হাওড়ার বেলগাছিয়ায় শুয়োরের মুক্তাঞ্চল। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
১০ ফুট লম্বা, ৬ ফুট চওড়া, ৪ ফুট উঁচু। চার পাশে এবং উপরে লোহার জাল। সেই জাল আবার ঢাকা মশারি দিয়ে। এমনই ৫০টি খোঁয়াড়ে ঠাঁই হতে চলেছে হাওড়া শহরের শুয়োরদের। এর পরেও মশা যাতে কোনও ভাবেই তাদের নাগাল না পায়, সে জন্য নিয়মিত ছড়ানো হবে মশা মারার তেল, ধোঁয়া। শুয়োরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খোঁয়াড়ে আসবেন পশু চিকিৎসক। পর্যাপ্ত আলোর পাশাপাশি শুয়োরের গতিবিধি নজরে রাখতে বসছে সিসিটিভিও।
জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের মোকাবিলায় এমনই ব্যবস্থা নিচ্ছে হাওড়া পুরসভা। তৃণমূল পুরবোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তৈরি করে ফেলা হচ্ছে খোঁয়াড়গুলি। মেয়র রথীন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আজ, বুধবারই শুয়োরদের খোঁয়াড়ে ঢোকানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার মেয়র বলেন, “হাওড়া শহরে ৯টি জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে খোঁয়াড়গুলি তৈরি করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকায় শুয়োরের মালিকদের বলা হয়েছে, পুলিশ বা পুরসভার সঙ্গে কথা বলে শুয়োরের সংখ্যা নথিভুক্ত করতে। শুয়োরদের ধরে এনে ওই খোঁয়াড়ে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছে তাঁদেরই।”
হাওড়ায় এমনিতেই বস্তির সংখ্যা বেশি। এই সব বস্তির বহু বাসিন্দারই জীবিকা মূলত শুয়োর চাষ। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুয়োরের সংখ্যা বেশি এমন ন’টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বেলগাছিয়া ভাগাড়, পিলখানা, শিবপুর থেকে শালিমার পর্যন্ত গঙ্গার তীর বরাবর এলাকা, টিকিয়াপাড়া, ফকিরবাগান, সত্যবালা হাসপাতালের কাছে, পুরসভার ৪ নম্বর বরো অফিস সংলগ্ন এলাকা, সালকিয়ার বিক্রম বিদ্যালয়ের পিছনে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া গেস্টকিন কারখানার কাছে শুয়োরের সংখ্যার নিরিখে মোট ৫০টি খোঁয়াড় তৈরি হচ্ছে। হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) গৌতম চৌধুরী বলেন, “খোঁয়াড়গুলি চার দিকে ও মাথার উপরেও লোহার জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। যাতে শুয়োরেরা বেরিয়ে যেতে না পারে। মশা ঢোকা আটকাতে সেই জালের উপর থাকবে মশারি।”
গৌতমবাবু জানান, এক-একটি অঞ্চলে খোঁয়াড়ে রাখা শুয়োরদের স্বাস্থ্যের উপরে নজরে রাখতে এক জন করে পশু চিকিৎসক এবং একশো দিনের কাজের আওতায় থাকা ৫ জন করে কর্মী থাকবেন। পুরো ব্যবস্থায় নজর রাখতে বসছে একটি করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
কিন্তু এতগুলি খোঁয়াড় কেন? হাওড়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, “একসঙ্গে অনেক শুয়োর রাখলে নিজেদের মধ্যে মারামারি-সহ নানা সমস্যা হতে পারে। তাই এলাকায় শুয়োরের সংখ্যার উপরে খোঁয়াড়ের সংখ্যা নির্ভর করছে। যেমন, বেলগাছিয়া ভাগাড়ে প্রায় হাজার দুয়েক শুয়োর রয়েছে। সেখানে তৈরি হচ্ছে ১০টি অস্থায়ী খোঁয়াড়।”
মেয়র এ দিন জানান, এনসেফ্যালাইটিসের মোকাবিলায় এই ব্যবস্থা ছাড়াও পুরসভা পাড়ায় পাড়ায় নর্দমা এবং শৌচাগারে মশার লার্ভা মারার তেল এবং কামান দিয়ে মশা মারা ধোঁয়া ছড়াবে। বাড়ানো হবে জনসচেতনতাও। আগামী শুক্রবারের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে এ কাজে নামানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy