E-Paper

স্বর্ণচাঁপার সুগন্ধে

পর্যাপ্ত সূর্যালোক পেলেই বাগান ভরে উঠবে স্বর্ণচাঁপা ও শ্বেতচাঁপায়।

ঊর্মি নাথ 

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ১০:২৬
গাছে স্বর্ণচাঁপা।

গাছে স্বর্ণচাঁপা। নিজস্ব চিত্র।

বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম জাগ্রত দ্বারে। ধীরে ধীরে বাড়ছে উত্তাপ, তার প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরে, কাজে, মনে। গরমের সন্ধেতে ভেসে আসা ফুলের সুগন্ধ শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে। তাই অধিকাংশ বাগানপ্রেমীদের বাগানে থাকে বেল, জুঁই, গন্ধরাজের মতো সুগন্ধী ফুলের গাছ। এদের দলে যোগ করতে পারেন স্বর্ণচাঁপা। হলুদ রঙের এই ফুল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই এর গন্ধে মন ভরে যায়। বাগানের মাটি পেলে বৃক্ষের আকার ধারণ করে এই গাছ। এমন লম্বা গাছ দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে একে কী করে ছাদবাগান বা বারান্দার ছোট্ট গ্রিন জ়োনে রাখা যাবে! স্বর্ণচাঁপা টবেও দিব্যি হয়। তবে সে ক্ষেত্রে চারা নির্বাচন থেকে পরিচর্যার ক্ষেত্রে দু’-একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

চারা নির্বাচন

স্বর্ণচাঁপা ফলের বীজ থেকে গাছ হয়। অনেক সময়ে দেখা যায়, পরিণত স্বর্ণচাঁপা গাছের তলায় বীজ পড়ে আপনাআপনি চারা গাছ জন্মেছে। সেই চারা টবে বা বাগানের এক কোণে লাগানোই যায়, তবে এতে ফুল আসতে বেশ সময় লাগবে। তাই স্বর্ণচাঁপার জন্য জোড় কলমের চারা উপযুক্ত, বিশেষ করে যাঁরা টবে রোপণ করতে চান। কলমের গাছে ফুল আসবে তাড়াতাড়ি। স্বর্ণচাঁপা গাছ দু’ধরনের হয়। এক প্রকার শুধু গরমে ফুল দেয়। আর এক প্রকার বারোমাসি স্বর্ণচাঁপা। এই গাছে আবার সারা বছর ফুল হয়, শীতের সময়টুকু ছাড়া। টবের জন্য কলমের বারোমাসি চাঁপাই ভাল। নার্সারি থেকে কেনার সময়েও কলমের বারোমাসি স্বর্ণচাঁপার চারা দেখে নিতে হবে।

মাটি-জল-সার

চাঁপা গাছ পছন্দ করে এঁটেল মাটি। এঁটেল মাটি জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু গাছের গোড়ায় জল জমে গেলে গাছের ক্ষতি। তাই এঁটেল মাটির সঙ্গে মেশাতে হবে নদীর সাদা বালি, তার সঙ্গে যোগ করতে হবে ভার্মি কম্পোস্ট বা এক বছরের পুরনো গোবর সার, অল্প পরিমাণে নিম খোল। তার সঙ্গে এক দেড় চামচ পরিমাণ মতো হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। টবে গাছ রোপণের আগে যদি মাটি তৈরি করে সাত-দশদিন রেখে দেওয়া যায়। তারপরে সেই মাটিতে গাছ রোপণ করা হলে ভাল হয়।

প্রথম থেকে স্বর্ণচাঁপার জন্য বড় টব নিতে পারলে ভাল, অন্তত ১০-১২ ইঞ্চির। টবে গাছ রোপণ করার পরে এক সপ্তাহ হালকা ছায়ায় বা সেমি শেডে গাছ রেখে তার পরে পুরোপুরি সূর্যের আলোয় আনুন। পর্যাপ্ত সূর্যালোক পছন্দ করে এই গাছ। অবশ্য সারাদিন আলো পাওয়ার মতো জায়গা না থাকলে চার-পাঁচ ঘণ্টা সূর্যালোক পেলেও এর ডালপালা বাড়বে, ফুল হবে। স্বর্ণচাঁপা ফুটলে সুগন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত হাওয়ায় ভেসে যায়। তাই ফুল আসার পরে সুগন্ধ পাওয়ার জন্য টবটি এক-দু’দিনের জন্য ঘরের ভিতরে রাখতে পারেন। তবে এসি বা ফ্যানের হাওয়া থেকে দূরে এবং দিনের বেলা যেন সে বাইরের আলো পায়, এমন জায়গায় রাখবেন।

স্বর্ণচাঁপা শীতের সময়ে ডরমেন্ট পিরিয়ডে চলে যায়। এই সময়ে গাছে জল ছাড়া আর অন্য কোনও সার না দেওয়াই ভাল। খাবার দিতে হবে ফেব্রুয়ারি থেকে। ১৫ থেকে ২০ দিন অন্তর ভার্মিকম্পোস্টের সঙ্গে শিং গুঁড়ো, কলার খোসা শুকিয়ে তার গুঁড়ো মিশিয়ে দিতে পারেন মাটির সঙ্গে। তরল সার হিসেবে এক-দেড় মাস পরপর দিতে পারেন সরষের খোল পচা জল। আগাম সতর্ক থাকার জন্য মাসে একবার নিমতেল জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।

শ্বেতচাঁপার সুগন্ধ

স্বর্ণচাঁপার মতো শ্বেতচাঁপার বা সাদা চাঁপার গন্ধও বড় মিষ্টি। মাটিতে রোপণ করলে স্বর্ণচাঁপার মতো বৃক্ষের আকার নেয় শ্বেতচাঁপা গাছ। শ্বেতচাঁপা ফুলের সাদা পাপড়িগুলো স্বর্ণচাঁপার চেয়ে অল্প সরু ও লম্বা। শ্বেতচাঁপার গন্ধ তুলনায় হালকা, এ ছাড়া স্বর্ণচাঁপার সঙ্গে শ্বেতচাঁপার বিশেষ পার্থক্য নেই। বড় গাছ হলেও স্বর্ণ চাঁপার মতো শ্বেতচাঁপাও টবে রোপণ করা যায়। এ ক্ষেত্রেও নার্সারি থেকে চারা কেনার সময়ে জোড় কলম বা গুটি কলমের চারা কিনতে পারেন। শ্বেতচাঁপাও পছন্দ করে এঁটেল মাটি। মাটি তৈরি, সার বা জলের প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণচাঁপার পরিচর্যা যে ভাবে করতে হবে, এই গাছের ক্ষেত্রেও তাই।

স্বর্ণচাঁপা বা শ্বেতচাঁপা টবে ঠিক মতো বাঁচিয়ে রাখতে গেলে জল-সারের পাশাপাশি সময় মতো রিপটিং ও প্রুনিং বা ছাঁটাই করতে হবে। এতে যেমন ভাল ফুল হয়, নতুন নতুন শাখা-প্রশাখা বেরোয়, তেমন গাছও সুন্দর আকার নেয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Champak Flower

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy