Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা উপশমের উপায় কী?

ঋতুস্রাবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লজ্জা, ভয় আর নানা কুসংস্কার। যার জন্য সচেতনতার অভাবই দায়ী। এ সময়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে একটু সচেতন হলে তা এড়িয়ে চলা সম্ভব। জানাচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শুভঙ্কর ভট্টাচার্য১৬ বছর পেরিয়েও ঋতুস্রাব শুরু না হলে তা স্বাভাবিক নয়।

ঋতুবন্ধ বা মেনোপজের পরে রক্তপাত ক্ষতিকর হতে পারে, মত চিকিৎসকের। নিজস্ব চিত্র

ঋতুবন্ধ বা মেনোপজের পরে রক্তপাত ক্ষতিকর হতে পারে, মত চিকিৎসকের। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

প্রশ্ন: মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব শুরুর উপযুক্ত বয়স কত?

ঋতুস্রাব শুরুর বয়স যদিও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, জীবনযাত্রা ও ভৌগোলিক অবস্থানের উপরে নির্ভর করে, তবুও সাধারণ ভাবে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে ঋতুস্রাব শুরু হয়। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। আট বছর বয়সের আগে ঋতু্স্রাব হতে দেখা যায়, একে ‘প্রিকসিয়াস পিউবার্টি’ বলে। এ ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন হলেও উপযুক্ত মানসিক পরিবর্তন না হওয়ার কারণে কিছু সমস্যা দেখা যায়। একই ভাবে, ১৬ বছর পেরিয়েও ঋতুস্রাব শুরু না হলে তা স্বাভাবিক নয়। দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

প্রশ্ন: নিয়মিত ঋতুস্রাব বলতে কী বোঝায়?

প্রতি ২৮ দিন অন্তর (সাত দিন আগে বা পরে) অর্থাৎ ২১ দিন বা ৩৫ দিনের মধ্যে রক্তপাত হলে তা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। এর কম বা বেশি হলে তা অস্বাভাবিক। দুই মাসের সম্ভাব্য তারিখের মধ্যে এক ফোঁটা রক্তপাত হলেও তা অস্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রে কী কী অনিয়মিয়তা দেখা দিতে পারে?

সময়ে ঋতুস্রাব শুরু না হওয়া, ঋতুস্রাবের পরিমাণ বেশি হওয়া বা নির্দিষ্ট দিন অন্তর ঋতুস্রাব শুরু না হওয়া, এ সব সমস্যাই সাধারণত বেশি দেখা যায়। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা চোখে পড়ে। যেমন, অত্যধিক মাত্রায় রক্তক্ষরণ। একে ‘পিউবার্টি মেনোরজিয়া’ বলে। এ ক্ষেত্রে ১৫-২০ দিন ধরে রক্তপাত হতে থাকে। এমন হলে চিকিৎসা আবশ্যক হয়ে পড়ে। প্রয়োজনে রক্ত দিতেও হতে পারে। পাশাপাশি, ব্লিডিং টাইম ও ক্লটিং টাইম দেখে থাইরয়েড পরীক্ষার পরামর্শও দেওয়া হয়।

আবার, সাধারণত প্রতি মাসে ২০-৮০ মিলিলিটার ঋতুকালীন রক্তপাত স্বাভাবিক ধরা হয়। ৫০ মিলিলিটারের কম রক্তপাত হলে তা সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও হাই ক্যালোরি ডায়েটে ওজন বেড়ে যায়। এর থেকে এমন সমস্যা হয়। বয়সের সঙ্গে ওজন ও উচ্চতায় সামঞ্জস্য রাখতে হবে। তা হলেই ঋতুস্রাব নিয়মিত হবে।

প্রশ্ন: অনেকের কালো বা গাঢ় খয়েরি রঙের রক্তপাত হয়। জমাট বাঁধা রক্তও বেরোয়। এ ক্ষেত্রে সমাধান কী?

বেশি রক্তপাত হলে অনেক সময়ে রক্ত তরল অবস্থায় না বেরিয়ে জমাট বেঁধে বেরোয়। অধিক মাত্রায় রক্তক্ষরণের জন্য এমন হতে পারে। তবে রক্তের রঙ কালো বা গাঢ় খয়েরি হলে বোঝা যায়, তলপেটে কোনও সমস্যা রয়েছে। এগুলিকে ‘পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ়’ বলা হয়। যোনিদ্বার ও ফেলোপিয়ান টিউবে সংক্রমণ হলেও এমন হয়। পরিষ্কার জলে স্নান, পরিষ্কার কাপড় ব্যবহারে এ সব সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়।

প্রশ্ন: এ সময় অনেকের তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এমনকি পা, হাঁটু অবশ হয়ে গিয়ে চলতে ফিরতে অসুবিধা হওয়াও খুব বিরল নয়। এমন কেন হয়?

ঋতুস্রাব সময়কালীন যন্ত্রণাকে ‘ডিসমেনোরিয়া’ বলে। এটি দু’ধরনের হতে পারে। ঋতুস্রাবের প্রথমে তলপেটে বেশি ব্যথা হয়, একে ‘প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া’ বলে। কমবয়সি, অবিবাহিতদের ক্ষেত্রেই এটা বেশি দেখা যায়। অন্য দিকে, তলপেটে সংক্রমণ, ফাইব্রয়েড, পলিপ বা এন্ডোমেট্রিয়োসিসের কারণে ব্যথা হলে তাকে ‘সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া’ বলে। এ ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব শুরুর ২-৩ দিন আগে থেকে তলপেটে, পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। রক্তপাত কমতে থাকলে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে যায়। সাধারণত সম্তান জন্মানোর পরে এই সমস্যা কমে যায়। তবে ব্যথার সমস্যা যদি দিনদিন বাড়তে থাকে, নতুন করে ব্যথা শুরু হয় বা ঋতুস্রাব শেষের পরেও ব্যথা থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

প্রশ্ন: ব্যথা উপশমের উপায় কী?

প্রথমত মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। ব্যথার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া বা ওই নিয়ে বেশি ভাবা কাজের কথা নয়। এতে সমস্যা আরও বাড়বে। খুব বেশি ব্যথা হলে গরম জলে সেঁক নিতে হবে। ‘প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া’র ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টিস্পাসমোডিক’ ওষুধ ব্যবহার নেওয়া যায়। তবে ব্যথা কমানোর জন্য বাজারচলতি পেইনকিলার না খাওয়াই ভাল।

প্রশ্ন: ঋতুস্রাবের সময়ে কী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত? এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কতটা জরুরি?

ঋতুকালীন সময়ে পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বেশির ভাগ সমস্যাই ঠিকঠাক স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা এবং অপরিচ্ছন্নতার কারণে হয়ে থাকে। পরিচ্ছন্ন সুতির অন্তর্বাস পরতে হবে। প্রতি দিন পরিষ্কার সাবান দেওয়া জলে ধুতে হবে। ধোয়ার পরে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। কাপড় ব্যবহার করলেও তা নিয়মিত কেচে চড়া রোদে শুকিয়ে ফের ব্যবহার করতে হবে। তবে ন্যাপকিন ব্যবহারই স্বাস্থ্যসম্মত। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে। পাশাপাশি, এ সময়ে পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে।

প্রশ্ন: কাপড় ব্যবহারে সমস্যা কী?

সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা ও রোদে শুকানো কাপড় ব্যবহারে কোনও সমস্যা নেই। তবে কাপড় অপরিষ্কার থাকলে তা থেকে যোনিতে সংক্রমণ হতে পারে। এমনকি, ঘা হয়ে দুর্গন্ধও ছড়াতে পারে। ঋতুস্রাবের সময়ে রোজ পরিষ্কার জলে স্নান করতে হবে। অনেকে দুর্গন্ধ এড়াতে বাজারচলতি পাউডার বা সুগন্ধি ব্যবহার করেন। গোপনাঙ্গে কখনও এ ধরনের জিনিসগুলি ব্যবহার করা উচিত নয়।

প্রশ্ন: বাজারে যে ন্যাপকিন পাওয়া যায় তা নাইলনের হওয়ায় পরিবেশ বান্ধব নয়। তাই বর্তমানে সুতির ন্যাপকিনের বেশ চল হয়েছে। এগুলো কি ব্যবহার করা যেতে পারে?

অবশ্যই ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা ঠিকমতো পরিষ্কার হওয়া জরুরি। পারে। শুকিয়ে যাওয়া রক্ত লেগে থাকলেও তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে।

প্রশ্ন: ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ কী? এগুলির ব্যবহার কি স্বাস্থ্যসম্মত?

এটি সিলিকনের তৈরি ফানেলাকৃতির বস্তুবিশেষ। ঠিকভাবে ব্যবহার করলে নিরাপদ। এটি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব।সর্বাধিক পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। সাধারণত ২৪ থেকে ২৮ মিলিলিটার রক্ত ধরে এতে। প্রতিদিনের ঋতুস্রাবের শেষে গরম জলে কাপ ধুয়ে ফেলতে হবে। চার থেকে বারো ঘণ্টা এক টানা কাপ পরে থাকা যায়। বেশি রক্তপাত হলে তখন ন্যাপকিন নিতেই হবে।

প্রশ্ন: ঋতুবন্ধ বা মেনোপজের সময় কখন? এর লক্ষণই বা কী?

৪০ বছরের পর থেকেই মহিলাদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে শুরু করে। আমাদের দেশে মেনোপজের সময় ধরা হয় ৫২-৫৫ বছর বয়সকে।

এ সময়ে অনিদ্রা, যোনিদ্বারে শুষ্কতা, হঠাৎ করে ঘাম দেওয়া ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম লাগা, ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। খিটখিটে ভাব লক্ষ করা যায়। সহবাসেও অনিচ্ছা তৈরি হয়।

প্রশ্ন: গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে ঋতুস্রাবে কি তার কোনও প্রভাব পড়ে?

সাধারণ ভাবে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। তবে যখন-তখন গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তখন তা নিয়মিত করতে আবার ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।

প্রশ্ন: মেনোপজের পরে রক্তপাত কি ক্ষতিকর?

অবশ্যই। এ সময়ে এক ফোঁটা রক্ত বেরোলেও তা ক্ষতিকর। ইস্ট্রোজেন কম বেরোনোয় এ

সময়ে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে থাকে না। হৃদরোগের আশঙ্কাও থাকে। মেনোপজের পরে ‘প্যাপস্মিয়ার’ পরীক্ষা ও বায়োপসি করলে ক্যানসার আছে কি না তা জানা যায়। সাধারণত সারভাইভাল ক্যানসার ও জরায়ুর ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে। এ সব এলাকায় সারভাইভাল ক্যানসারের প্রবণতা রয়েছে।

সাক্ষাৎকার: সুজিত মাহাতো

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Periods Health Awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE