Advertisement
১০ মে ২০২৪
পুজোর ক’দিন ভূরিভোজ একটু বেশিই হয়। ফলে গ্যাস, অম্বল, অ্যাসিডিটি আর ওজনবৃদ্ধির আশঙ্কা। এ বার শরীর সুস
Fitness

ভিতর-বাহিরে অসুখে-অম্বলে

খাবারের পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখবেন। অতিরিক্ত পরিমাণে কোনও কিছুই খাবেন না। ধীরে ভাল করে চিবিয়ে খাবেন। হজম ভাল হবে। 

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০০:০৬
Share: Save:

আনন্দোৎসবে খাবারের পাল্লা ভারী। কিন্তু তেল-ঝাল-মশলায় পেটের সমস্যা হতেও বেশি সময় লাগে না। তাই পুজোর পরে এ বার ক’দিন পেটকে বিশ্রাম দেওয়ার পালা। শরীর সুস্থ রাখতে হালকা ব্যায়ামও শুরু করতে হবে।

কী কী খাবেন?

•ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়াল বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, তেলমশলার খাবার খাওয়ায় কোষ্ঠের ভাল ব্যাকটিরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই বন্ধু ব্যাকটিরিয়াদের ফিরিয়ে আনার পালা। রোজকার খাবারে টক দই রাখুন। দই ভাল প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।’’ কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখে। কোষ্ঠের স্বাস্থ্যও বজায় রাখে।

•খাবারে হালকা ঝোলজাতীয় পদ রাখুন। যে কোনও এক মশলার ফোড়নে মাছের ঝোল করে খেতে পারেন। ঝিঙে, পেঁপে, লাউ, পটল, আলু (ডায়াবিটিস না থাকলে) দিয়ে হালকা ঝোলও খেতে পারেন।

•লাউ ও চালকুমড়োর রসও শরীরের জন্য খুব ভাল। পেট ঠান্ডা করে। পাতিলেবুর রস দিয়ে খেতে পারেন।

•প্রিয়ার কথায়, ‘‘অতিরিক্ত ভাজাভুজি খাওয়ায় অ্যাসিড হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই অ্যাসিডিটির রাশ টানতে শরীরে অ্যালকালাইন বেস পোক্ত করতে হবে। তা পাওয়া যাবে আনাজপাতি থেকে। রোজ সকালের খাবারে অনেক তাজা আনাজপাতি রাখতে হবে স্যালাডের আকারে। কচি কুমড়ো, শসা, টম্যাটো, লেটুস, লাউ ইত্যাদি আনাজ ভাল করে কুচি করে স্যালাড তৈরি করে খান। মনে রাখবেন, এতে নুন দেওয়া চলবে না।’’

•পাতিলেবুর রস, আদা কুচি, শসার টুকরো দিয়ে ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করতে পারেন। এই জল শরীরকে ডিহাইড্রেটেড হতে দেয় না। অন্য দিকে কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতেও সহায়তা করে।

•ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, ‘‘হুট করে কার্বস বন্ধ করে দেবেন না। কার্বসের পরিমাণ কমিয়ে আনাজপাতি, ডাল জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। এতে এনার্জি পাবেন। প্রোটিনের জন্য মাছ বা ডালেই ভরসা রাখুন। মাংস খেলে স্টু করে খান।’’ স্ন্যাকসে মাখনা, আমন্ড রাখতে পারেন।

•ফলও খেতে হবে। তবে পেয়ারা, তরমুজ, মুসাম্বি... এই ধরনের ফল খেলে উপকার বেশি পাবেন।

রাতের খাবার একটু হালকা রাখবেন। ভেজিটেবল বা চিকেন সুপ খেতে পারেন। ডাল খেতে পারেন।

•রোজ ডাবের জল বা লেমন ওয়াটার রাখতে হবে। এতে শরীরের ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

•মেদ কমাতে ভাতের পরিমাণ কমিয়ে সিউডোসিরিয়ালে ভরসা রাখতে পারেন। ডালিয়া, কিনোয়া, ওটস জাতীয় খাবার খান। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকে। শরীরের টক্সিক ভাব দূর হবে।

•খাবারের পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখবেন। অতিরিক্ত পরিমাণে কোনও কিছুই খাবেন না। ধীরে ভাল করে চিবিয়ে খাবেন। হজম ভাল হবে।

শারীরচর্চাও জরুরি

•পুজোর সময়ে তেলমশলার খাবার বেশি খাওয়ায় গ্যাস-অম্বল যেমন হয়, তেমন শরীরে মেদও জমে বসে। ফিটনেস এক্সপার্ট চিন্ময় রায়ের কথায়, ‘‘পুজোয় বিরিয়ানি, রোলের মতো যে ধরনের তৈলাক্ত খাবার খাওয়া হয়, তাতে ট্রান্স-ফ্যাট থাকে। ফলে তা শরীরে আরও জাঁকিয়ে বসে। পুজোয় প্রচুর খেয়ে পুজোর পরে ব্যায়াম করে চট করে তা ঝরানো যাবে না। তার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।’’

•পেেটর ব্যায়াম করলে গ্যাসের থেকে মুক্তি পাবেন। কিছু আসনও করতে পারেন। যেমন বজ্রাসনে বসলে হজমশক্তি বাড়ে।

•ফিটনেস এক্সপার্ট সৌমেন দাস বললেন, ‘‘সকালে উঠে জগিং করতে বা হাঁটতে যেতে পারেন। বাড়ির ছাদে বা সামনে কোনও পার্ক থাকলে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন।’’ এ বিষয়ে চিন্ময় রায় বললেন, ‘‘মাস্ক পরে জোরে হাঁটা বা জগি‌ং উচিত নয়। একটু ফাঁকা জায়গা দেখে হাঁটুন। ফাঁকা জায়গা না পেলে বাড়িতেই ব্যায়াম করুন। সে ক্ষেত্রে স্পট জগিং করতে পারেন।’’

•বাড়ির সিঁড়িতে বা জলচৌকি থাকলে তার উপরে একবার পা দিয়ে উঠুন, একবার নামুন। এ ভাবে বেশ কয়েকবার করলে পেটের ব্যায়াম অনেকটাই হয়ে যাবে।

•বিশ্ব জুড়ে এই অনিশ্চয়তায় স্ট্রেস বাড়ছে সকলের। ঘুম থেকে উঠে ব্রিদিং এক্সারসাইজ় করতে পারেন। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ছাডুন দশ থেকে কুড়ি বার। কপালভাতিও করতে পারেন। এতে ফুসফুস ভাল থাকবে, ক্লান্তিও কেটে যাবে।

•স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ় করতে পারেন। শরীরের ক্লান্তি কেটে যাবে। শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়বে। কারণ এখন বেশির ভাগ সময়ই কাটছে বাড়িতে বসে। তাই একটু স্ট্রেচিং শরীরকে ওয়ার্মআপ করতে সাহায্য করবে।

•পেটের মেদ কমাতে কিছু কোর এক্সারসাইজ় করতে পারেন। তার জন্য প্ল্যাঙ্ক ও সাইড প্ল্যাঙ্ক রাখতে পারেন ফিটনেস রেজিমে। তবে যাঁরা সবে সবে ব্যায়াম শুরু করছেন, তাঁরা হুট করে সাইড প্ল্যাঙ্ক করতে যাবেন না। প্রথম দিন সাতেক প্ল্যাঙ্ক করুন। এই ব্যায়াম আয়ত্তে এসে গেলে সাইড প্ল্যাঙ্ক শুরু করতে পারেন।

শরীর সুস্থ রাখতে সুষম আহার ও নিয়মিত ব্যায়াম, দুই-ই জরুরি। তাই দুটোই যোগ করুন পুজো-পরবর্তী ফিটনেস রুটিনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Diet Health and Hygiene
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE