Advertisement
০৮ মে ২০২৪

Suicidal Thoughts: সম্পর্কের টানাপড়েনের চাপে বাঁচতে ইচ্ছা করে না! লোককে কী করে বলব? আলোচনায় অনুত্তমা

বাঁচতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু সে কথা কি লোককে বলা যায়? এমন চিন্তা নিয়েই আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা

কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২২ ২১:০২
Share: Save:

শহরের বুকে ঘটে চলেছে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা! সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, অল্প বয়সি তরুণীরা কখনও পারিবারিক অশান্তির চাপে, কখনও আবার কর্মজীবনে ব্যর্থ হয়ে কঠিন পথ বেছে নিচ্ছেন। কখনও আবার সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেই নিজেদের শেষ করে ফেলছেন।

কয়েক ঘণ্টা আগের ফেসবুকের পোস্ট দেখেও বোঝার উপায় নেই যে, মানুযটি নিজেকে শেষ করার কথা ভাবছেন। বোঝা যায়নি কারণ, তিনিও হয়তো চাননি আর পাঁচ জন ব্যাপারটি আগে থেকে বুঝে যান। হয়তো মনে হয়েছিল, যদি বলেন তিনি আর বাঁচতে চান না, তা হলে লেকে কী বলবে! সকলেই কি তাঁকে স্বার্থপর ভাববেন? দুর্বল ভাববেন? ভাববেন তিনি হেরে গেলেন?

কী নিয়ে বেঁচে আছেন, তা-ই তো অনেক সময়ে বলা হয়ে ওঠে না। বাঁচতে যে ইচ্ছা করছে না, তা কী করে বলবেন?

এই নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ বারের বিষয় ছিল ‘বাঁচতে ইচ্ছা করে না!’

আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলা কঠিন হয়। যাঁরা চলে যান, কেন গেলেন, সেই উত্তরও তাঁদের সঙ্গে চলে যায়। আমাদের কাছে পড়ে থাকে কেবল কিছু অনুমান। আত্মহত্যা মানে কি দীর্ঘ দিন ধরে জীবনের প্রতি অনীহা, না কি এক মুহূর্তের বিষাদ? এক মুহূর্তের তীব্র তাগিদ, যার হাতে আমরা সমর্পণ করি নিজেদের, জীবনটা শেষ করে দিতে চাই? প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও বহু মানুষের কাছ থেকে ই-মেলে প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানিয়েছেন, বেশ কিছু বছর আগে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সন্তান আছে। বছর তিনেক আগে এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। সম্পর্কে তিনি নিজের সবটা উজাড় করে দিয়েছেন। তবে এখন তাঁর সঙ্গী বেঁকে বসেছেন। তিনি আর এই সম্পর্কের বাঁধনে থাকতে চান না। মহিলা লিখেছেন, ‘যদি বাঁচতে হয় ওর সঙ্গেই বাঁচব! পথ দেখাও অনুত্তমা।’

মনোবিদ অনুত্তমা বলছেন, ‘‘সম্পর্কের এই জটিলতা, সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন এবং তাঁর দরুণ জীবনের হাল ছেড়ে দেওয়ার যে মানসিকতা, এ কিন্তু আমাদের পরিপার্শ্বে অহরহ দেখছি। আমরা অনেক সময়ে নিজের মধ্যেও এই বোধ টের পাই। টের পাই, কারণ এক জনকেই গোটা পৃথিবী বানিয়ে ফেলেছি আমরা। তিনি যদি আমার পৃথিবীতে না থাকেন, তখন মনে হয় এই পৃথিবীতে আমি আর কেন থাকব? তবে এই মানসিকতাতেই বদল আনতে হবে। আপনি যেমন সম্পর্কে থাকতে চাইছেন, অন্য জন তো আর এমনটা চাইছেন না। এটাই কিন্তু বাস্তব। যাঁর সঙ্গে আমরা ভালবাসার সম্পর্কে একাত্মবোধ করি, বিচ্ছেদের সময়েও যে একাত্মবোধ করব, এমটা না-ও হতে পারে। জোর করে সম্পর্ককে টেনে নিয়ে চললে শুধুই তিক্ততা বাড়বে।’’

মনোবল বাড়ানোর পথও বলে দেন অনুত্তমা। মনোবিদ বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন তো সে মানুষটা যদি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে সম্পর্কে ফিরেও আসে, সেই সম্পর্ক কি আদৌ পুরনো প্রেমের ছন্দে ফিরতে পারবে? এমন সম্পর্কের কী লাভ বলুন তো? আমরা অনেক সময়ে যেটাকে এক মাত্র ভাল থাকার রাস্তা ভেবে ফেলি, তার চারপাশে আরও অনেকগুলি রাস্তা আছে, তা ভুলেই যাই। জীবনের না পাওয়াগুলিকে এতটাই গুরুত্ব দিয়ে ফেলি যে, পাওয়াগুলির প্রতি আমাদের মন কোথাও যেন একটা উদাসীন হয়ে ওঠে। সঙ্গীর কাছে বার বার সম্পর্কের ফিরে আসার অনুরোধ না হয় আর না-ই করলেন! মৃত্যু চিন্তা এলে সেই চিন্তাকে মাথার উপর থেকে বয়ে যেতে দিন। জীবনের ভাল দিকগুলির প্রতি আকৃষ্ট হোন। কে বলতে পারে, আপনার সামনে আবার নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ রয়েছে। এখনই জীবনের হাল ছাড়বেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE