Advertisement
E-Paper

বিরল অস্ত্রোপচারে আরোগ্য বৃদ্ধের

আস্তে আস্তে দুটো চোখ ছোট ও সরু হয়ে যাচ্ছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো সকাল থেকে সন্ধ্যা হরেক রকমের ‘ড্রপ’ দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া— কিছুই বাকি রাখেননি বাঁকুড়ার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব তুলসীচরণ দাস। কোনও পথ্যে ফল মিলছে না দেখে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। শেষমেষ তাঁকে পথ দেখালেন মুর্শিদাবাদ মে়ডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩৭
অস্ত্রোপচারের পরে তুলসীচরণ।

অস্ত্রোপচারের পরে তুলসীচরণ।

আস্তে আস্তে দুটো চোখ ছোট ও সরু হয়ে যাচ্ছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো সকাল থেকে সন্ধ্যা হরেক রকমের ‘ড্রপ’ দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া— কিছুই বাকি রাখেননি বাঁকুড়ার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব তুলসীচরণ দাস। কোনও পথ্যে ফল মিলছে না দেখে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। শেষমেষ তাঁকে পথ দেখালেন মুর্শিদাবাদ মে়ডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

কী হয়েছিল?

চিকিৎসকেরা জানান, পরীক্ষা করে দেখা যায় সমস্যা আদপে চোখের নয়। বৃদ্ধ ‘ফ্রন্টাল সাইনাস পায়োসিল’ রোগে ভুগছিলেন। তখনই দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের পরে তিনি এখন সুস্থ। চলে গিয়েছেন বাড়িতেও।

সফল অস্ত্রোপচারের কারিগর মুর্শিদাবাদ মে়ডিক্যাল কলেজের ‘ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক’ সার্জারি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক গৌতম বিশ্বাস। তিনি জানান, ঠান্ডা লেগে দীর্ঘ দিন ধরে সর্দি জমলে কপালে পুঁজ তৈরি হতে পারে। ফ্রন্টাল সাইনাসের ঠিক পিছনে থাকে মস্তিষ্ক। যা পাতলা একটা হাড়ের প্লেট দিয়ে সাইনাস থেকে মস্তিষ্ককে আলাদা করে রাখে। জমে থাকা পুঁজের থলির চাপে ওই হাড় ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, চোখের উপরে যে হাড় থাকে, সেটিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে চোখের থলির উপরে চাপ পড়ছিল। তার জেরেই দুটো চোখ ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছিল।’’

সময়ে অস্ত্রোপচার না হলে ওই সংক্রমণ সরাসরি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে রোগী মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হতে পারতেন বলে জানান চিকিৎসকেরা। রোগীর যা বয়স, তাতে মস্তিষ্কের সংক্রমণ হলে অস্ত্রোপচারের কোনও সুযোগ থাকত না বলেও ওই চিকিৎসক জানান।

অস্ত্রোপচার কী ভাবে হল?

চিকিৎসকেরা জানান, অপারেশন টেবিলে রোগীকে অচৈতন্য করে মাথার খুলি সামনে থেকে খোলা হয়। প্রথমে পুঁজ চেঁছে পরিস্কার করায় সেখানে গর্ত তৈরি হয়। সেই গর্ত পেট থেকে চর্বি নিয়ে পূরণ করা হয়। তেমনি কানের পিছন থেকে পর্দা নিয়ে মস্তিষ্ককে পৃথক রাখার জন্য প্লেট তৈরি করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ওই অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি হিসেবে আগে থেকেই হাসপাতালে ‘কার্টিলেজ ব্যাঙ্ক’ তৈরি করা হয়। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আগে থেকেই কার্টিলেজ ব্যাঙ্ক তৈরি করার ফলে ওই ধরনের অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হয়। তবে অস্ত্রোপচারের সময়ে কার্টিলেজ দিয়ে প্লেট তৈরি করতে ওই রোগীর নাক, কানের উপরেও অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, গৌতমবাবু এবং তাঁর সহকারি হিসেবে চিকিৎসক শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য ওই অস্ত্রোপচার করেন। গৌতমবাবু মানছেন, ‘‘গোটা অস্ত্রোপচারের সঙ্গে মস্তিস্ক সরাসরি যুক্ত থাকায় ছোট্ট ভুলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত।’’ এক্ষেত্রে অ্যানাসথেটিস্ট-এর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক তপোব্রত মিত্র দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘এই অস্ত্রোপচার ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাছে দৃষ্টান্ত।’’ একই সঙ্গে তাঁর মত, অনাবশ্যক রেফার বন্ধ হলে এমন জটিল অস্ত্রোপচারে আরও বেশি সময় দিতে পারবেন চিকিৎসকেরা।

rare surgery rare operation murshidabad medical college aged man elderly man
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy