Advertisement
E-Paper

মাউসের ক্লিকে প্রবাসে বসেও পাড়ার মিষ্টির স্বাদ

সূদূর আমদাবাদে বসেও হাজরার পাড়ার দোকানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে অমিত বসুর। বিজয়ার আমেজে প্রিয় শাঁখ সন্দেশ, গুঁজিয়ার সঙ্গে প্রিয় দানাদার অবধি তাঁর গুর্জর দেশের বাড়িতে এসে হাজির।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৮
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সূদূর আমদাবাদে বসেও হাজরার পাড়ার দোকানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে অমিত বসুর। বিজয়ার আমেজে প্রিয় শাঁখ সন্দেশ, গুঁজিয়ার সঙ্গে প্রিয় দানাদার অবধি তাঁর গুর্জর দেশের বাড়িতে এসে হাজির।

বেঙ্গালুরুর অভিজিৎ মিত্র আবার পুরুলিয়ায় দাদা সন্তোষকে চমকে দিয়েছেন। নিজে সশরীরে এসে প্রণাম করতে না-পারলেও মিহিদানার মাধুর্যে তাঁর মন একেবারে গলিয়ে ছেড়েছেন তিনি। মোটে কয়েক বছর আগেও এত দূরে বসে এ হেন ‘মিষ্টি বাঙালি লৌকিকতা’ কার্যত অসম্ভব ছিল। এখন যা ভৌগোলিক দূরত্ব অতিক্রম করেছে। অনলাইন কেনাবেচার পোর্টালগুলির বেশ কয়েকটিতে এত দিন লাড্ডু, বরফি, গাজরের হালুয়াদের ভিড়ে বাঙালি মিষ্টি খুঁজে পেতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রাখতে হতো। ইদানীং সেই ফাঁক অনেকটাই ভরাট হয়েছে। একটি সর্বভারতীয় ক্যুরিয়র সংস্থার ডিরেক্টর (কাস্টমার এক্সপিরিয়েন্স) অর্পিতা চক্রবর্তী মিত্র যেমন বলছেন, পুজোর আগে থেকেই কলকাতার মিষ্টির জন্য অনলাইন অর্ডার বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। আশা করা যায়, ভাইফোঁটা অবধি এই চাহিদা চলবে।’’ কে সি দাশের টিনের রসগোল্লা ইতিমধ্যে কয়েকটি নামজাদা সংস্থা অনলাইনে আমেরিকায় কেনাকাটার বন্দোবস্তও করেছে।

সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থার কর্তা সাহুল হামিদ আবার মিষ্টি বিপণনের রাস্তা মসৃণ করতেই আগামী মাসে কলকাতায় আসছেন। লাড্ডু, বরফি, মহীশূর পাকের পরে টিনের রসগোল্লা সিঙ্গাপুরের দোকানে দোকানে পেশ করে সম্প্রতি দারুণ লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। বলছেন, ‘‘এ বার মিষ্টি দই আর আমার প্রিয় কালোজামকেও নিয়মিত সিঙ্গাপুরে রফতানির চেষ্টা করব। লন্ডনেও কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’

বেঙ্গালুরু-পুণে কিংবা দূর বিদেশে প্রবাসী ছেলে-বৌমার কাছে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার সময়ে হয়রানির অভিজ্ঞতা অনেক বেচরি বাঙালি মা-বাবারই আছে। রসালো চ্যাটচেটে মিষ্টি বিমানে তুলতে দিতে রাজি নন কর্তৃপক্ষ। অগত্যা চোখের জল মুছতে মুছতে সাধের মিষ্টি বিমানবন্দরে রেখেই উড়ান ধরতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। সেই অভিজ্ঞতাটাই ইদানীং খানিকটা পাল্টাচ্ছে। অনলাইন বা টেলিফোনের অর্ডারের ভিত্তিতেও কলকাতার বেশ কয়েকটি বিপণি থেকে নানা কিসিমের মিষ্টি কাছে-দূরে পাড়ি দিচ্ছে।

এমনিতে উত্তর ভারতের মিষ্টির তুলনায় বাঙালি মিষ্টির ‘সুখী শরীর’। কড়াপাকের মিষ্টি ছাড়া অন্য কিছু দূরে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চান না অনেকেই। কিন্তু একেলে প্যাকিংয়ের সৌজন্যে ছবিটা পাল্টাচ্ছে। নোনতা নিমকি-খাস্তা কচুরি পাঠাতে নাইট্রোজেন ফ্লাশড প্যাকিংয়ের সাহায্য নিচ্ছেন কোনও কোনও মিষ্টি বিক্রেতা। দই বা রাবড়ির মোড়ক মুড়ে রাখা হচ্ছে বিশেষ ধরনের ‘ড্রাই আইসে। ভবানীপুরের শতাব্দী-প্রাচীন বলরাম মল্লিকের দোকানের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক বা রিষড়ার ফেলু মোদকের কর্তা অমিতাভ মোদকেরা আত্মবিশ্বাসী, দই-রাবড়ি থেকে নানা কিসিমের রসের মিষ্টিও দূরে পাঠানো সম্ভব। ক্যুরিয়র সংস্থার কর্ত্রী অর্পিতাদেবীও বলছেন, ‘‘প্যাকিংটা মিষ্টির দোকানকেই করে দিতে হবে। ওঁরা চাইলে আমরা তাঁদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মিষ্টি পাঠানোর কাজ করতেই পারি।’’

কে সি-দাশ কর্তা ধীমান দাশ বলছেন, ‘‘রসগোল্লা ছাড়া অন্য কিছু মিষ্টির শেল্‌ফ লাইফ বাড়িয়ে দূরে পাঠানোর উপযোগী প্যাকিংয়ের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ কলকাতার অন্যতম সাবেক সন্দেশ-স্রষ্টা নকুড়ের তরুণ কর্তা পার্থ নন্দীও মানছেন, ‘‘কলকাতার বাইরে সন্দেশের অনলাইন চাহিদার জোগান দেওয়াও ক্রমশ একটা গুরুদায়িত্ব হয়ে উঠছে।’’ দক্ষিণ কলকাতার একটি সংস্থা আবার কলকাতা ও হুগলির কিছু দোকানের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। তাঁদের কর্তা সুরজিৎ কুণ্ডুর দাবি, এই ভাইফোঁটায় সাবেক খাজা, গজা থেকে শুরু করে সন্দেশ, দরবেশসুদ্ধ মিষ্টির থালার অর্ঘ্য ধান-দুব্বোসমেত সুন্দর করে সাজিয়ে ভিন শহরে পাঠাতে প্রস্তুত আমরা।

Bengali Sweet Foreign export
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy