বিয়ে করেছেন। কোল আলো করে সন্তানও এসেছে। স্ত্রী, কন্যা, পোষ্য—সব মিলিয়ে সুখের সংসার। তবু মনোকষ্টে রয়েছেন বলিউড অভিনেতা বরুণ ধাওয়ান।
২০২১ সালে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা নাতাশা দালালকে বিয়ে করেছেন অভিনেতা। ২০২৪ সালে তাঁদের মেয়ে লারার জন্ম হয়। এমন সময় যখন বাবা হওয়ার আনন্দে মশগুল থাকার কথা, তখন আক্ষেপ করছেন বরুণ। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কাজ শেষে বাড়ি ফিরলেও, পরিবারকে সময় দিতে না পারার অপরাধবোধ তাঁকে কুরে খায়। স্ত্রী নাতাশা একলা হাতেই সন্তানকে বড় করছেন। বাবা হিসেবে যা করণীয়, সেটা সময়ের অভাবে করতে না পারায় মনোকষ্টে ভোগেন।
সংসার, পেশাগত জীবন সামলাতে গিয়ে সন্তানকে যথেষ্ট সময় না দিতে পারলে, এমন আক্ষেপ হয় মায়েদের। মহিলাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক, কারণ সন্তান মায়ের কোলে-পিঠে বড় হবে এমন ধারণাই প্রচলিত। কিন্তু বাবাদের অপরাধবোধ হয়? কেন হয়?
মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপের কথায়, আমাদের সমাজে সন্তান পালনে মায়ের ভূমিকাই বড় করে দেখা হয়। বাবারা রোজগার করলেও সন্তানের দায়দায়িত্ব সামলাবেন, এমন ভাবনাটা খুব একটা পরিচিত নয়। অন্তত কয়েক বছর পিছিয়ে গেলেও এমন ছবি চট করে মিলবে না। তবে সময়, ভাবনার বদলে ধীরে ধীরে পুরুষদের মধ্যেও চিন্তাভাবনা পাল্টাচ্ছে। তা থেকেই এমন মনে হওয়া।
মনোবিদ অঞ্জলি গুরসহানে বলছেন, ‘‘সামাজিক প্রত্যাশা, ব্যক্তিগত ভাবনা এ ক্ষেত্রে কাজ করে। সমাজের প্রচলিত ধারণাই হল বাবাকে সন্তান এবং স্ত্রীর জন্য রোজগার করতে হবে। অর্থোপার্জনের জন্য অনেক সময় বাড়তি সময় দিতে হয়। বাবারাও সন্তানের সঙ্গে মানসিকভাবে একাত্ম হতে চান। কিন্তু সেই সময় দিতে না পারলে পেশাগত জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।’’
আরও পড়ুন:
কোথায় বদলাচ্ছে ভাবনা?
আগে যৌথ পরিবারে সন্তানেরা বাবা-মা ছাড়াও বাড়ির বড়দের, ভাইবোনেদের সঙ্গ পেত। যৌথ পরিবার এখন ভীষণ ছোট। স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের গণ্ডিতেই তা সীমিত। মায়েরা কর্মরতা। ফলে সন্তানকে বাবা এবং মা দু’জনেরই সময় দেওয়ার প্রয়োজন বাড়ছে। মোহিত বলছেন, অনেক পুরুষই এখন মনে করেন সন্তানের দায়িত্ব স্ত্রীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া দরকার। এই ভাবনা এসেছে প্রয়োজনীয়তা থেকে, মানসিক বদল থেকে। সেক্ষেত্রে সন্তানকে সময় দিতে না পারলে বাবার মনেও অপরাধবোধ হতে পারে।
কী ভাবে সন্তানকে সময় দেবেন বাবারা?
১. পেশাগত জীবন এবং পারিবারিক জীবনের কাজকর্ম সামলাতে একটি রুটিন করে নিতে পারেন। যাতে পরিবার, সন্তানের জন্য কিছুটা সময় রাখতে হবে। মোহিত বলছেন, সময় স্বল্প হলেও তা আনন্দপূর্ণ হওয়া দরকার। সারা দিনে কিছুটা সময় থাকবে সন্তানের জন্যই। তখন মোবাইল বা অফিসের কাজ বা সংসারের কথা নয় পুরো মনোযোগ দিতে হবে তার প্রতি। গল্প, আড্ডা, পড়াশোনায় বাবা-সন্তানের যাপন অপরোধবোধ কমাতে পারে।
২. সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়ার প্রয়োজন। সন্তানের পালনের দায়িত্ব কিছুটা ভাগ করে নিলেও শিশু দু’জনের সঙ্গে পাবে।
৩. মোহিত রণদীপের পরামর্শ, ছুটির দিনে পারিবারিক সময় রাখা খুব জরুরি। সেইদিন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেড়ানো, হেঁটে আসা, ছবি দেখা—একসঙ্গে যাপন খুব জরুরি।