E-Paper

হিটস্ট্রোক এড়াতে

কয়েকটি সতর্কতা মেনে চললেই দূরে রাখতে পারবেন হিটস্ট্রোক। জেনে নিন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

ঊর্মি নাথ 

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪৬

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বৈশাখ শুরু হওয়ার আগেই উষ্ণতার পারদ ৪০ ডিগ্রি ছুঁই-ছুঁই। আগামী দিনে গরম আরও বাড়বে। অসহনীয় এই গরমে ঘরে-বাইরের কাজ সামলে সুস্থ থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে হিটস্ট্রোক বা সানস্ট্রোকের। তবে হিটস্ট্রোক হওয়ার আগে পূর্বাভাস পাওয়াই যায়। সর্তক হতে হয় সে সময়েই। জেনে নেওয়া জরুরি এই সমস্যা এলে কী ভাবে সামাল দিতে হবে।

হিটস্ট্রোক কেন হয়?

আমাদের শরীরে যে তাপজনিত সমস্যা হয় তাকে বলে হিট রিলেটেড ইলনেস, এর এক্সট্রিম ফর্ম হিটস্ট্রোক। এ ব্যাপারে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘মানুষের শরীরের ভিতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাইরে যদি ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি থাকে বা তাপমাত্রা নেমে যায় জ়িরোতে, শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৫-ই থাকবে। যে কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে তাপমাত্রা রেগুলেট করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থি। এই জন্য অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার অতি ঠান্ডায় বিভিন্ন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তনালিগুলোকে সঙ্কুচিত করে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। ফলে বাইরে যতই ঠান্ডা থাকুক, শরীরের ভিতরে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে হাইপোথ্যালামাসের কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরের ভিতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজ ঠিক মতো হয় না। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে হার্ট, কিডনি, লিভার বিকল হতে শুরু করে। হার্ট বিট বেড়ে যায়। মাসল ক্র্যাম্প হয়। ব্লাডপ্রেশার কমে যায়। ঘাম কমে যায়, মাথা ঘোরে, কথা অসংলগ্ন হতে পারে, শরীর জ্বরে পুড়ে যাওয়ায় মতো গরম হয়ে যায়, এগুলোই হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণ।’’

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জ্বর নাকি হিটস্ট্রোক?

হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল, জ্বরের মতো গা গরম হয়ে যাওয়া। তাই অনেকেই সাধারণ জ্বরের সঙ্গে পার্থক্য করতে পারেন না। ফলে চিকিৎসা বিভ্রাট হতে পারে। সাধারণ জ্বর হয় শরীরে কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়া আক্রমণ করলে। ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়া একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বেঁচে থাকে। হাইপোথ্যালামাস সেই ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসকে অকেজো করতে শরীরে ভিতরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ‘‘জ্বর কোনও রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। তাই অল্প জ্বর হলে চিকিৎসকেরা ওষুধ দিতে চান না। খুব বেশি কষ্ট হলে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। কারণ জ্বর তৈরি হতে না দেওয়া হলে ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসগুলো মরার সম্ভাবনা কমে যায়,’’ বললেন ডা. তালুকদার।

জ্বর হলেও গা তেতেপুড়ে যায়, যা হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণ। তা হলে বোঝার উপায় কী সমস্যা কোনটা? ‘‘হাইপোথাল্যামাস গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তখন হয় হিটস্ট্রোক। আর হাইপোথ্যালামাস প্রবল সক্রিয় থেকে ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের সঙ্গে লড়ার জন্য তাপমাত্রা তৈরি করে,’’ দুটোর মধ্যে ফারাক বোঝালেন ডা. তালুকদার। টানা রোদে কাজ করলে, ঘরে বা কারখানায় গরমের মধ্যে একটানা কাজ করার পরে শরীর তেতেপুড়ে যাওয়ার মতো গরম হলে ধরে নিতে হবে সেটা হিটস্ট্রোকের আগাম সতর্কতা। ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসজনিত জ্বর হলে আগে শীত করবে, কাঁপুনিও দিতে পারে। প্রথমটার ক্ষেত্রে দেরি না করে তাঁকে ছায়ার মধ্যে, পাখার তলায় বা এসি রুমে বসিয়ে যতটা সম্ভব তাঁর পোশাক খুলিয়ে পর্যাপ্ত জল দিয়ে গোটা শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। রোগীর যদি জ্ঞান থাকে তা হলে জল, ওআরএস খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা কমবে। কিন্তু আচ্ছন্ন বা অজ্ঞান অবস্থায় থাকলে ঠোঁট ফাঁক করিয়ে জল বা ওআরএস খাওয়ানো একদমই উচিত নয়। জল ফুসফুস বা শ্বাসনালিতে ঢুকে গেলে বিপদ বাড়বে। তাই তাড়াতাড়ি নিকটবর্তী স্বাস্থকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া দরকার।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ঘরে-বাইরে একই নিয়ম

চিকিৎসকের পরামর্শ, সকাল দশটার পরে এবং বিকেল পাঁচটার আগে রাস্তায় না বেরোনোই ভাল। কিন্তু এই রুটিন মেনে চলা সম্ভব না হলে সর্তকতা মানতে হবে। বাইরে গেলে ছাতা নিন বা মাথায় কাপড় বেঁধে নেবেন, সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। মাস্ক বা সুতির ওড়না দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেওয়া ভাল। সঙ্গে জল রাখবেন। পরতে হবে হালকা সুতির পোশাক। সকাল ১০টার মধ্যে বাড়িতে রান্না বা কাপড় কাচার মতো পরিশ্রমের কাজ সারতে পারলে ভাল। ‘‘গরমে প্রচুর ঘাম হয়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যায়। ফল ডিহাইড্রেশন। তাই প্রচুর জল খেতে হবে। জলের পাশাপাশি মাঝেমাঝে ইলেকট্রলাইট ওয়াটার, নুন-চিনি-লেবুর জল পান করুন। গ্লুকোজ জলে কিছুটা নুন মিশিয়ে খান। বাড়িতে থাকলেও এই নিয়মটা মেনে চলুন। তবে ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, বা হার্টের সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁরা এই গরমে দিনে কতটা জল খাবেন, তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন,’’ বললেন ডা. তালুকদার। সময় মতো চিকিৎসা না পেলে হিটস্ট্রোকে মারা যেতে পারেন আক্রান্ত। তাই ভয় না পেয়ে সচেতন থাকুন।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কয়েকটি সচেতনতা

  • দিনে অন্তত দু’বার স্নান করতেই হবে। বিকেলে বাচ্চারা খেলে আসার পরে ভাল করে স্নান করিয়ে দেবেন।
  • বাইরে বেরনোর আগে জল খেয়ে বেরোন, রোদ থেকে এসে কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে জল খেতে হবে। প্রস্রাব ঠিক মতো হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা জল খাবেন না। এতে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথার সম্ভাবনা থাকে।
  • জ্বর এলে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খাবেন না। দু-একদিনে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অন্যান্য কোনও উপসর্গ থাকলে ডাক্তারকে বলুন।
  • বাইরে থেকে এসেই এসি ঘরে না ঢুকে একটু বাইরে জিরিয়ে নিন। এসি অফিসে ঢোকার সময়েও আগে ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিন।

গরমে হালকা খাবার খান। মশলাদার খাবারের পরিবর্তে পাতে থাকুক তেতো, আমডাল, মাছের ঝোল, লাউ, টক দই, মরসুমি ফল ইত্যাদি। তবে বাজারের কাটা ফল, লেবু জল নয়। ডাবের জল, বাড়িতে তৈরি ফলের রস, লস্যি, আখের রস, ছাতুর শরবত খান। সুগার কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে, সঙ্গে রাখুন লজেন্স বা মিষ্টি। প্যাকেজড ফুড, রেডি টু ইট খাবার এড়িয়ে চলুন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Heat Stroke Summer Care Summer Care Tips Health care

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy