Advertisement
E-Paper

হেপাটাইটিস সি ঠেকাতে নয়া ওষুধ

হেপাটাইটিস সি মানেই মৃত্যুর পরোয়ানা। অচিরেই এই ধারণা থেকে মুক্তি মিলতে চলেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কারণ আমেরিকার পথ ধরে এ বার ভারতের বাজারেও আসছে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার একটি বিশেষ ওষুধ এবং মার্কিন মুলুকের চেয়ে বহু গুণ কম দামে। যে ভাবে গরিব মানুষের জন্য নিখরচায় কেমোথেরাপির ব্যবস্থা হয়েছে সরকারি হাসপাতালে, ঠিক সে ভাবেই অদূর ভবিষ্যতে কি হেপাটাইটিস সি-র চিকিৎসারও ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক? ইতিমধ্যেই চিকিৎসক মহলের একাংশ সেই প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৭

হেপাটাইটিস সি মানেই মৃত্যুর পরোয়ানা। অচিরেই এই ধারণা থেকে মুক্তি মিলতে চলেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কারণ আমেরিকার পথ ধরে এ বার ভারতের বাজারেও আসছে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার একটি বিশেষ ওষুধ এবং মার্কিন মুলুকের চেয়ে বহু গুণ কম দামে। যে ভাবে গরিব মানুষের জন্য নিখরচায় কেমোথেরাপির ব্যবস্থা হয়েছে সরকারি হাসপাতালে, ঠিক সে ভাবেই অদূর ভবিষ্যতে কি হেপাটাইটিস সি-র চিকিৎসারও ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক? ইতিমধ্যেই চিকিৎসক মহলের একাংশ সেই প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।

হেপাটাইটিস সি হওয়া মানেই যে সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়, তারও যে ওষুধ রয়েছে এবং সেই ওষুধ ক্রমশ নাগালের মধ্যে আসতে চলেছে সে নিয়ে চর্চা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। কিন্তু বিষয়টা বাস্তবে কী চেহারা নেবে, ওষুধ সংস্থাগুলির পারস্পরিক লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকটাই কম দামে ওষুধ বাজারে আনা সম্ভব হবে কি না, সে নিয়ে সংশয়ও কাটছিল না। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক, ড্রাগ কন্ট্রোল এবং একাধিক ওষুধ সংস্থার মিলিত উদ্যোগে বিষয়টি সম্ভব হয়েছে। আমেরিকায় যে ওষুধের দাম পড়ে ৫০ লক্ষ, এ দেশে সেটাই এক লাখেরও কম দামে মিলতে চলেছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর।

এ দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি-র যে ওষুধ পাওয়া যায় তাতে বড়জোর ৫০ শতাংশ রোগী সুস্থ হন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বহু রোগীকে ওই ওষুধ দেওয়াও যায় না। নতুন ওষুধে অন্তত ৯০ শতাংশেরও বেশি রোগী সুস্থ হবেন বলে তাঁদের আশা।

মূলত রক্তের মাধ্যমেই হেপাটাইটিস সি ছড়ানোর ভয় থাকে। ফলে বহু থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোফিলিয়া রোগী এর শিকার হন। ঘন ঘন রক্ত নিতে গিয়ে জেরবার হওয়ার পাশাপাশি এই চিকিৎসার বোঝা বইতে পারে না বহু থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়া রোগীর পরিবারই। আক্ষরিক অর্থেই ধনেপ্রাণে মারা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ ছাড়া ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা না করিয়ে রেখে দিলে তার জের হতে পারে মারাত্মক। সিরোসিস বা লিভার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিই বেশি। লিভার ফাউন্ডেশনের কর্ণধার, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “এত দিন পর্যন্ত আমাদের নাগালের মধ্যে তেমন কার্যকরী চিকিৎসা ছিল না। এ বার আমরা সেটা পেয়ে যাচ্ছি। ফলে লড়াইটা সহজ হবে। আর একাধিক সংস্থা যদি বাজারে ওষুধটা আনে, তা হলে প্রতিযোগিতার কারণে দামটাও বাড়তে পারবে না। ফলে এ কথা বলাই যায় যে হেপাটাইটিস সি রোগীদের সামনে নতুন জীবনের দিশা রয়েছে।”

একই বক্তব্য গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অশোকানন্দ কোনারেরও। তিনি বলেন, “হেপাটাইটিস সি চিকিৎসার জন্য যে ইঞ্জেকশন বাজারে চালু রয়েছে, তার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। হিমগ্লোবিন কমে যায়, প্লেটলেট কমে যায়, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়, হার্টের অসুখ বা জন্ডিস থাকলেও ইঞ্জেকশনটা নেওয়াই যায় না। তাই অনেকেই চিকিৎসার সুযোগটুকুও পান না। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া পথ থাকে না। নতুন ওষুধে সেই সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না।” আটটি ওষুধ সংস্থা ইতিমধ্যেই এই ওষুধ তৈরির লাইসেন্স পেয়েছে। নতুন ওষুধে চিকিৎসার সময়সীমাও অনেকটাই কমবে।

আমেরিকার ওষুধটির কোর্সের খরচ পড়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মতো। এ দেশে সেটাই এক লক্ষের মধ্যে পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই এক লক্ষ টাকাও এ দেশের কত শতাংশ রোগী বহন করতে পারবেন, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে চিকিৎসকদের। অশোকানন্দবাবু বলেন, “হেপাটাইটিস সি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিঃশব্দে থাবা বসায়। রোগটা অনেকটা ছড়ানোর পরে যখন ধরা পড়ে, তখন প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা কত শতাংশ মানুষ সেটা কিনতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”

ওষুধের ওই বিপুল দাম নিয়ে আমেরিকাতেও বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। সরব হয়েছে সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনগুলিও। ভারতে ওই দামের ওষুধ এলে তা অধিকাংশ রোগীর পক্ষেই কেনা সম্ভব নয় বলে ওই ওষুধকে দেশীয় বাজারে আমদানি করার ব্যাপারে কোনও উৎসাহ ছিল না কেন্দ্রেরও। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লিভার বিশেষজ্ঞদের লাগাতার আবেদনের জেরে কেন্দ্রও বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়।

ভবিষ্যতে কি সরকারি হাসপাতালে গরিব রোগীদের জন্য এই ওষুধের ব্যবস্থা করা হবে? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “বহু চেষ্টা সত্ত্বেও রক্ত সুরক্ষা বা ইঞ্জেকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। তাই হেপাটাইসিস সি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে একটা বড় অংশই গরিব মানুষ। সরকার ভবিষ্যতে কোনও প্রকল্পের কথা ভাবতেই পারে। তবে এখনও সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করার পরিস্থিতি আসেনি।”

hepatitis C medicine Soma Mukhopadhyay west bengal health department blood America
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy