Advertisement
E-Paper

নেই টেকনিশিয়ান, কাজ স্তব্ধ পিজি-র নিউক্লিয়ার মেডিসিনে

কয়েক কোটি টাকা দামের যন্ত্র। সাজানো-গোছানো বিভাগ। কিন্তু কোনও রোগী নেই। তাই বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রতি দিন এসে চা খেয়ে, গল্পগুজব করে চলে যান। এ ছাড়া তাঁদের কিছু করারও নেই। কারণ সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে এসএসকেএম হাসপাতালে যে বিভাগটি চালু করা হয়েছিল, এক জন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানের অভাবে গত তিন বছর সেখানে কাজ বন্ধ। সবেধন নীলমণি এক জন টেকনিশিয়ান ছিলেন।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩১

কয়েক কোটি টাকা দামের যন্ত্র। সাজানো-গোছানো বিভাগ। কিন্তু কোনও রোগী নেই। তাই বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রতি দিন এসে চা খেয়ে, গল্পগুজব করে চলে যান। এ ছাড়া তাঁদের কিছু করারও নেই। কারণ সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে এসএসকেএম হাসপাতালে যে বিভাগটি চালু করা হয়েছিল, এক জন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানের অভাবে গত তিন বছর সেখানে কাজ বন্ধ। সবেধন নীলমণি এক জন টেকনিশিয়ান ছিলেন। তিনিও সরকারি চাকরি ছেড়ে বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দেওয়ায় সরকারি পরিকাঠামোয় রাজ্যের অন্যতম নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগটিতে কার্যত তালা ঝুলেছে।

এ ভাবে অর্থ এবং লোকবলের অপচয়ের জন্য চিকিৎসকেরা অবশ্য সরকারি নীতিকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, টেকনিশিয়ানের বেতন চিকিৎসকের চেয়ে বেশি হবে না, এমন সরকারি নিয়মই এর জন্য দায়ী। এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রও স্বীকার করে নিচ্ছেন, বেতনের জন্যই এত সমস্যা হচ্ছে প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানদের পেতে। সরকার যে বেতন দিচ্ছে, তাতে কোনও টেকনিশিয়ানই রাজি হচ্ছেন না। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে তাঁরা এর চেয়ে অনেক বেশি বেতন পান। ফলে বছরের পর বছর পদটি খালিই থেকে যাচ্ছে। বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, “রাজ্যে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে বিভিন্ন হাসপাতালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান যন্ত্রের ছড়াছড়ি। তা হলে এখানেই বা পিপিপি মডেলের কথা ভাবা হচ্ছে না কেন?

এ ভাবে বছরের পর বছর অকেজো পড়ে থেকে যন্ত্রও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যেখানে এত আকাল, সেখানে চিকিৎসকদের স্রেফ বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে। কেন শিক্ষা নিচ্ছে না রাজ্য সরকার?”

এসএসকেএম হাসপাতালের এই ‘নিউক্লিয়ার অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ বিভাগটি অচল থাকায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন থাইরয়েড, হাড়, হার্ট এবং লিভার ক্যানসারের অসংখ্য রোগী। ২০১০ সালে বিভাগটি চালু হয়। তার আগে পাঁচ বছর বিভাগ খোলার প্রস্তুতি চলেছিল। গামা ক্যামেরা নামে একটি যন্ত্র এক বার খারাপ হওয়ার পরে ফের সেটি কেনা হয়েছিল। পড়ে থেকে থেকে ফের সেই বহু মূল্য যন্ত্রটি খারাপ হওয়ার জোগাড়।

কবে এই বিভাগ ফের চালু হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট উত্তর স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে নেই। স্বাস্থ্য পরিষেবায় কর্মীর আকাল একটা বড় সমস্যা। তা সত্ত্বেও রাজ্য জুড়ে হাসপাতালে শয্যা বাড়ছে, চালু হচ্ছে একাধিক নতুন বিভাগ। কিন্তু তাতে সত্যি পরিষেবার উন্নতি হচ্ছে নাকি কাগজে-কলমে সংখ্যাই বাড়ছে শুধু, সেই প্রশ্নও ফের সামনে এসেছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই বিভাগটিকে রাজ্যের আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার অন্যতম নজির বলে তুলে ধরা হয়েছিল। সেই ‘নজির’ এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছে গোটা স্বাস্থ্য দফতর।

এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “থাইরয়েডের চিকিৎসার জন্য রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। ওই বিভাগে সেটা হত। এখন সবই রোগীদের বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলা হচ্ছে।”

ক্যানসার বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “ক্যানসার হাড়ে ছড়াল কি না, তা বোঝা যায় বোন স্ক্যান করলে। ওই বিভাগটি অচল থাকায় আমরা রোগীদের বাইরে পাঠাচ্ছি। সেখানে খরচ অনেক বেশি। তাই বহু ক্ষেত্রেই চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থাকছে।”

হাসপাতাল সূত্রে খবর, নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে মাত্র দু’জন টেকনিশিয়ান ছিলেন। এক জন ২০১১ সালে চাকরি ছেড়ে দেন। তার পরে কোনওমতে এক জনকে দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে তিনিও অন্যত্র চলে যাওয়ায় সমস্ত কাজই বন্ধ হয়ে যায়। কারণ এই ধরনের বিভাগে ন্যূনতম এক জন টেকনিশিয়ানও না থাকলে বিভাগ চালানোর অনুমতি দেয় না ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র।

প্রদীপ মিত্র বলেন, “টেকনিশিয়ানের বেতনের বিষয়টিতেই সব আটকে যাচ্ছে। কর্মীদের আকৃষ্ট করতে গেলে সরকারি তরফে আরও তৎপরতা, আরও ইনসেনটিভ-এর ব্যবস্থা প্রয়োজন। আমরা চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করছি। দেখা যাক, সমস্যার সমাধান হয় কি না।”

কেন বেতনের বিষয়টিতে নিয়ম বদলাচ্ছে না রাজ্য সরকার? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সরকারি নিয়ম এত সহজে বদলায় না। প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে। সবটাই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।”

soma mukhopadhyay nuclear medicine latest news onine news PG sskm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy