বিশ্বে যত রকম বিরল ও জটিলতম ব্যাধি রয়েছে, তার মধ্যে একটি অ্যামিয়োট্রপিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস বা সংক্ষেপে এএলএস। বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মাত্র ২২ বছর বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে হকিং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিস্ময়কর অবদান রেখেছেন ঠিকই, তবে পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল তাঁর শরীর। এই রোগেই আক্রান্ত হলেন হলিউড অভিনেতা এরিক ডেন। ইতিমধ্যেই তাঁর শরীরের ডান দিক অসাড় হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিনেতা।
স্নায়ুর বিরল রোগ এএলএস। বিশ্বে খুব কম সংখ্যক মানুষেরই হয় এই রোগ। অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেতা ডেভিড নিভেন মারা যান এই রোগে। ‘অ্যামিয়োট্রফিক’ শব্দের অর্থ পেশি সংক্রান্ত সমস্যা। এই রোগে শরীরের সমস্ত পেশি ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যায়। মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের পেশির ক্ষয় হতে থাকে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে পড়ে। ফলে শরীরের স্নায়ুগুলি আর সঙ্কেত বহন করতে পারে না। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নিষ্ক্রিয় হতে হতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হাঁটাচলার ক্ষমতা হারানো। শরীরের ভারসাম্যই টালমাটাল হয়ে যায়, ফলে দাঁড়াতে গেলেই পড়ে যাবেন রোগী। কোনও এক দিকের হাত বা পায়ের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা ও সঙ্গে পেশি ক্রমে শুকিয়ে যাওয়া, রোগের আরও ভয়াবহ লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। হাত দিয়ে কোনও কাজই আর করা যাবে না। কেবল পেশির অসাড়তা নয়, কথা বলতে, খাবার গিলতেও সমস্যা হতে পারে রোগীর। এএলএস আক্রান্তদের কণ্ঠনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রোগী কথা বলার ক্ষমতাও হারাতে পারেন।
আরও পড়ুন:
কাদের হয় এই রোগ?
৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের এই রোগ হতে পারে। পুরুষের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার নারীদের তুলনায় কিছুটা বেশি। প্রায় ৫-১০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি হয় বংশগত কারণে। তা ছাড়া ‘এসওডি১’ বা ‘সি৯ওআরএফ৭২’ জিনের রাসায়নিক বদলের (মিউটেশন) কারণে রোগটি হতে পারে।
এএলএস পরীক্ষার পরিসর সীমিত ও ব্যয়বহুল। রোগটির কারণ যেহেতু নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি, তাই রোগটির তেমন চিকিৎসাপদ্ধতিও নেই। চিকিৎসকেরা বলেন, ক্যানসারের চেয়েও ভয়াবহ এই রোগ। 'দ্য ল্যানসেট' মেডিক্যাল জার্নালের তথ্য বলছে, প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে একজন বা দু’জনের রোগটি হয়। রোগীর কেবল শরীর নয়, মনস্তাত্ত্বিক দিকটিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাঁর মস্তিষ্কের সক্ষমতা পুরো মাত্রায় থাকে, অথচ তিনি বুঝতে পারেন ধীরে ধীরে এগোচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। রোগটির চিকিৎসায় কিছু অনুমোদিত ওষুধ রয়েছে, তবে সেগুলির দাম আকাশছোঁয়া।