Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
দিল্লিতে বলি ১৪

এ বার ডেঙ্গি ভয়াল নয় তত: আইএমএ

মৃত্যু তালিকায় যোগ হল আর তিন জন। সব মিলিয়ে আজ রাজধানীতে ডেঙ্গির হানায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪। ৪১ বছর বয়সি এক মহিলার পাশাপাশি আজ প্রাণ হারিয়েছে দু’টি শিশুও। এক জনের বয়স ১৪ আর অন্য জন ৭।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৪৮
Share: Save:

মৃত্যু তালিকায় যোগ হল আর তিন জন। সব মিলিয়ে আজ রাজধানীতে ডেঙ্গির হানায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪। ৪১ বছর বয়সি এক মহিলার পাশাপাশি আজ প্রাণ হারিয়েছে দু’টি শিশুও। এক জনের বয়স ১৪ আর অন্য জন ৭। হাসপাতালে হাসপাতালে রোগীর লাইন ক্রমশ দীর্ঘ হলেও দিল্লির এ বছরের ডেঙ্গি ভাইরাস ২০১৩-র মতো ততটা ভয়ঙ্কর নয় বলে আশ্বাস দিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। তাদের দাবি, এ বারের ভাইরাস তুলনামূলক ভাবে দুর্বল প্রকৃতির এবং প্রাণহানির আশঙ্কা কম।

কিন্তু প্রশাসন খুব একটা নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। কারণ হাসপাতালে স্থানাভাব। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন শ’খানেক রোগী। স্থানাভাবে ইতিমধ্যেই তাঁদের চিকিৎসা চলছে অন্য বিভাগে। তার মধ্যে যে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে এত রোগীর চিকিৎসা কী ভাবে করা সম্ভব— সেটাই চিন্তা প্রশাসনের। হাসপাতালের তরফে গাফিলতির কারণে পরপর শিশুমৃত্যুর ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আর ঝুঁকি নিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল আপৎকালীন ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ ও রোগীদের জন্য শয্যা কিনতে পারবে বলে জরুরি নির্দেশ জারি করেছে অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার।

পরিস্থিতি জটিল হলেও ডেঙ্গি নিয়ে যাতে অযথা আতঙ্ক না ছড়ায়, তার জন্য আইএমএ কর্তাদের আশ্বাস, এ বার ততটা উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরি হয়নি। তাঁদের মতে, অধিকাংশ ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা ঘরে বসেই সম্ভব। কিন্তু একের পর এক মৃত্যুতে লোকের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাই কেউ ঝুঁকি নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। ডেঙ্গির সামান্য উপসর্গ দেখলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিচ্ছেন। আইএমএ সেক্রেটারি জেনারেল কে কে অগ্রবাল বলেন, ‘‘একমাত্র যাদের প্লেটলেট নির্ধারিত মাত্রার নীচে নেমে যাচ্ছে, তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করা উচিত। অযথা সকলে হাসপাতালে ভর্তি হলে দরকারের সময় প্রকৃত রোগী চিকিৎসা পাবে না।’’ তা ছাড়া তাঁর দাবি, ‘‘চলতি মরসুমে ডেঙ্গি ভাইরাসের যে চরিত্র দেখা যাচ্ছে, তার মারণ ক্ষমতা কম। তাই সাধারণ মানুষের অযথা আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।’’

আইএমএ-র আশ্বাসেও হাসপাতালগুলিতে সঙ্কট-চিত্র বহাল। মওকা বুঝে বেসরকারি হাসপাতালের ফ্রি বেডগুলিকে পেয়িং বেড করে মুনাফা লোটার চেষ্টা তো ছিলই। এ বার ডেঙ্গির জন্য রক্তপরীক্ষার ক্ষেত্রেও ১৫০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে প্রশাসনের কাছে। তার পরে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতেন্দ্র জৈন অবশ্য তড়িঘড়ি নির্দেশ দিয়েছেন, রক্ত পরীক্ষা করাতে ছশো টাকার বেশি দাবি করা হলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে হবে।

রাজধানীর প্রায় দু’হাজার লোক ইতিমধ্যেই ডেঙ্গির কবলে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী এক মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সেটা মাথায় রেখে গত কাল থেকে তৎপর হয়েছে কেজরীবাল প্রশাসন। দিল্লির সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে শয্যাসংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি। যার মধ্যে কুড়ি হাজার শয্যা রয়েছে কেবল বেসরকারি হাসপাতালে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আগামী রবিবারের মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলিতে হাজার খানেক অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলিতে ডেঙ্গি রোগীদের জায়গা করে দিতে অন্তত ১০-২০% শয্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার। কিন্তু অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল প্রশ্ন তুলেছে, কেবল শয্যা বাড়ালেই তো চলবে না, দরকার উপযুক্ত পরিকাঠামোও। এত কম সময়ে কী ভাবে তা গড়ে তোলা সম্ভব?

দিল্লির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতালের কথাই ধরা যাক। সেখানে স্থানাভাবের কারণে ডেঙ্গি রোগীদের স্থান হয়েছে গাড়িচালকদের ঘরে। রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে একটি বেডে তিন জন করে ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসা চলছে। একই অবস্থা অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল সায়েন্স বা এইমস-রও। স্ট্রেচারেও চিকিৎসা
চলছে রোগীদের। এই পরিস্থিতিতে শুধু বেড বাড়ালেই কি চলবে? ফি বছর যখন এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়, তখন কেন আগে থেকেই সতর্ক হয়নি কেজরীবাল প্রশাসন? প্রশ্নটা উঠছে।

দিল্লিতে ঠাঁই না পেয়ে দুই ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি চলে গিয়েছেন রাঁচির রিমসে। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ওই দুই রোগীর অভিযোগ তেমনটাই। কর্মসূত্রে তাঁরা দিল্লিতে থাকেন। প্রচণ্ড জ্বর ও ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে দিল্লির একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেখানে তাঁদের ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন কর্তৃপক্ষ। এমন অনেক ডেঙ্গি রোগীই দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে নিজের শহরে ফিরে যাচ্ছেন।

কতকটা এই কারণেই মাথাব্যথা বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। সূত্রের বক্তব্য, একেই ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। তার উপর বিমানে দিল্লি-কলকাতা দূরত্ব মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের হওয়ায় শহরে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। রোগীর চাপও বাড়তে পারে কলকাতার হাসপাতালে। এ নিয়ে আজ উত্তরবঙ্গ সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয় মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। আগামিকাল বৈঠক ডেকেছেন মেয়র। ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে রক্তপরীক্ষা ও বিভিন্ন পরিকাঠামো-সহ ৮১টি শিবির আগামী পরশুই চালু করবে পুরসভা। শুরু হবে বাড়ি বাড়ি অভিযানও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE