ছ’ মাস বয়স থেকে যখন শিশু অল্প অল্প করে বুঝতে শেখে, তখনই সে লক্ষ করে, বাবা-মায়ের হাতে সারা ক্ষণ ফোন। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময়েও মা ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন আবার ঘুম পাড়ানোর সময়েও ফোনে গান শোনাচ্ছেন। এক বছরের শিশুর সামনেও ফোনে ভিডিয়ো চালিয়ে দিচ্ছেন বাবা-মায়েরা। শিশু কিছু না বুঝলেও হাঁঁ করে তাকিয়ে থাকছে মোবাইলের পর্দার দিকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাই স্বাভাবিক ভাবেই মোবাইলের প্রতি আসক্তি তৈরি হচ্ছে তাদের। অনেক শিশুই মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না, অনেকে আবার মোবাইলের কারণে পড়াশোনায় মন বসাতে পারে না। তারা মোবাইলের প্রতি এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে যে, তার কুপ্রভাব পড়ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর। অভিভাবকদের এমন সামান্য ভুল শিশুর জীবনে বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। কী ভাবে মোবাইলের প্রতি শিশুর আসক্তি কাটাবেন, রইল হদিস।
১) অভিভাবক সময় দেন না বলেই কিন্তু শিশুদের মোবাইলের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। তাদের আসক্তি কাটাতে হলে আপনাকে ওর জন্য সময় বার করতে হবে। শত কর্মব্যস্ততা থাকলেও সন্তানের জন্য দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখতেই হবে অভিভাবকদের। ওই সময়ে শিশুর মনের কথা শুনুন, ওর সঙ্গে খেলুন, গল্প করুন। প্রয়োজনে ওকে গল্প পড়েও শোনাতে পারেন। খুদের মন মোবাইল থেকে অন্য দিকে ঘোরাতে আপনাকেই উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে। ওকে নিয়ে বেড়াতে যান, ওকে খেলতে নিয়ে যান। ওকে বই কিনে দিতে পারেন। পড়াশোনা ছাড়া নাচ-গান-আঁকা-খেলাধুলো, যে দিকে ওর আগ্রহ আছে, তাতে বেশি করে উৎসাহ দিন।
২) আপনাকে সারা ক্ষণ মোবাইলের নেশায় বুঁদ থাকতে দেখলে খুদেও সেটাই করবে। নিজের স্বভাবে আগে পরিবর্তন আনুন। তাই আগে আপনার নিজের আসক্তি দূর করুন। শিশুর সামনে প্রয়োজন ছাড়া ফোন ব্যবহার না করাই ভাল। খুদেকে ঘুম পাড়ানোর সময় কিংবা দুধ খাওয়ানোর সময় ফোন হাতে রাখবেন না যেন। ওই সময়টা খুদের জন্যই বরাদ্দ রাখুন।
৩) দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে স্মার্টফোন ব্যবহার করার অনুমতি দিন। শিশু স্মার্টফোনে কী দেখছে, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। তাদের অবসর সময়টা অন্য কাজে ব্যস্ত রাখুন। শিশু যদি অনলাইনে ক্লাস করে, তা হলে ইন্টারনেটে আর কী করছে সে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া স্মার্টফোন থেকে আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চেষ্টা করুন, শিশুরা মোবাইল দেখলে যেন শিক্ষামূলক কিছু দেখে।
৪) খাচ্ছে না বলে শিশুর হাতে ফোন ধরিয়ে দেবেন না। ওর সঙ্গে সেই সময় গল্প করুন, কোনও গল্প পড়েও শোনাতে পারেন। চেষ্টা করুন আপনি যখন খাচ্ছেন, সেই সময়েই খুদেকে খাওয়ানোর। আপনাকে খেতে দেখলে সেও খাওয়ার প্রতি আগ্রহ পাবে।
৫) প্রযুক্তির সুবিধা-অসুবিধার দু’টি দিকই সন্তানকে বোঝান। প্রযুক্তির ভাল-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করুন সন্তানদের সঙ্গে। অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কী বিপদ হতে পারে, সে সব বিষয়েও সতর্ক করুন খুদেকে।