সেপ্টেম্বরে মা হয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন। ন’মাসের মেয়ে দুয়াকে রেখে এ বার তাঁর পুরদস্তুর কাজে ফেরার সময়। এমনই এক সময়ে অভিনেত্রী দাবি করলেন, আগের মতো আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ নয়। তাঁর কাজের সময় ৮ ঘণ্টায় বেঁধে দিতে হবে। এক জন কর্মরত মা হিসাবে দীপিকার ওই দাবি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বলিউডে। অনেকেই বলেছেন, কর্মরত মায়ের সংখ্যা তো নেহাত কম নেই দেশে! দীপিকার দাবি কি নায্য? আবার এমনও কেউ কেউ জানতে চাইছেন, সব কর্মরত মায়েরাই কি এমন দাবি করতে পারেন? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কর্মরত মায়েদের পেশা এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বিধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। কারণ কেউ কেউ এ-ও ভাবছেন, দীপিকার দাবিতে যথার্থতা রয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে মা হওয়ার খবর দিয়েছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। পরে জানিয়েছিলেন, মেয়ের নাম রেখেছেন ‘দুয়া’। — ফাইল চিত্র।
এমনিতেই কর্মরত মায়েদের জীবন কঠিন। কোলের সন্তানের ঘুমন্ত মুখ দেখেই সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন অনেকে। এ যুগের মায়েদের ১০-১২ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রেই কাটে। তার পরে বাড়িতেই ফিরেও পাঁচটা কাজ গুছিয়ে, সংসার সামলে তবে সন্তানের পাশে বসার কিংবা তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করার বা তার সারা দিনের নানা রকমের গল্প-অভাব-অভিযোগ শোনার সুযোগ পান মায়েরা। সেই সুখমুহূর্তও স্থায়ী হয় না বেশি ক্ষণ। কারণ, তার পরেই আবার শুরু হয় পরের দিনের প্রস্তুতি। কর্মরত মায়েদের এই যে পেশা সামলেও সব দিক সামলানো জীবন, তা সহজ নয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অল্প বয়সি সন্তানের মায়েরা যদি ৮ ঘণ্টার কাজের সময়ের দাবি করেন, তবে তাতে দোষ নেই বলে মনে করছেন অনেকেই।

দীপিকার দাবিকে নায্য বলেছেন নেহা ধুপিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
নেহা ধুপিয়া যেমন দীপিকার সমর্থনে একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন, যাঁদের সন্তানেরা এখনও ছোট এবং তাঁদের বাড়তি যত্ন নিতে হয়, কর্মক্ষেত্রে সেই সব মায়েদের সঙ্গে কিছুটা বাড়তি সহযোগিতা করা প্রয়োজন। অথচ কার্যক্ষেত্রে এই মায়েরা যখনই কিছু বলতে যান, তাঁদের কথা শোনানো হয়, তাঁদের অনুরোধকে অবহেলা করা হয়। একজন কর্মরত মা হিসাবে আমি দীপিকার দাবিকে সমর্থন করি। তিনি যা চেয়েছেন, তা অন্যায্য নয়।’’

পুত্রের সঙ্গে সইফ আলি খান। ছবি: সংগৃহীত।
দীপিকার পক্ষ নিয়েছেন বলিউডের বাবারাও। সইফ আলি খান নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘‘বাড়ি ফিরে যখন দেখি, আমার ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে, আমার খুব খারাপ লাগে। তখন মনে হয়, তা হলে কিসের সাফল্য! নিজেকে সফল বলতে পারতাম তখনই, যদি কর্মক্ষেত্রে বলতে পারতাম, অনেক দেরি হয়েছে আমাকে এ বার বাড়ি ফিরতে হবে। ছেলেরা অপেক্ষা করছে, ওদের সঙ্গে অন্তত আধ ঘণ্টা কাটাতে হবে আমাকে।’’ দীপিকার দাবির সমর্থনেই সইফ বলেছেন, ‘‘কাজ গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু পরিবারও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। একসঙ্গে খেতে বসা, একসঙ্গে রান্না করা, এগুলোও জরুরি। কারণ, এই সবই শেষ পর্যন্ত জীবনটাকে জুড়ে রাখবে।

কাজল এবং অজয় দেবগন। ছবি: সংগৃহীত।
অজয় দেবগন এবং কাজল দু’জনেই বলিউডে কাজ করে দুই সন্তানকে বড় করেছেন। অজয় বলছেন, ‘‘মায়ের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি আট ঘণ্টা কাজ করাটা মুখের কথা নয়। এখন অনেক মাকেই দেখি ৮-৯ ঘণ্টা কাজ করে বাড়ি ফিরছেন। আমার মনে হয় না, যাঁরা যোগ্য পরিচালক, তাঁদেরও এতে আপত্তি হওয়ার কথা।’’

পরিচালক মণিরত্নম। ছবি: সংগৃহীত।
আট ঘণ্টা কাজের দাবি নিয়ে আপত্তির জেরে পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গার ছবি ‘স্পিরিট’ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন দীপিকা। তা নিয়ে বঙ্গাও সমাজমাধ্যমে নানা কথা বলেছেন। বিতর্কের শুরু সেখান থেকেই। অজয় সম্ভবত সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তবে শুধু অজয় নয়, এক ফিল্ম পরিচালকও দীপিকার দাবিকে সমর্থন করেছেন। তিনি মণিরত্নম। দক্ষিণের এবং বলিউডের বহু হিট ছবির পরিচালক বলছেন, ‘‘এক জন সদ্য হওয়া মা হিসাবে তিনি তাঁর এবং সন্তানের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে যা যা দাবি করেছেন, তা বিবেচনাযোগ্য। মহিলারা যে এ ভাবে নিজেদের প্রয়োজনের কথা বলতে পারছেন, এটাও খুব ভাল লক্ষণ।’’