মগ্ন: খেলার মাঠে একসঙ্গে। তবু চোখ মোবাইলের দিকেই। লেকটাউনে। ছবি: শৌভিক দে।
হাতের মুঠোয় দুনিয়া ধরতে নিত্যসঙ্গী স্মার্ট ফোন। টাচ স্ক্রিনে অবিরাম আঙুলের স্পর্শ। চলছে মেসেজ করা, ভিডিও গেম খেলা, খবর পড়া বা ছবি তোলা।
আর প্রযুক্তির এই লাগামছাড়া ব্যবহারই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ডেকে আনছে বলে দাবি চিকিৎসকদের। অতিরিক্ত ‘টাচ’ ফোন ব্যবহারের জন্য কনুই, চোখ, ঘাড়ের নানা সমস্যায় ভুগছেন ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েরা। বিগত পাঁচ বছরে এই ভুক্তভোগীর সংখ্যা কম পক্ষে ২৫ শতাংশ বে়ড়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: শরীরচর্চা না করে নিজেদের যে ক্ষতিগুলো রোজ করে চলেছি আমরা
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাত ভাঁজ করে অতিরিক্ত সেলফি তুললে কনুইয়ের কাছে ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসকেরা একে ‘সেলফি ড্যামেজ’ বলছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাতের বুড়ো আঙুল কাজে লাগানো হয়। অত্যধিক ‘টাচ’ ফোন ব্যবহারের জেরে অনেকের বুড়ো আঙুলের স্নায়ুগুলো ঠিক মতো কাজ করছে না। এমনকি অনেকে বুড়ো আঙুলে কোনও সাড় পায়না। এনআরএস হাসপাতালের স্নায়ুশল্য বিভাগের চিকিৎসক এস কে সাহা বলেন, ‘‘অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের জেরে স্নায়ুর সমস্যাও হচ্ছে। ফোন থেকে এক ধরণের রশ্মি নির্গত হয় যা শুধু হাত নয়। সারা শরীরের স্নায়ুর পক্ষে ক্ষতিকর।’’
হাতের পাশাপাশি অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার চোখ এবং ঘাড়ের ক্ষতি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নীচু করে ভিডিও গেম খেলার বা সিনেমা দেখার জেরে ঘাড়ের যন্ত্রণায় ভুগছেন অনেকেই।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ সময় মোবাইলের উজ্বল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার জেরে চোখ থেকে জল পড়তে থাকে, মাথা ব্যথা হয়, চোখের চারপাশ ভারী হয়ে যায়। পাশাপাশি, চোখের পলক পড়া কমে যায়। কারণ, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার সময় নিয়ম মতো মিনিটে ১৫ বার পলক পড়ে না। এতে চোখের সামনের ঝাপসাভাব বাড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর জেরে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমতে পারে।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অর্ণব বিশ্বাসের পরামর্শ, যাঁরা অধিকাংশ সময়ে ফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের ফোনের উজ্বলতা কমিয়ে রাখা জরুরি। এসএমএস কিংবা বিভিন্ন মেসেজ অ্যাপের ‘ফন্ট সাইজ’ বা অক্ষরের মাপ বড় করে রাখা দরকার। পাশাপাশি তিনি ‘রুল ২০’ মেনে চলতে বলছেন। অর্ণববাবুর কথায়, ‘‘অনেককে কাজের জন্য দিনের অধিকাংশ সময় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ ফুট দূরের কোনও জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতে পারলে চোখের সমস্যা কমবে।’’
ক্রমশ বাড়তে থাকা এই সমস্যায় রাশ টানতে সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনও পথ নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে মোবাইল। মোবাইল ব্যবহারের তথ্য পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। আপাতত ভারতে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ৩০ কোটি। বিশেষজ্ঞ সংস্থা ফরেস্টারের দাবি, ২০২২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলবে ৫৫ কোটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy