Advertisement
E-Paper

শহরে এনসেফ্যালাইটিস, জানে না পুরসভা

উত্তরবঙ্গে মহামারীর আকার নেওয়া জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত এক রোগী গত তিন দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন এই শহরেরই এক হাসপাতালে। অথচ সে কথা জানাই নেই কলকাতা পুরসভার! অথচ শহরের কোনও হাসপাতালে কোনও সংক্রমণ নিয়ে রোগী ভর্তি হলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য ভবনের তরফে তা সঙ্গে সঙ্গে পুরসভাকে জানানোর কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৩
শহর কলকাতায় পা বেঁধে গাড়িতে তোলা হচ্ছে শুয়োর। —নিজস্ব চিত্র

শহর কলকাতায় পা বেঁধে গাড়িতে তোলা হচ্ছে শুয়োর। —নিজস্ব চিত্র

উত্তরবঙ্গে মহামারীর আকার নেওয়া জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত এক রোগী গত তিন দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন এই শহরেরই এক হাসপাতালে। অথচ সে কথা জানাই নেই কলকাতা পুরসভার! অথচ শহরের কোনও হাসপাতালে কোনও সংক্রমণ নিয়ে রোগী ভর্তি হলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য ভবনের তরফে তা সঙ্গে সঙ্গে পুরসভাকে জানানোর কথা। কিন্তু গুয়াহাটি থেকে সংক্রমণ নিয়ে আসা ওই রোগী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত বুধবার রাতে ভর্তি হলেও এখনও তা পুরসভাকে জানানোই হয়নি।

ঠিক সময়ে সংক্রমণের খবর না জানানোয় শুক্রবারই উত্তরবঙ্গের তিন স্বাস্থ্য কর্তাকে সাসপেন্ড করে তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতার স্বাস্থ্য-কর্তাদের উপরে তার কোনও প্রভাব কিন্তু পড়েনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ-কতর্পক্ষের দাবি, তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য ভবন পুরসভাকে কিছু জানায়নি কেন? স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস শনিবার রাতে বলেন, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেউ ভর্তি আছেন কি? আমি জানি না। স্বাস্থ্য-কর্তারা জানেন কি না, জানি না। আমাকে কথা বলতে হবে।”

আবার জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগী শহরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে জানলেই যে কলকাতা পুরসভা লোকলস্কর নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তা-ও কিন্তু নয়। এবং তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের কথাতেই। তিনি বিষয়টিকে আমলই দিতে চাননি। কেন? অতীনবাবু শনিবার বলেন, “যে প্রজাতির মশা জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে নিয়ে যায়, সেই প্রজাতির মশা কলকাতায় নেই। ফলে কে কলকাতার কোথায় এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে ভর্তি হলেন, তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।” অতীনবাবুর আরও সংযোজন, “আমরা শুধু ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি নিয়ে ভাবি। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে আমাদের ভাবার কিছু নেই।”

কিন্তু শহরের হাসপাতালে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগী কিংবা এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ থাকা রোগী ভর্তি হয়েছেন, তা জানার পরেও কি পুরসভা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? মেয়র পারিষদের জবাব, “শহরের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে কোথাও কোনও এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত মানুষ ভর্তি হচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে আমরা আপাতত কোনও নজরদারি চালাচ্ছি না।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁদের হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে এনসেফ্যালাইটিসের মতো উপসর্গ এবং ধুম জ্বর নিয়ে অন্তত ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখনও তাঁদের রক্ত পরীক্ষা না হওয়ায় রোগটা কী, তা জানা যাচ্ছে না।

কেন এখনও হয়নি রক্ত পরীক্ষা? মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই চার জনের রক্ত পরীক্ষার জন্য স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ট্রপিক্যাল জানিয়ে দিয়েছে, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ২ সপ্তাহের আগে তারা দিতে পারবে না। ট্রপিক্যালের ভাইরোলজি বিভাগের চিকিৎসক ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এমন কোনও অভিযোগ তাঁর কানে আসেনি। তিনি বলেন, “গত মঙ্গলবারই এনসেফ্যালাইটিস পরীক্ষার জন্য এসএসকেএম থেকেও একটি রক্তের নমুনা এসেছিল। আমরা এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিয়েছিলাম। রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল।”

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুরসভার এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সহমত নন জীবাণু বিজ্ঞানীদের অনেকেই। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে ব্যাপক সংক্রমণের নিরিখে তাঁদের এক জন বলেছেন, “উপসর্গ মিলে গেলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ওই এলাকায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ যে ঘটতে পারে, তা ভাবতেই পারেননি উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য কর্তাদের কেউ কেউ। তখন যদি তাঁরা সতর্ক হতেন, তা হলে এ ভাবে এত লোককে প্রাণ হারাতে হত না।”

আর এক জীবাণু-বিজ্ঞানীর মন্তব্য, “ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়ারা কোথায় কবে সক্রিয় হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। আর সেই জীবাণু যারা বহন করবে, সেই মশা-মাছিরাও যে নতুন নতুন এলাকায় চলে আসবে না, তারও কোনও গ্যারান্টি নেই। তাই নির্দিষ্ট কোনও সংক্রমণের রোগী ধরা পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জীবাণুবাহক মশা বা অন্য বাহকেরা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখাটাই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূল কথা।”

কোথায় কোন সংক্রমণের রোগী ভর্তি রয়েছেন, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা না দেখলেও মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো শুয়োর ধরা অভিযান কিন্তু পুরো দমে শুরু করে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।

এ দিন সকালে নিজেদের কর্মী আবাসন থেকে শুয়োর ধরার অভিযান শুরু করে মোট ২৪টি শুয়োর ধরে পুরসভার বিশেষ দল। পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতার ১৫টি বরোর মধ্যে ১০ এবং ১৫ নম্বর বরোয় শুয়োর নেই। বাকি ১৩টি বরোর অধীনে ৩১টি ওয়ার্ডে শুয়োরের ব্যবসা রয়েছে।

encephalitis medical college kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy