পুরনো খবরের কাগজ থেকে ভাঙা ক্লিপ, কাটা বাল্ব... সবই জমিয়ে রাখার অভ্যেস অনেকের। আর এগুলি ফেলতে গেলেই শুরু অশান্তি। মনোবিদরা বলছেন এটাই হল ‘হোর্ডিং ডিসঅর্ডার’। হোর্ডিং শব্দটার অর্থ কোনও জিনিস বা টাকা মজুত করে রাখা। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ‘হোর্ডিং ডিসঅর্ডার’ বা ডিসপোসোফোবিয়া হল এমন এক মানসিক সমস্যা, যেখানে মানুষ অকারণে নানাবিধ জিনিস জমাতে থাকেন। তা ফেলতে গেলেই বাধে দক্ষযজ্ঞ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবীর মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যাঁরা হোর্ডিং ডিসঅর্ডারের শিকার, তাঁদের মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা যায়—
কোনও নির্দিষ্ট ধরনের জিনিস নয়, বরং এমন জিনিস জমা করেন যেগুলির আদতে বাজারমূল্য নেই।
হোর্ডিং ডিসঅর্ডারে ভোগা মানুষজনকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাঁরা কোনও জিনিস এত পরিমাণে কেন জমাচ্ছেন, তার সদুত্তর মিলবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই জিনিসগুলি পড়ে নষ্ট হয়।
জিনিসপত্র জমাতে জমাতে একটা সময় আসে, যখন ঘরের সর্বত্র তা ভর্তি হয়ে যায়। ঘরের মধ্যে হাঁটাচলা করতেও বেগ পেতে হয়।
যদি কেউ জিনিসগুলি ফেলে দিতে যান, তা হলে অশান্তি করেন। তাঁদের মনে হয়, জিনিসগুলি এক দিন কাজে আসবেই।
কাদের হয়, কেন হয়?
ঠিক কী কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়, তা এখনও নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, হোর্ডিং ডিসঅর্ডার কৈশোরের পর থেকে সকলেরই হতে পারে। তবে বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বাড়তে থাকে। জিনঘটিত কারণেও হতে পারে ডিসপোসোফোবিয়া। কোনও মানসিক রোগ থাকলেও এটি বাড়তে পারে। ওসিডি, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া, অবসাদ বা উদ্বেগজনিত রোগ এর মধ্যে অন্যতম।
সমস্যা যেখানে
কারণে-অকারণে জিনিস জমানোর অভ্যেস কমবেশি অনেকেরই থাকে। তার মানে কি তারা সকলেই এই সমস্যার শিকার? ডা. আবীরের কথায়, “না, অনেক সময়ে আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জিনিস কিনি বা জমিয়ে ফেলি। হয়তো তা গুছিয়ে ওঠাও হয় না। তবে এগুলি কেনা-জমানোর পিছনে কোনও না কোনও ব্যাখ্যা থাকে। ডিসপোসোফোবিয়া রোগী কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না।” এই ধরনের মানুষের সমাজে মেলামেশা করতেও সমস্যা হয়।
উপায় রয়েছে
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই রোগে ভুক্তভোগীদের অপমানজনক কথা বললে তিনি গুটিয়ে যেতে পারেন। অবসাদ, উদ্বেগ বাড়তে পারে। মনোবিদের সাহায্য নিলে রোগ নির্ণয় করা যায় দ্রুত। এর চিকিৎসায় কাজে দেয় কাউন্সেলিং সেশন। প্রয়োজনে ওষুধও দেওয়া হয়।
মডেল: ঋত্বিকা গুহ; ছবি: সর্বজিৎ সেন; মেকআপ: কুশল মণ্ডল, লোকেশন: ইনরা ঐতিহ্য
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)