আগে ঘরে ঘরে তিলের নাড়ু বা তিল তক্তি বানানোর চল ছিল। ছোট থেকে বয়স্ক— সকলেই বেশ তৃপ্তি করেই খেতেন। ঘরে বানানো তিলের মিষ্টিতে না বাড়ত সুগার, না কোলেস্টেরল। ফলে নিশ্চিন্তেই খাওয়া যেতে। কিন্তু ইদানীং নাড়ু, তক্তির মতো সাবেক খাবার পিছু হটেছে। সে জায়গা দখল করেছে, প্যাকেটজাত নানা খাবার। মিষ্টিও তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম রং দিয়ে। শীতের দিনে পুলি-পিঠে বা নানা রকম মিষ্টির খাওয়ার ইচ্ছা হবেই। সুগার থাকলে, সংযমও করতে হবে। কাজেই তিলই সেখানে হতে পারে সবচেয়ে ভাল বিকল্প। সাদা ও কালো তিল, দু’টিরই গুণাগুণ প্রায় এক।
তিলে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। ‘সেসামিন’ নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে যা শরীরের রোগ পরতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে তিল কার্যকর। তাই ডায়াবিটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন তিল। তিলের বীজে ফাইটোস্টেরল থাকায় কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। তিল দিয়ে মিষ্টি বানালে তা খেতেও সুস্বাদু হয় ও পুষ্টিও বজায় থাকে। রইল তিল দিয়ে মিষ্টি তৈরির তিন রকম পদ্ধতি।
তিলের নাড়ু
২০০ গ্রামের মতো সাদা তিল নিতে হবে। কড়াইতে শুকনো খোলায় আগে তিল ভেজে নিন। হালকা সোনালি রং ধরলে ও সুন্দর গন্ধ বার হলে নামিয়ে নিন। ভাজা তিল ঠান্ডা করে মিক্সিতে বেটে নিন। পুরো মিহি করবেন না। কড়াইতে ১ চামচ ঘি দিয়ে আখের বা খেজুরের গুড় দিন। যতটা তিল তার থেকে খানিকটা কম গুড় নিতে হবে। গুড় যখন আঠালো হয়ে আসবে, তখন তাতে তিল বাটা ও এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিতে হবে। ভাল করে নেড়ে নিয়ে মিশ্রণটি গরম থাকতে থাকতে গোল গোল করে নাড়ুর মতো গড়ে নিন।
তিলের মিষ্টি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ছবি: ফ্রিপিক।
আরও পড়ুন:
তিলের সুজি
আধ কাপ থেকে এক কাপের মতো সাদা তিল নিয়ে শুকনো খোলা নেড়ে নিন। সোনালি রং ধরলে নামিয়ে ফেলুন। প্যানে ১ চামচ ঘি গরম করে তাতে খোয়া ক্ষীর দিয়ে নাড়তে থাকুন। আঁচ কমিয়ে নেবেন, যাতে নীচেটা ধরে না যায়। এ বার তাতে খেজুর গুড় দিয়ে নাড়তে থাকুন। মিশ্রণটি যখন মণ্ড পাকিয়ে আসবে, তখন নামিয়ে ফেলুন। উপরে ড্রাই ফ্রুট ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
বাদাম ও তিলের পিন্নি
শীতের সময়ে খাওয়া হয়। শুকনো খোলা এক কাপের মতো সাদা তিল ভেজে নিন। হালকা করে আঁচ কমিয়ে ভাজতে হবে। এ বার এক কাপের মতো চিনাবাদাম বা কাঠবাদাম নিয়ে মিক্সিতে ভাল করে গুঁড়িয়ে নিন। তবে খুব মিহি করবেন না। কড়াইয়ে ২ চামচ ঘি দিয়ে আটা দিন। কম আঁচে নাড়তে থাকুন যত ক্ষণ না আটার কাঁচা গন্ধ চলে গিয়ে সুন্দর গন্ধ বার হয় এবং রঙ হালকা বাদামি হয়। অন্য একটি পাত্রে সামান্য জল দিয়ে গুড় জ্বাল দিন। গুড় গলে গিয়ে যখন আঠালো হবে তখন নামিয়ে নিন। এটি চিনি দিয়েও করা যায়, তবে যাঁরা চিনি খাবেন না, তাঁরা গুড় ব্যবহার করতে পারেন। ভাজা আটা, তিল, বাদাম গুঁড়ো, এলাচ গুঁড়ো এবং ঘি গুড়ের সিরার মধ্যে দিয়ে দিন। সব কিছু খুব ভাল ভাবে মিশিয়ে নিয়ে তাতে চাইলে নারকেল কোরা দিতে পারেন। মিশ্রণটি সামান্য ঠান্ডা হলে, হাতে ঘি মেখে অল্প অল্প করে নিয়ে লম্বাটে বা লাড্ডুর মতো আকারে গড়ে নিন।