কিট ফুরিয়ে গিয়েছে। সুতরাং জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রক্ত পরীক্ষা বন্ধই হয়ে গেল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে এই মুহূর্তে জ্বর নিয়ে ভর্তি ৪০ জন! কিটের টানাটানিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও ত্রাহি রব।
কিন্তু মালদহ হাসপাতালে তো গত মাসেই একটা কিট পাঠানো হয়েছিল! তা হলে অভাব কেন?
হাসপাতাল-সূত্রের ব্যাখ্যা, ন্যূনতম ৯৬টি রক্তের নমুনা না-পেলে ওই কিট চালানো যায় না। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নমুনা না-আসায় সেটা বেশ কিছু দিন পড়ে ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ৫ অগস্ট তিরিশটি নমুনা নিয়েই কিট চালু করা হয়। আর তা ব্যবহার করা যাবে না।
এমতাবস্থায় কবে নতুন কিট আসবে, তার জন্য হা পিত্যেশ করে থাকা ছাড়া হাসপাতালের উপায় নেই। উল্লেখ্য, মালদহ মেডিক্যালে প্রথম দফায় যে ৩০ জন রোগীর রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল, তাঁদের দু’জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। এই পরিসংখ্যানের প্রেক্ষাপটে জেলায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের আরও রোগী থাকার প্রভূত সম্ভাবনা দেখছেন হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ। অথচ তাঁরা নিরুপায়। কারণ, কিট ছাড়া রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়, চিকিৎসাও শুরু করা যাবে না। সুরাহা কী?
মালদহ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ থেকে সুপার সকলে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এ দিন বলেন, “কলকাতা থেকে দ্রুত কিট আনা হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা হবে।”
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কিট ছাড়া কি জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ধরা পড়ে না? বিগত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে যখন রাজ্যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছিল, তখন কী ভাবে রোগ নির্ণয় হতো?
সেই সময়ে রোগটির আঁতুড় হয়ে উঠেছিল বর্ধমান জেলা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তদানীন্তন অধ্যক্ষ বিজয় মুখোপাধ্যায় এ দিন জানান, “তখন জীবাণু চিহ্নিত করার কোনও কিট ছিল না। আমরা অন্য ভাবে খুঁজতাম। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে জিনিসপত্র নিয়ে এসে আমরা বর্ধমান মেডিক্যালের হাসপাতালেই পরীক্ষা করতাম।”
এবং সেই পদ্ধতিতেই তাঁরা তখন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন বলে বিজয়বাবুর দাবি। সেই পদ্ধতি এখন কার্যকর হতে পারে না?
বিজয়বাবু নিশ্চিত নন। “যে সব সামগ্রী দিয়ে তখন আমরা কাজ করতাম, সেগুলো এখন পাওয়া যাবে কি না, জানি না।” বলছেন তিনি। রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তাদেরও বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই। এ ব্যাপারে বিজয়বাবুর সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করেননি।
অতএব, সমস্যা মোকাবিলার বিশেষ আশা জাগানো কোনও পথ এখনও নাগালের বাইরে। ইতিমধ্যে গত চব্বিশ ঘণ্টায় খিঁচুনি-জ্বরে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর, মৃতেরা হলেন প্রফুল্ল ঘোষ (৭৪) ও কইম্বা খড়িয়া (৪৫)। প্রফুল্লবাবুর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির বাবুপাড়ায়। কইম্বা মালবাজারের গুডহোপ চা বাগানের বাসিন্দা। তাঁর শরীরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ফিভার ক্লিনিকে এ দিন অন্তত ৩০ জন রোগী এসেছিলেন। আশঙ্কাজনক দু’জনকে ভর্তি করানো হয়েছে।
এ দিকে রোগ প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে ফের সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, রোগ পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী ঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। “মুখ্যমন্ত্রী দয়া করে মিথ্যে তথ্য দেওয়া বন্ধ করুন।” কটাক্ষ তাঁর। অধীরবাবু এ দিন জানান, দিল্লিতে তিনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের সঙ্গে দেখা করে পশ্চিমবঙ্গের এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত এলাকায় আসতে অনুরোধ করেছেন। দাবি জানিয়েছেন কলকাতায় একটি ‘ভাইরোলজি সেন্টার’ খোলারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy