Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Honey

মধু কতটা মধুর?

নিয়মিত মধু খাওয়ার কি কোনও প্রয়োজন আছে? মধু খেলেও কতটা খাবেন? কেন খাবেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

An image of Honey

—প্রতীকী চিত্র।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৫
Share: Save:

অনেকেই সকাল শুরু করেন মধু সেবন করে। বিশেষত শীতে মধু খাওয়ার চল বেড়ে যায়। কেউ আবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উষ্ণ জলে লেবু-মধু মিশিয়ে পান করেন। কেউ আবার সর্দি-কাশির হাত হতে বাঁচতে সরাসরি এক-দু’চামচ মধু খান। খাঁটি মধুতে যথেষ্ট পরিমাণে থাকে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, বেশ কিছু ভিটামিন, মিনারেল— যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই মধুর উপরে অনেকেই ভরসা রাখেন। মধুর গুণাগুণের জন্য সেই প্রাচীন কাল থেকে মধু বিনা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানও অসম্পূর্ণ থাকে। মধু প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল সুইটনার, তাই অনেকেই চিনির বিকল্প হিসেবে খাবারে মধু ব্যবহার করেন। কিন্তু নিয়মিত মধু খেলে কি শারীরিক সমস্যার সমাধান হয় নাকি অতিরিক্ত মধু শরীরে সমস্যা তৈরি করে? নিয়মিত মধু খাওয়ার আগে অবশ্যই উত্তর মেলা জরুরি।

মধু কখন খাবেন

  • সর্দি-কাশি, বুকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং যাঁদের চট করে ঠান্ডা লেগে যায় তাঁদের জন্য মধু ভাল।
  • হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে মধু সহায়ক।
  • অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান থাকায় মধু ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। যেমন, গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাকে সংক্রমণ হলে বা ব্যাক্টিরিয়ার সমস্যা রোধে মধু কাজ করে। বার্ন পেশেন্টদের পোড়া ক্ষত সারানোর জন্য, পোড়া দাগ ঠিক করার জন্যও হাসপাতালে মধু ব্যবহার করা হয়। রূপচর্চায় ত্বকের দাগ তোলার জন্য ফেসিয়ালেও মধু ব্যবহার করা হয়।
  • সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, মধু অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট হিসেবে অর্থাৎ অবসাদ কাটাতে কার্যকর।
  • মধু মস্তিষ্ক গঠন এবং নার্ভ রিল্যাক্সেশনে বেশ কাজ করে। ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে।
  • প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে মধু বেশ ভাল। শরীরের বন্ধু ব্যাক্টিরিয়াদের চাঙ্গা করতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবিটিসে মধু নৈব নৈ চ

খাঁটি মধুর অনেক গুণ আছে। কিন্তু তাই বলে নিয়ম করে মধু খেলেই সুস্থ থাকা যায়, তা কিন্তু নয়। অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উষ্ণ জলে লেবু-মধু মিশিয়ে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পান করেন। পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী বললেন, “এটা ভুল ধারণা। মধু ও লেবুর পি এইচ আলাদা। ফলে দুটো যখন মেশে, তখন পিএইচ ইমব্যালান্স হয়ে যায়। আর পিএইচ ইমব্যালান্স শরীরের উপরে বেশ প্রতিক্রিয়া করে। লেবু দিলে মধু দিতে নেই। মধু দিলে লেবু দিতে নেই।’’ মধু ন্যাচারাল সুইটনার। তাই অনেকে খাবারে চিনির বদলে মধু ব্যবহার করেন। এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘এই অভ্যেস মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। রক্তে শর্করার মাত্রা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে চিনি, মধু দুটোই ছেড়ে দিলে ভাল, বিশেষত যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন। আমার মতে, রোজ এমনি মধু খাওয়ার প্রয়োজন নেই। মধুতে কিন্তু ক্যালরি প্রচুর। যাঁরা একেবারেই চিনি ছাড়া থাকতে পারেন না, তাঁরা চিনির বদলে অল্প মধু খেতে পারেন। চিনির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব বেশি, তাড়াতাড়ি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, সেই তুলনায় মধুর একটু কম। মধুর মিষ্টত্ব বেশি, তাই কম ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া মধু শরীরের পক্ষে ভাল।’’

প্রথা অনুয়ায়ী জন্মের পরে মুখে মধু দিলে মঙ্গল হয়, এই বিশ্বাসে জন্মের পর অনেকেই নবজাতকের মুখে মধু দিয়ে থাকেন। শীতের সময় বাচ্চাদের নিয়মিত মধু খাওয়ান, পাছে সর্দি-কাশি না হয়। ‘‘খুব ছোট বাচ্চাদের মধু না দেওয়াই ভাল। বিশেষত এক বছরের নীচে বাচ্চাদের মধু খাওয়াবেনই না। এতে গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাকে ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে। মধুর মধ্যে পোলেন বা রেণু থাকে। পোলেন থেকে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে বলে লড়াই করতে পারে। এক বছরের পরে অল্প করে মধু খাইয়ে দেখে নেওয়া দরকার তার কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। কিশোর বা প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে এক-দু’চামচের বেশি মধু খাওয়া উচিতই নয়,’’ বললেন কোয়েল।বিশুদ্ধ মধু পাওয়া এখন চ্যালেঞ্জের বিষয়। এই ব্যাপারে বি-কিপার মহম্মদ আরিফুল ইসলামের মত, ‘‘মধু বিশুদ্ধ কিনা বা তার কোয়ালিটি যাচাই করার একটাই রাস্তা, ল্যাবে পরীক্ষা করা। কিন্তু সাধারণ ক্রেতার পক্ষে তা সম্ভব নয়। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে খাঁটি মধু খেয়ে আসছেন তাঁরা বুঝতে পারবেন মধু খাঁটি কি না।" এখন অনেকেই জৈব মধু খান। তবে দেখে নেওয়া দরকার সেটি পরিশোধিত মধু কি না। শুধু কেনা নয় মধু ঠিকমতো সংরক্ষণ করাও জরুরি। মধুর শিশি কখনওই ফ্রিজে রাখবেন না। ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখবেন। এর নড়চড় হলে খাঁটি মধু নষ্ট হয়ে যায়।

রোজ মধু খেলে সুস্থ থাকা যায় এই ধারণা বদলেছে। মধু হল ফর্ম অব সুগার। সুগার থেকে ওবেসিটি , টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস, ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই বাচ্চা হোক বা বয়স্ক অকারণে মধু খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন না পুষ্টিবিদরা। শিশু হোক বা বয়স্ক, নিয়মিত মধু খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE