Advertisement
E-Paper

ভয়াল অসুখের আশঙ্কা, সিগারেট ছাড়বেন কী ভাবে?

সিগারেটের উপাদানে আছে আর্সেনিক, টয়লেট ক্লিনারে ব্যবহৃত অ্যামোনিয়া, কীটনাশক ডিডিটি, নেলপলিশ রিমুভার অ্যাসিটোন, ব্যাটারিতে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম, নিকোটিন-সহ আরও প্রায় ৭০০০ বিষ! অথচ স্বেচ্ছায় সেই বিষ নিজেরা বুক ভরে টেনে নিচ্ছেন, ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রিয় সন্তান ও বাড়ির অন্যদের শরীরেও। সুস্থ ভাবে বাঁচতে গেলে সিগারেটের সুখটানকে গুডবাই করতেই হবে। তার জন্যে চাই সদিচ্ছা।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ১৭:১৩
প্রতীকী ছবি। সৌজন্যে: শাটারস্টক।

প্রতীকী ছবি। সৌজন্যে: শাটারস্টক।

সুখটানের জন্য খামোখা খরচ বাড়িয়ে লাভ কী! সিগারেট যে কতটা ক্ষতিকর তা নার্সারির বাচ্চারাও জানে। একে তো সিগারেট কেনার খরচ, তার সঙ্গে হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে শ্বাসনালী সমেত ফুসফুসের সমস্যা, মায় ক্যানসারের চিকিৎসার বিপুল ব্যয়। বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসের প্রাক্কালে হার্টের অসুখের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর সিগারেট টানা কমিয়ে ফেলার পরামর্শ দিলেন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশ কুমার হাজরা।

আচ্ছা, আপনারা কি ন্যাপথলিন, টয়লেট ক্লিনার, নেলপলিশ রিমুভার, আর্সেনিক বা ডিডিটি চেখে দেখেছেন? সকলে না চাখলেও ধূমপায়ীরা নির্ঘাত খেয়েছেন এ কথা হলফ করে বলতে পারি। মনগড়া নয়, সিগারেটের উপাদানে আছে আর্সেনিক, টয়লেট ক্লিনারে ব্যবহৃত অ্যামোনিয়া, কীটনাশক ডিডিটি, নেলপলিশ রিমুভার অ্যাসিটোন, ব্যাটারিতে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম, নিকোটিন-সহ আরও প্রায় ৭০০০ বিষ! অথচ স্বেচ্ছায় সেই বিষ নিজেরা বুক ভরে টেনে নিচ্ছেন, ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রিয় সন্তান ও বাড়ির অন্যদের শরীরেও। সুস্থ ভাবে বাঁচতে গেলে সিগারেটের সুখটানকে গুডবাই করতেই হবে। তার জন্যে চাই সদিচ্ছা।

‘‘সিগারেট ছাড়া খুব সহজ, আমি কত বারই ছেড়েছি...”

জর্জ বার্নাড শ’র মতো এমন অনেক মানুষই আছেন যাঁরা চেষ্টা করেন ধূমপান ছেড়ে দিতে, কিন্তু চেষ্টা করেও ধোঁয়ার বেষ্টন থেকে মুক্ত হতে পারেন না। বারে বারে ছাড়েন আর ধরেন। তাঁরা কী ভাবে ধোঁয়ার নাগপাশ থেকে মুক্ত হবেন জেনে নিন। তবে নিজের ইচ্ছে না থাকলে নেশার হাত এড়ানো সহজ নয়।

এক সঙ্গে প্যাকেট বোঝাই সিগারেট বা বিড়ির বান্ডিল কিনবেন না। বড়জোর ২টো কিনুন। প্যাকেট ভর্তি থাকলে মন বার বার খাই খাই করে আপনাকে উস্কানি দেবে। গাড়ির মধ্যে, অফিসে বা বাড়িতে সিগারেট টানবেন না। ছাদে উঠে কিম্বা রাস্তায় নেমে সিগারেট ধরান। বয়জ্যেষ্ঠ মানুষ অথবা সম্মাননীয় কোনও মানুষের সামনে সিগারেট খাবেন না। দু’টি সিগারেট টানার মধ্যে গ্যাপ বাড়াতে হবে। চা পানের পর বা সকালে বাথরুম দৌড়নর আগে সিগারেটের অভ্যেস থাকলে তা ধীরে ধীরে কমানোর চেষ্টা করতে হবে। ধোঁয়া টানার ইচ্ছে হলে জোয়ান, চিকলেট, আমলকি জাতীয় কিছু মুখে রাখুন। সিগারেট ধরানোর পর পুরোটা না টেনে অর্ধেক ফেলে দেওয়ার অভ্যেস করুন। ক্রমশ তা বাড়িয়ে এক চতুর্থাংশ টেনে ফেলে দিন। সরকার কিছু আইন জারি করলে ধূমপান-সহ তামাকের নেশা কমানো যায় সহজেই। সিগারেটের সাইজ ছোট করে দিতে হবে। যে কোনও প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান আইনত দণ্ডনীয় করা দরকার। সিগারেটের প্যাকেটে কিছু স্যাম সিগার রাখলেও ভাল ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১০ টা সিগারেটের মধ্যে ২- ৩টি নকল সিগারেট থাকুক। স্কুল, কলেজ, অফিস ও বাজারে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা বাধ্যতামূলক করা উচিত। পানের দোকানে সিগারেট-সহ যাবতীয় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করার ব্যবস্থা করলে তামাকের ব্যবহার কমতে বাধ্য। সহজলভ্য হওয়ায় চট করে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা নেশা শুরু করে। সিগারেট বিক্রি হোক ওষুধের দোকানে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের সিগারেট বিক্রি করলে বিক্রেতাকেও শাস্তি দেওয়া হোক। তবে সবার আগে দরকার নিজের সদিচ্ছা।

আরও পড়ুন- সিগারেট খেয়ে চার ঘণ্টা বাচ্চার কাছে যাবেন না​

আরও পড়ুন- ধূমপানে ধোঁয়াশা

পায়ে হোক বা বুকে, ব্যথার জন্যে দায়ী স্মোকিং

সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ায় থাকা হাজার হাজার বিষাক্ত রাসায়ানিক ধূমপায়ীর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কাছাকাছি থাকা অন্যদেরও ক্ষতি হয়। প্রতি বছর ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় শুধুমাত্র তামাকের কারণে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০৩০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ লক্ষে। শ্বাসনালী ও ফুসফুসের অসুখের পাশাপাশি হার্টের অসুখের এক অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর স্মোকিং। আর এই কারনেই এবারের বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসের থিম – ধুমপান ও হার্টের অসুখ। সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা, হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজকর্ম সবই ওলোটপালট হয়ে যায়। হার্টেই যদি গণ্ডগোল হয় তা হলে সে যে বিদ্রোহ করবে সে আর নতুন কথা কী! এ দেশে প্রতি তিন জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে এক জন ধূমপায়ী। অবশ্য ধোঁয়া টানার শুরু স্কুল বা কলেজ জীবনে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত মানুষজনের মধ্যে বিড়ির নেশা বেশি দেখা যায়। ২০১১ সালে ৫.৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে স্রেফ বিড়ি টেনে। এই ক’বছরে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে উন্নয়নশীল দেশে ৩৫–৬৯ বছর বয়সে ৩৫% হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর অন্যতম কারণ ধূমপান। যাঁরা দিনে ২০টি বা তারও বেশি সিগারেট টানেন, তাঁদের হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার ঝুঁকি এক জন অধূমপায়ীর থেকে ৭০% বেশি। ধূমপানে বাড়ে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজের আশঙ্কা। অর্থাৎ পা-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশের রক্তবাহী ধমনিতে কোলেস্টেরলের প্রলেপ জমে রক্ত চলাচল কমে যায়। সব থেকে বেশি সমস্যা হয় পায়ে। ধূমপায়ীদের এই অসুখের আশঙ্কা অন্যদের থেকে ১৬ গুণ বেশি। মধ্য বয়সে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ জনিত পায়ের ব্যথার রোগীদের ৯৫% ধূমপায়ী। তাই সিগারেটের সুখটানে রোগ বরণ না করে জাস্ট জীবন থেকে বাদ দিন।

‘পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য’

জীবনে এক বারও সিগারেট-বিড়ি টানেননি, অথচ তামাকজনিত অসুস্থতার শিকার এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। মহিলা ও শিশুদের মধ্যে সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং-এর কারণে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। অধূমপায়ী স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে অনেকেই সিগারেট ফোঁকেন। আর তার কুফল পড়ে কাছের মানুষদের ওপর। সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ার কুপ্রভাবে ছোট্ট শিশু থেকে তার মা, সকলেরই ফুসফুসের সমস্যা থেকে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়। এদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, অর্থাৎ হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে ২৫–৩০%, স্ট্রোকের রিস্ক ২০-৩০%, শুধুমাত্র আমেরিকাতেই বছরে ৩৪,০০০ মানুষের অকালমৃত্যু হয় পরোক্ষ ধূমপানের কারণে। তাই সিগারেটকে বিদায় করে নিজেও সুস্থ থাকুন, কাছের মানুষদের ভাল থাকতে দিন। বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসের প্রাক্কালে এই হোক সব ধূমপায়ীর শপথ!

Smoking Health Doctors সিগারেট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy