—প্রতীকী চিত্র।
অবসর নেওয়ার পরে বেশির ভাগ সময়ে বাড়িতেই কাটাতেন। বাড়ির ছোটখাটো কাজও দিব্যি সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন গড়িয়ার বছর পঁয়ষট্টির সুজিতকুমার রায়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান স্ট্রোক হয়েছে। দিন দুয়েকের চিকিৎসার পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন সুজিতবাবু। এর পরেই শুরু হয় রিহ্যাব (স্ট্রোকের কারণে হওয়া শারীরিক অসাড়তা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি সারিয়ে তোলা)। একটি পূর্ণাঙ্গ রিহ্যাব কেন্দ্রে চলে তাঁর জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসার পর্ব। মাস দেড়েকেই কাটে তাঁর হাঁটাচলা ও কথা বলার সমস্যা।
পাঁশকুড়ার আঙুরবালা সাহা অবশ্য স্ট্রোকের পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। হাসপাতালে কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি বা়ড়ি চলে যান। হাঁটাচলা এবং কথা বলার সমস্যা হওয়ায় কয়েক মাস পরে রিহ্যাবিলিটেশন শুরু হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, রিহ্যাব পর্ব অনেক দেরিতে শুরু হওয়ায় তাঁর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আশা ক্ষীণ।
আরও পড়ুন: স্ট্রোক প্রতিরোধে মাষ্টারস্ট্রোক
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্ট্রোকের পরে রিহ্যাব শুরু করতে হবে ‘গোল্ডেন পিরিয়ড’-এর মধ্যে। হৃদ্রোগের পরে যেমন প্রথম চার ঘণ্টাকে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সেটা চল্লিশ দিন। তার মধ্যে রিহ্যাব শুরু হলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, স্ট্রোকের পরে মস্তিষ্কের মৃত কোষের কাজগুলির দায়িত্ব নেয় ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জেগে ওঠা সব কোষ। তাই মস্তিষ্কের ক্রিয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন কোষগুলিকে তাদের কাজ সম্পর্কে দ্রুত প্রশিক্ষিত করা জরুরি। সেই প্রশিক্ষণের জন্য ওষুধের পাশাপাশি বেশ কিছু থেরাপি দরকার।
পরিসংখ্যান বলছে, ফি বছর ভারতে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের স্ট্রোক হয়। যার মাত্র ২০ শতাংশ স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। এর কারণ পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং সচেতনতার অভাব। ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক মৌলিমাধব ঘটক বলেন, ‘‘বাড়িতে ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্যে অনেকে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু রিহ্যাবের পর্ব হওয়া উচিত কোনও কেন্দ্রে ভর্তি রেখে। কারণ স্ট্রোকের পরে যে ধরনের থেরাপি প্রয়োজন, তার সবটা বাড়িতে হওয়া সম্ভব নয়। হাসপাতালের প্রশিক্ষিত কর্মী ও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণেই এই রিহ্যাব পর্ব হলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে।’’
আরও পড়ুন: জেনে নেওয়া যাক ১০ কারণ যা স্ট্রোক ডেকে আনতে পারে
চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘স্ট্রোকের ক্ষেত্রে চিকিৎসার দ্বিতীয় পর্ব রিহ্যাবিলিটেশন, এই ধারণা ভ্রান্ত। মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রিহ্যাব।’’ তবে রিহ্যাবে কতটা সাফল্য মিলবে, তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশ, কত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার উপরেও।
তবে স্ট্রোকের পরে রিহ্যাবের পাশাপাশি এই রোগকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালানো সমান জরুরি বলে মত চিকিৎসক দীপেশ মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা স্ট্রোক প্রতিরোধের মূল অস্ত্র। নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে স্ট্রোক এড়ানো যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy