে দ্রুত দেওয়াল ছাড়িয়ে সিলিং পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তার ফলে বড় বড় কালো দাগ পড়ে সর্বত্র। ছত্রাক বা শ্যাওলা কিন্তু দেওয়ালের উপাদানগুলি পুষ্টির জন্য ব্যবহার করে।
ঘরে ছত্রাক বা শ্যাওলার উপস্থিতি কেন ক্ষতিকারক?
ছত্রাক পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আণুবীক্ষণিক স্পোর বা কণাগুলি ছেড়ে দেয়, যা বাতাসের সঙ্গে অন্য জায়গায় বাহিত হয়। কিছু ছত্রাকের প্রজাতির ক্ষেত্রে এই স্পোরগুলিতে মাইকোটক্সিন এবং অ্যালার্জেন থাকে। সেগুলি স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। ঘরে ছত্রাক থাকলে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং ছোটদের স্বাস্থ্যে গুরুতর সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ঘরের কোন পরিবেশ ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত?
ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য আর্দ্রতার একটি উপযুক্ত উৎসের প্রয়োজন কেবল। আর তাই বেশির ভাগ বাড়িতে দেওয়ালের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জমা হয়। রান্না, স্নান, ঘরের ভিতরে কাপড় শুকোনো, এমনকি নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো কাজগুলি থেকেও বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা তৈরি হয়। ঘরে যদি পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল না হয়, তা হলে আয়না, জানলার সিল এবং দেওয়ালের মতো জায়গায় শ্যাওলা তৈরি হয়।
বেশির ভাগ বাড়িতে দেওয়ালের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জমা হয় ছত্রাক। ছবি: সংগৃহীত।
শ্যাওলা থেকে কী ভাবে মুক্তি পাওয়া যায়?
১. শ্যাওলা সাময়িক ভাবে দেওয়াল থেকে পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে রোদচশমা, গ্লাভস এবং নাক ও মুখ ঢেকে রাখার জন্য মাস্ক ব্যবহার করে স্পোর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে আগে। আপনি যে ঘরটি পরিষ্কার করছেন, তার দরজা বন্ধ রাখুন যাতে ছত্রাকের কণাগুলি ঘরের অন্যত্র যেতে না পারে। তবে বাতাস চলাচলের জন্য জানলা খোলা রাখুন। ঘরের যে যে জিনিসে শ্যাওলা ধরে গিয়েছে, তা সরানোর জন্য একটি ব্যাগ রাখুন সঙ্গে। সেগুলিকে আলাদা করে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। যেগুলি আর ব্যবহারের যোগ্য নয়, সেগুলি ফেলে দেবেন। এ বার একটি বালতিতে জল এবং মৃদু ডিটারজেন্ট অথবা হাত ধোয়ার তরল সাবান মিশিয়ে ফেলুন। সাবান জলে নরম কাপড় ডুবিয়ে দেওয়াল থেকে শ্যাওলার ছোপগুলিতে বুলিয়ে নিন। তোলার সময়ে বেশি ঘষবেন না, তাতে কণাগুলি চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শেষে শুকনো কাপড় দিয়ে দেওয়ালটিকে শুকিয়ে নিন। কাপড়গুলিকে ব্যাগে ভরে ফেলতে হবে সঙ্গে সঙ্গে। ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য আর্দ্রতা জরুরি, সে কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ঘরে কোন কোন জায়গা ভিজে, বা তার উৎস কী, সেগুলি খুঁজে বের করতে হবে।
২. অন্য পদ্ধতিতেও চেষ্টা করা যেতে পারে। ব্লিচিং পাউডার এবং জলের মিশ্রণ ছত্রাক মোকাবিলার জন্য কার্যকর হতে পারে। এক ভাগ ব্লিচিং পাউডার চার ভাগ জলে মিশিয়ে নিন। তার পর কাপড় ডুবিয়ে আলতো করে বোলাতে থাকুন দেওয়ালে। যত ক্ষণ না উঠছে, হাল ছাড়বেন না। তার পর একই ভাবে দেওয়াল শুকিয়ে নিন।
শ্যাওলা সাময়িক ভাবে দেওয়াল থেকে পরিষ্কার করা যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
আর যাতে শ্যাওলা না জমে, তার জন্য কী করতে হবে?
১. জানলার কোনও অংশ দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে।
২. সব সময়ে ভেজা জায়গা চোখে পড়লেই শুকিয়ে নিতে হবে। স্নানের পর বাথরুমের মেঝে এবং দেওয়াল শুকিয়ে নিন।
৩. ড্রেনপাইপের কারণে সাধারণত লিকেজ হয়। তাই কেবল বাড়ির ভিতর নয়, বাইরের অংশটিকেও নিয়মিত যাচাই করতে হবে। প্রয়োজনে মিস্ত্রি ডেকে সারাই করে নেওয়া উচিত।
৪. সবচেয়ে জরুরি এবং কার্যকরী উপায় হল, বাতাস চলাচলের বন্দোবস্ত করা। যথাসম্ভব দরজা-জানলা খুলে রাখুন। এর ফলে আর্দ্রতা কমবে এবং ছত্রাক প্রতিরোধে সাহায্য হবে।
৫. আসবাবপত্র যথাসম্ভব দেওয়াল থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
মনে রাখবেন, সাবান-জল বা ব্লিচিং পাউডার-জল দিয়ে যতই চেষ্টা করুন, সমূলে ধ্বংস করতে পারবেন না শ্যাওলা। তাই ছত্রাকের উৎস জেনে সেটিকে ঠিক করার বন্দোবস্ত করতে হবে। তবেই রেহাই পাওয়া যাবে পুরোপুরি।