Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হুকায় ক্ষতি সিগারেটের চেয়েও বেশি

মুম্বইয়ের এক নামী ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদী এবং কলকাতার মুখ ও গলার ক্যানসার চিকিৎসক সৌরভ দত্তের দাবি, হুকা বারগুলির উপরে অবিলম্বে সরকার নজরদারি শুরু করুক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

হুকা বারের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে এ বার সতর্ক করলেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা। যে ভাবে শহরের বিভিন্ন পানশালা ও রেস্তোরাঁয় হুকার আসর বসিয়ে তরুণ-তরুণীদের আকর্ষিত করা হচ্ছে, তাতে শঙ্কিত মুখ ও গলার ক্যানসার চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের মতে, হুকার ধোঁয়া সিগারেটের চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক। এই হুকা থেকে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীর রোগ, ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের আশঙ্কাও থাকে।

মুম্বইয়ের এক নামী ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদী এবং কলকাতার মুখ ও গলার ক্যানসার চিকিৎসক সৌরভ দত্তের দাবি, হুকা বারগুলির উপরে অবিলম্বে সরকার নজরদারি শুরু করুক।

পঙ্কজ জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হুকা বার আটকাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সমান দোষে দুষ্ট হুকায় আসক্তরাও। কারণ, তাঁরা শুধু নিজেদেরই ক্ষতি করছেন না, যাঁরা হুকা খাচ্ছেন না, তাঁদেরও ক্ষতি করছেন। ‘‘হুকা থেকে আগুন লাগার বিপদ এবং পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থাকে। যাঁরা হুকা খাচ্ছেন না, তাঁদের উচিত প্রতিবাদ করা,’’ বলছেন এই চিকিৎসক। তাঁর অভিযোগ, বহু জায়গাতেই রেস্তোরাঁর লাইসেন্স নিয়ে বেআইনি ভাবে হুকা বার চালানো হচ্ছে। আইনি বাধা উপেক্ষা করছেন ওই সব রেস্তোরাঁর মালিক।

চিকিৎসকদের দাবি, রেস্তোরাঁ, পাব ও পানশালাগুলিতে ধূমপান এবং হুকা পান সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিষিদ্ধ করা হোক।

হুকার নেশাকে অনেকেই সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর বলে মনে করেন। শহরের বিভিন্ন দামি রেস্তোরাঁয় তাই হুকার আসর বসানো হয়। তাতে অল্পবয়সীদেরও ভিড় জমে। কিন্তু ক্যানসার চিকিৎসকেরা বলছেন, হুকাখোরেরা সিগারেটের চেয়ে অনেক বেশি সময় এবং জোরে ধোঁয়া টানেন। তার ফলে ধোঁয়া অনেক বেশি পরিমাণে শরীরে ঢোকে। এক ঘণ্টা ধরে হুকা খেলে তা ১০০টি সিগারেট খাওয়ার সমান হয়। এ ছাড়া, একই পাইপ একাধিক লোকের মুখে ঘোরার ফলে সংক্রামক ব্যাধি ছড়ানোর আশঙ্কাও থাকে। পঙ্কজবাবুর কথায়, ‘‘সিগারেটে এবং হুকায় একই ধরনের ক্ষতিকারক জিনিস থাকে। অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, ফরম্যালডিহাইডের মতো রাসায়নিকও থাকে।’’

অনেকে অবশ্য বলছেন, তামাক ও নিকোটিন ছাড়া হুকাও তো মেলে। সে সব খেলে ক্ষতি কী?

চিকিৎসকেরা বলছেন, তামাকহীন হুকায় কার্বন মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। সেগুলি শরীরে গেলেও নানা দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। বেশির ভাগ হুকাতেই নানা রূপে তামাক ব্যবহার করা হয় বলেও তাঁদের দাবি। হুকায় ব্যবহৃত চিটেগুড় থেকে যে নিকোটিন বেরোয়, তা থেকে হার্টের রোগ, অন্ত্রের রোগ হতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, ২০১৭ সালের মে মাসে জারি করা কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দেশিকায় হুকা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দিল্লিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত সব হুকা বারের লাইসেন্স বাতিল করতে নির্দেশ দিয়েছে।

আজ, রবিবার বর্ষশেষ। সন্ধ্যার পর থেকেই বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ, পানশালায় পানাহারের আসর বসবে। শুরু হবে বর্ষবরণের পার্টি। সেই সব পার্টিতে হুকার ব্যাপারে প্রশাসন বা আমজনতার মনোভাব বদলাবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Smoke cigar Hookah Cigarettes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE