গমরঙা চেহারায় টকটকে লাল কাঁধখোলা গাউন পরে বসেছিলেন তিনি। টানটান গড়ন, হালকা প্রসাধানেও উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। কে বলবে চল্লিশ ছুঁয়েছেন তিনি! কাছে যেতেই হাতজোড় করে নমস্কার জানালেন ‘জব উই মেট’-এর রূপ ঢিলোঁ।
ইমতিয়াজ আলির ছবি ‘জব উই মেট’-এ নায়িকা গীত তথা করিনা কপূরের বোনের চরিত্রের নাম ছিল রূপ ঢিলোঁ। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌম্য টন্ডন। হিন্দি টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ সৌম্য তাঁর নতুন ছবি ‘রেডিয়ো ঘৈঁট’-এর প্রচারে কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আড্ডায় বসল আনন্দবাজার ডট কম। কথায় কথায় জানা গেল, এ শহরের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ রয়েছে। তবে সে কথায় পরে আসা যাবে। সৌম্য তাঁর সদ্য চল্লিশ পার করা জীবন নিয়েও বললেন অনেক কিছু।
কলকাতার সঙ্গে সৌম্যর নাড়ির যোগ আছে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সৌম্য এক জন মা। ছ’বছরের পুত্র আছে তাঁর। ইদানীং বলিউডের মায়েরা মাতৃত্ব পরবর্তী শরীরের গঠন বদলে যাওয়া নিয়ে সরব হচ্ছেন। মা হওয়ার পরে চেহারায় আসা পরিবর্তন নিয়ে অস্বস্তির কথাও বলছেন। রাধিকা আপ্তে প্রকাশ্যেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছিলেন। পরে নেহা ধুপিয়াকেও বলতে শোনা যায়, মাতৃত্বের পরে তাঁর ওজন বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে সমাজমাধ্যমে সমালোচিত হতে হয়েছিল। একই কারণে সমালোচিত হতে হয়েছিল ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, দীপিকা পাড়ুকোনকেও। সৌম্যর কাছে প্রশ্ন ছিল, তাঁর এ ধরনের কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি?
সৌম্য: ভাগ্য ভাল যে এমন পরিস্থিতিতে আমাকে পড়তে হয়নি। ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমার ওজন বাড়েনি খুব বেশি। তা ছাড়া, প্রসবের কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যায়াম শুরু করে দিয়েছিলাম। আসলে মায়েদের ফিট হওয়ার জন্য এই শরীরচর্চা করা জরুরি। তাতে ফিটনেস অনেক তাড়াতাড়ি ফেরে। আমি তো তিন মাসের মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে সেটে কাজ করতে চলে গিয়েছিলাম।
দীপিকা পাড়ুকোন বা ঐশ্বর্য রাই বচ্চনদের মতো সন্তানের জন্মের পরে ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হয়নি সৌম্যকে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রশ্ন: সদ্য চল্লিশ পূরণ করলেন। এই বয়সটা নিয়ে বহু মহিলাই আশঙ্কায় ভোগেন। আপনি কাজ-সংসার সামলে, মা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন, আবার নিজের যত্নও নিচ্ছেন। ইদানীং সবাই বলছে ফর্টি ইজ় দ্য নিউ থার্টি। চল্লিশে মেয়েরা নতুন করে জীবন শুরু করছেন! আপনিও কি তাই মনে করেন?
সৌম্য: একদম! আমি খুবই মনে করি, ফর্টি ইজ় দ্য নিউ থার্টি। চল্লিশে মেয়েদের শরীরে বদল আসে। এটা ঠিকই। আমাদের মা বা তার আগের প্রজন্মের মহিলারা চল্লিশ পেরোলে নিজেদের প্রৌঢ় বা মাঝবয়সি ভাবতে শুরু করতেন। বাড়ির সবাইকে খাইয়ে তবে নিজের খাবার খেতেন। বাড়ির সবার কাজ শেষ হয়ে সময় বাঁচলে নিজের যত্ন নিতেন। কিন্তু এখন ব্যাপারটা বদলেছে। এখন আর মায়েদের মতো ভাবলে চলবে না। নিজেকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজের যেটা ভাল লাগবে, সেটা আগে করতে হবে। চল্লিশে এখন নতুন করে জীবন শুরু করছেন মেয়েরা।
প্রশ্ন: কিন্তু দায়দায়িত্ব তো থাকেই!
‘আসলে মেয়েদের সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারে মেয়েরাই’, বলছেন সৌম্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সৌম্য: তা তো থাকেই। জীবনে ওঠাপড়াও থাকে। আমিই কি সব সামলাতে পারি! আমি তো নিখুঁত নই। কখনও পারিও না। এই তো মাস কয়েক আগে ছেলের জন্মদিন গেল। আমি বাড়ি ফিরতেই পারলাম না। পঞ্জাবে শুটিং করছিলাম। ওখান থেকে ওর জন্মদিনের যাবতীয় প্ল্যানও করেছি। কিন্তু ছুটি পেলাম না। কী করব! ছেলে আশা করেছিল মা আসবে। মা হিসাবে আমারও যেতে না পেরে খারাপ লেগেছে। কিন্তু কাজ এমনই যে, কষ্ট হলেও মেনে নিতে হল। এ রকম সমস্যা প্রত্যেকের জীবনেই আসে। বিষয় হল, আমরা কী ভাবে সেটা সামলাব।
প্রশ্ন: কী ভাবে সামলান?
সৌম্য: আমার পরিবার খুব সাপোর্টিভ। আর আমার কিছু ভাল বন্ধুও আছেন। এখন তো সবাই খুব ‘ব্রোমান্স’-এর কথা বলে। ছেলেরা ছেলেদের কত ভাল বন্ধু হতে পারে, ভ্রাতৃত্ববোধ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি কিন্তু ‘সিস্টারহুড’-এর জোর দেখেছি। চাইলে মেয়েরা মেয়েদের খুব ভাল বন্ধু হতে পারে। বরং আমি বলব মেয়েরাই মেয়েদের সেরা বন্ধু হতে পারে।
কলকাতায় নিজের ছবি ‘রেডিয়ো ঘৈঁট’-এর প্রচারে সৌম্য ট্যান্ডন। — নিজস্ব চিত্র।
প্রশ্ন: আপনি তো উল্টো কথা বলছেন!
সৌম্য: আসলে মেয়েদের সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারে মেয়েরাই। সে রকম কয়েক জন বন্ধু যদি পাশে থাকে, তবে যে কোনও কঠিন সময় পেরনো যায়। আমি তো বলব ব্রোমান্স নিয়ে যেমন কথা হয়, তেমনই সিস্টারহুড বা ভগিনীত্ব নিয়েও কথা বলা উচিত।
আড্ডা প্রায় শেষ। সৌম্যকে বলতে হল, আপনার কথা লেখা হবে তো বাংলায়। পড়বেন কী করে? একটু চমকে দিয়েই তিনি বললেন, ‘‘পড়ে নেব।’’ বাংলা জানেন নাকি! প্রতিবেদককে খানিক চমকে দিয়ে অভিনেত্রীর জবাব, ‘‘মা বাঙালি। নাম জ্যোৎস্না। কলকাতাতেই বড় হয়েছেন। আর্ট কলেজের ছাত্রী ছিলেন। মাকে বলব পড়ে দিতে।’’