Advertisement
E-Paper

পলিসিস্টিক ওভারির শিকার অনেকেই, কী ভাবে সামলাবেন, উপসর্গই বা কী?

সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে অভ্যন্তরীণ ভাবে কোনও ব্যথা হয় না বা বাহ্যিক কোনও চিহ্ন থাকে না বলে অনেকেই এই অসুখ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। আর এটাই ভয়ের।

মনীষা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৫৭
অসচেতনতার হাত ধরেই মেয়েদের ডিম্বাশয়ে দেখা দিচ্ছে সিস্টের উপস্থিতি। ছবি: শাটারস্টক।

অসচেতনতার হাত ধরেই মেয়েদের ডিম্বাশয়ে দেখা দিচ্ছে সিস্টের উপস্থিতি। ছবি: শাটারস্টক।

বিশ্বায়নের যুগে কর্মব্যস্ততা আর আধুনিক ও যন্ত্রনির্ভর জীবনযাপনের হাত ধরে মেয়েদের শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা অসুখ। এমন জীবনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম। এই সবের যোগফলে ডিম্বাশয়ে দেখা দিচ্ছে একাধিক সিস্ট। চিকিৎসার পরিভাষায় এর নাম ‘পলিসিস্টিক ওভারি’ বা ‘পিসিওডি’।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ আদতে কী?

‘পলি’ কথার অর্থ ‘বেশি’। চিকিৎসকরা বলছেন, ৬ মিলিলিটার পর্যন্ত ওজন হতে পারে এই সিস্টগুলির। প্রতি ডিম্বাশয়ে ১২-১৫টা সিস্ট আকছারই দেখা দেয়। ভারী শরীর যেমন এই অসুখ ডেকে আনে, তেমনই ডায়াবিটিক হলে ও খুব বেশি পরিমাণে বাইরের খাবার খেলে এর আশঙ্কা বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ।

পিসিওডি নিয়ে এ দেশে মহিলারা যথেষ্ট সচেতন নন বলেই মনে করেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরা। তাঁর মতে, এই অসুখ যত না শারীরিক কারণে হয়, তার চেয়েও বেশি হয় অসচেতনতা থেকে। আজকাল কর্মব্যস্ত যুগের দোহাই দিয়ে মেয়েরা নিজস্ব খাওয়াদাওয়া ও ওজন কমানোর দিকটা ভেবেও দেখেন না। জিমে গেলে বা শরীরকে টোনড রাখলেই কেবল হবে না, চাই ভিতর থেকে সুস্থতাও। তাই গর্ভধারণের সময় আজকাল এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বেশির ভাগ মেয়েকেই। তবে ছোট আকারের সিস্ট অতটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু গর্ভাবস্থাতেও বাড়ে সিস্ট। তাই সিস্টের লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: কফিও কমায় মেদ, তবে জানতে হবে খাওয়ার নিয়ম

কোথায় সমস্যা?

ছোট ছোট টিউমারের আকারে দেখতে এই সিস্টগুলো তরল বা অর্ধতরল উপাদান দিয়ে তৈরি। চিকিৎসকের মতে, দু’টি ঋতুচক্রের মাঝে একটি ডিম্বাণু এসে হাজির হয় জরায়ুতে। কিন্তু ডিম্বাশয়ে সিস্ট থাকলে ডিম্বাণু সম্পূর্ণ হতে পারে না ও ডিম্বাশয় ছাড়িয়ে জরায়ুর দিকে এগোতেও পারে না। এ দিকে শুক্রাণু নিষিক্ত হওয়ার জন্য এসে পড়লেও তার উপযুক্ত ডিম্বাণুকে সিস্টের ভিড়ে খুঁজেই পায় না। ফলে একটা সময়ের পর বিনষ্ট হয়ে যায়। এই অসুখে সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে অভ্যন্তরীণ ভাবে কোনও ব্যথা হয় না বা বাহ্যিক কোনও চিহ্ন থাকে না বলে অনেকেই এই অসুখ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। তবে পিরিয়ডের সময় ব্যথা বা স্তনে ব্যথা হওয়ার অন্যতম একটি কারণ এই অসুখ।

গর্ভধারণের সময় আজকাল ‘পিসিওডি’-র সম্মুখীন হতে হয় বেশির ভাগ মেয়েকেই।

সিস্টের আকার বড় হলেও নানা সমস্যা হয়। তখন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়াও জরুরি। এই অসুখের বাড়াবাড়িতেই অনেক সময় কোমরে টানা ব্যথা, অনিয়মিত ঋতুচক্র, যৌনতার সময় সর্বদা বেদনা ইত্যাদিও হতে পারে।

কেন হয়?

এই অসুখ হওয়ার নেপথ্যে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। অনিয়মিত ও তেল-মশলাদার বাইরের খাবার বেশি মাত্রায় খাওয়া এই অসুখের অন্যতম কারণ। ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারা ও সে বিষয়ে উদাসিনতাও এই অসুখ ডেকে আনে। এন্ড্রোমেট্রিওসিস, গর্ভধারণের সময় নানা হরমোনজনিত সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া থেকেও এই অসুখ দানা বাঁধে। মূত্রনালির সংক্রমণ থেকেও হতে পারে ওভারিতে সিস্ট।

আরও পড়ুন: আবহাওয়া পরিবর্তনে অসুখ ঘরে ঘরে, এ সব উপসর্গ দেখেই বুঝে যান কী ধরনের জ্বর

কোন বয়স বিপজ্জনক

সদ্য পিরিয়ড শুরুর পর মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে ভারী চেহারার মেয়েরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এর পর ২০-৩০ বছরের সময়, অর্থাৎ যাঁদের বিয়ের পর থেকেই সন্তানধারণের সমস্যা ও অনিয়মিত পিরিয়ড অথবা পিরিয়ডের সময় নানা জটিলতা লক্ষ্য করা গেলে এই অসুখে আক্রান্ত কি না তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলে। তবে সব সময় যে পিরিয়ড অনিয়মিত হবে বা ব্যথা থাকবেই এমন কোনও কথা নেই। এ ছাড়া ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে ওজন বেশি, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ন্ত্রণ এই অসুখ ডেকে আনে।

জীবনযাত্রা পরিবর্তন ও খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকটা কমানো যায়।

চিকিৎসা

রোগ ও রোগীর ধরন বুঝে চিকিৎসা শুরু করা হয়। সব সময় ওষুধ লাগে এমনটা নয়। বরং প্রাথমিক অবস্থায় ওজন কমিয়ে ও বাইরের খাওয়াদাওয়া বন্ধ করলেই অনেক সময় সমস্যা নির্মূল হয়। তবে এই রোগের চিকিৎসায় প্রথম থেকেই মেয়েদের গর্ভধারণে যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকটা নজরে রেখেই চিকিৎসা করা উচিত।

ওষুধের প্রয়োজন পড়লে বুনিয়াদী স্তরে ক্লিটোরাল এনলার্জমেন্ট রোধ করাটাই চিকিৎসকদের কাজ হয়। এ ছাড়া এন্ড্রোজেনিক ওভার অ্যাকটিভিটি টেস্ট, হরমোনাল চিকিৎসা, লিপিড প্রোফাইলের স্তর সব কিছু দেখেশুনে চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। একটা বয়সের পর ওষুধে না কমতে চাইলে এন্ড্রোমেট্রিয়াল বায়োপ্সির দিকেও এগোতে হতে পারে।

কমে কি?

চিকিৎসকদের মতে, জীবনযাত্রা পরিবর্তন ও খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকটা কমানো যায়। নিয়মিত আধ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি, শরীরচর্চা করলে প্রাথমিক ভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে ওষুধের প্রয়োজন পড়লে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার পাশাপাশি ওষুধ নিয়মিত খেয়ে গেলে ভয় থাকে না। তবে প্রথম থেকে সচেতন না হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়তে পারে।

Polycystic Ovary PCOD Health Tips Fitness Tips Pregnancy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy